মু.ওয়াছীঊদ্দিন,লক্ষীপুর প্রতিনিধিঃ- পর্যাপ্ত শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষ সংকট, বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ টিনসেট ঘর, ভাঙ্গা-চুড়া বেড়া, বৃষ্টি এলেই পাঠদান বন্ধ। এরপরও শহরের তুলনায় এবারের এসএসসিতে প্রায় শতভাগ ফলাফল করেছে লক্ষীপুরের রায়পুর উপজেলার মোল্ল্যারহাট এল কে এইচ উপক‚লীয় উচ্চ বিদ্যালয়।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টির ১০৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৯৩ জন শিক্ষার্থীই কৃতকার্য হয়েছে। সে তুলনায় বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই নাজুক। চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ে মেধা বিকাশের দারুন সম্ভবনা থাকা শর্তেও নানাবিদ সমস্যা ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষীপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সড়কের পাশেই মোল্ল্যার হাট এল কে এইচ উপক‚লীয় উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত। ১৯৯৩ সালে ১ একর ২০ শতাংশ জমিতে এ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৬১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮১জনই ছাত্রী বাকী ২৩২জন ছাত্র। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলানায় পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট। ১২জন শিক্ষকের স্থলে আছেন মাত্র ৬ জন। প্রতিদিনই পাঠদান করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। বিদ্যালয়ে ৮টি শ্রেনী কক্ষের মধ্যে ৫টিই ব্যবহারের অনুপযোগী। তাছাড়া শ্রেনিকক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের বাহিরে ক্লাস নিতে হয়। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ে পাঠদান হুমির মুখে রয়েছে।
বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের গেইট থেকে ভিতরে ডুকলেই খোলা বিস্তির্ণ মাঠে থই থই করছে জোয়ারের পানি। এতে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় বিঘ্ন ঘটে। উত্তর ও পশ্চিম পাশে দু’টি টিনসেট স্কুলঘর ও একটি সাইকোন সেন্টার রয়েছে। একটি স্কুলঘরের অবস্থা খুবই জরাজির্ণ ও ঝুকিপূর্ণ। চার পাশের বেড়াগুলো ভেঙে চৌচির। পাকা ফিলারগুলো ভেঙে রডের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। একটি শ্রেনী কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন একজন শিক্ষক। যা বাহির থেকে ভিতরের সম্পর্ণ দেখা যায়। তাও আবার বৃষ্টিতে পাঠদান সম্পন্ন বন্ধ রাখা হয়। অপরটি মাঠের পশ্চিম পার্শ্বে লম্বা টিনসেট ঘর। উপরে চাল থাকলেও স্কুলঘরটির নেই বেড়া। এতে পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীরা অমনযোগী হয়ে পড়ে।
তাছাড়া নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় সাইক্লোন সেন্টারটির ২য় তলায় এক কক্ষে শিক্ষকদের অফিস কক্ষ, একটিতে কম্পিউটার ল্যাব এবং তয় তলায় দু’টি কক্ষ ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে নবম ও দশম শ্রেনীর ক্লাস আশ্রায়ন কেন্দ্রটির বারান্দায় নেওয়া হয়।
দশম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী রায়হান ও কামরুল প্রতিবেদককে জানায়, পুরো দমেই বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা। শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারণে খোলা বরান্দায় তাদের ক্লাস করতে হচ্ছে। বৃষ্টি এলে ছি ছিতে তাদের বই খাতা বিজে যায়। তারা এ সমস্যা সমাধানের দাবী জানান।
নবম ও অষ্টমসহ বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা জানায়, একদিকে বিদ্যালয়ে বেড়া না থাকায় ক্লাসে মনোযোগী হওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে বিদ্যালয়ের কোন সীমানা প্রাচীর নেই। সামান্য বৃষ্টি কিংবা খালে জোরের পানিতে পুরো মাঠ ডুবে থাকে। মাঠে পানি থাকায় ঠিকমত খেলাধুলাও করতে পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। এতে বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ হারিয়ে পেলছে তারা।
শিক্ষার্থী রাফসানা জানায়, ছাত্রীদের জন্য বিদ্যালয়ে আলাদা কোন কমন রুমের ব্যবস্থা নেই। যে কোন জরুরি মুহুর্তে আশপাশের বাড়ি গিয়ে নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে হয়। বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য একটি কমনরুমের দাবী জানায় এই শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা ও রায়পুর রুস্তম আলী কলেজের প্রভাষক আবদুল করিম প্রতিবেদককে বলেন, এ এলাকার মানুষগুলো কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী। তাদের সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে পাঠায় জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে। কিন্তু বিদ্যালয়ের বেহাল দশা দেখলে তারা আগ্রহ হারিয়ে পেলে। তার পরেও এ বিদ্যালয়ে এসএসসিতে শতভাগ পাশ। দ্রæত বিদ্যালয়টিতে একটি ভবন নির্মাণ করে সমস্যা সমাধানের দাবী জানান তিনি।
এলাকাবাসীরা জানায়, বিদ্যালয়টি উপক‚লীয় অঞ্চলে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম। এ অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার মৎস ও জেলে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা কর্মে থাকে।
সহকারী শিক্ষক সাইদুল হক প্রতিবেদককে বলেন, খুটিগুলো জরাজির্ণ, বিদ্যালয়ে বেড়া না থাকায় শ্রেণী কক্ষে গরু-ছাগল ঢুকে ব্যাঞ্চ-টেবিল নষ্ট করে পেলে। এতে চরম সমস্যা পড়তে হয়। তাছাড়া স্কুলঘর ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করয়েছে। তাই দ্রæত একটি ভবন নির্মান করে এ সঙ্কট নিরসনের দাবী জানান তিনি।
এল কে এইচ উপক‚লীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান জানান, বিভিন্ন প্রতিক‚লতা থাকা শর্তেও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। জরাজির্ণ বিদ্যালয় ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকবার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজের কাজ কোনটাই হচ্ছে না।
জেলা শিক্ষা অফিসার সরিৎ কুমার চাকমা প্রতিবেদককে বলেন, জরাজীর্ণ বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হচ্ছে। বরাদ্ধ না থাকায় এসব নিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। নতুন বরাদ্ধ এলে বিদ্যালয়ের কাজ করা হবে। তাছাড়া দীর্ঘ দুই বছর নিয়োগ না থাকায় শিক্ষক সংকট রয়েছেন। খুব শীঘ্রই এ সংকট নিরসন করা হবে বলেও জানান তিনি।