নিউজ ডেস্ক:
লৌকিকতা মানুষের
চরম শত্রু। এটি ব্যক্তিত্ব ও সম্ভ্রমকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ তায়ালা রিয়াকারীকে ভালোবাসেন না। লোক দেখানো ধার্মিকতা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বেখবর, যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে
(রিয়া করে)’
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। মানুষ যখন আল্লাহর ভালোবাসা নিয়ে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে উপাসনা করে, তখন এটি ইবাদত হয়। আর যখন ধার্মিক সেজে সাধারণ মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করা হয়, তখন তা হবে রিয়া-লৌকিকতা। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য নয়, বরং মানবতুষ্টিই উদ্দেশ্য। যারা ইবাদতে লৌকিকতা অবলম্বন করে মূলত তারা ছদ্মবেশী বুজুর্গ। তারা থাকবে মুনাফেকের কাতারে। এ ধরনের লোকেরা আল্লাহর নৈকট্যশীল সিদ্দিকদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। রিয়া-লৌকিকতা হলো মানবাত্মার এক সর্বনাশ ব্যাধি এবং শয়তানের মস্ত বড় জাল।
১. কোরআনে লৌকিকতার নিন্দা : লৌকিকতা মানুষের চরম শত্রু। এটি ব্যক্তিত্ব ও সম্ভ্রমকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ তায়ালা রিয়াকারীকে ভালোবাসেন না। লোক দেখানো ধার্মিকতা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বেখবর, যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে (রিয়া করে)।’ (সূরা মাউন : ৪-৬)।
২. ঈমান দ্বারা রিয়া করা : ঈমান দ্বারা রিয়া করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। যে ব্যক্তি ঈমান দ্বারা রিয়া করবে, সে প্রকাশ্যে কাফের হয়ে যাবে। এসব লোক অনন্তকাল জাহান্নামের আজাবে থাকবে। কারণ এ রিয়াকারী মুখে কালেমা পড়ে বটে; কিন্তু অন্তরে তাকে মিথ্যা মনে করে। অর্থাৎ সে নিজেকে ঈমানদার হিসেবে দাবি করে বেড়ায়; অথচ তার অন্তর ঈমান শূন্য। এরা হলো মোমিন বনাম মোনাফেক। এ রিয়াকার মোনাফেক সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অথচ তারা যখন তোমাদের সঙ্গে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। কিন্তু তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের ওপর রোষবশত আঙুল কামড়াতে থাকে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১৯)।
আরও বলেন, ‘শুধু লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। তারা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয়, সেদিকেও নয়।’ (সূরা নিসা : ১৪২, ১৪৩)।
৩. রিয়া শিরকের সমতুল্য : বান্দার সব ধরনের ইবাদতের উপাস্য হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ। ইবাদতে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা বৈধ। কোনো ব্যক্তি বা রাজা-বাদশাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য হতে পারবে না। যদি ইবাদতে লোক দেখানো বা লৌকিকতা (রিয়া) উদ্দেশ্য হয়, তখন এটি শিরকের শামিল হয়ে যায়। এ ইবাদত আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না এবং এর প্রতিদানও দেবেন না।
এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ল, সে শিরক করল। যে দেখানোর নিয়তে রোজা রাখল, সে শিরক করল। আর যে দেখানোর জন্য সদকা-খয়রাত করল, সেও শিরক করল।’ (মেশকাত : ৫০৯৯)।
আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করে, আল্লাহ তায়ালা তার দোষ-ত্রুটিকে লোক সমাজে প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কোনো আমল করে, আল্লাহ তায়ালা তার সঙ্গে লোক দেখানোর ব্যবহার করবেন। অর্থাৎ আমলের প্রকৃত সাওয়াব থেকে সে বঞ্চিত থাকবে।’ (মুসলিম : ৭৬৬৭)।
৪. রিয়াকারীর অন্তর বাঘের মতো হিংস্র : রিয়াকারী বাহ্যিকভাবে কোমলতা ও সরলতা দেখালেও অভ্যন্তরীণভাবে হিংস্র স্বভাবের হয়ে থাকে। তার মুখ ও অন্তর সম্পূর্ণ অমিল হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শেষ জমানায় এমন কিছসংখ্যক লোকের প্রকাশ ঘটবে, যারা দ্বীনের দ্বারা দুনিয়া হাসিল করবে (অর্থাৎ দ্বীনদারি প্রকাশ করে মানুষকে ধোঁকায় ফেলবে)। মানুষের দৃষ্টিতে বিনয়ভাব প্রকাশের জন্য মেষ-দুম্বার চামড়া পরিধান করবে, তাদের মুখের ভাষা হবে চিনি অপেক্ষা মিষ্টি। পক্ষান্তরে তাদের অন্তর হবে বাঘের মতো হিংস্র।
আল্লাহ তায়ালা এ জাতীয় লোকদের সম্পর্কে বলেন, ‘তারা কি আমাকে ধোঁকা দিতে চায়, নাকি আমার ওপর ধৃষ্টতা পোষণ করছে? জেনে রাখ! আমি আমার শপথ করে বলছি, আমি তাদের ওপর তাদের মধ্য থেকে এমন বিপদ প্রেরণ করব, যাতে তাদের বিচক্ষণ বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাও দিশেহারা হয়ে পড়বে।’ (তিরমিজি : ২৫৮৪)।
৫. রিয়াকারীর শাস্তি : যে ব্যক্তি ইবাদতে রিয়া-লৌকিকতা অবলম্বন করবে, তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। সে মানুষের কাছে অসম্মানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে বেঁচে থাকবে। সবার কাছে হবে ঘৃণিত ও অভিশপ্ত। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের কাছে নিজের আমলের কথা শোনায়, আল্লাহ তায়ালা তার বদ উদ্দেশ্যে কৃত আমলকে মানুষের কানে পৌঁছে দেবেন এবং তাকে হেয় ও অপমানিত করবেন।’ (মেশকাত : ৫০৮৮)।
রিয়াকারীর পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন মানুষকে একত্রিত করবেন, যেদিন সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সেদিন কোনো ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোনো আমল করতে অন্য কাউকেও অংশীদার বানিয়েছে, সে যেন আল্লাহ ছাড়া ওই ব্যক্তির কাছ থেকেই এর প্রতিদান অন্বেষণ করে। কেননা আল্লাহ তায়ালা অংশীদারির অংশীবাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।’ (মেশকাত : ৫০৮৭)।