নিউজ ডেস্ক:
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ এটি একটি অকাট্য সত্য যে, বহু জিন ও মানুষ এমন আছে যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি।
তাদের অন্তর (হৃদয়) রয়েছে; কিন্তু তা দিয়ে তার উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ রয়েছে, তা দ্বারা তারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তা দ্বারা তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭৯)
আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে অন্তর, চোখ, কান ও জিহ্বা (জবান) ইত্যাদি এ জন্যই দান করেছেন; যেন তারা এ সব অঙ্গের যথাযথ ব্যবহারে নিজেরা উপকৃত হয়ে মহান প্রভুকে চিনতে পারে। তাঁর নির্দশনসমূহ লক্ষ্য করে এবং সত্যের বাণী মন দিয়ে শুনে মেনে বাস্তব জীবনে মেনে নিতে পারে।
কিন্তু যারা অন্তর, জবান, চোখ ও কানের যথাযথ ব্যবহার না করে আল্লাহর নাফরমানি করে তারা বিবেক-বুদ্ধিহীন চতুষ্পদ জন্তুর চেয়ে অধম। কুরআনের আয়াতই তার জলন্ত প্রমাণ। রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। রহমত বরকত মাগফেরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাস। কুরআন নাজিলের মাসে কুরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন সাজাতে উল্লেখিত অঙ্গগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
যারা আল্লাহ তাআলার সতর্কবার্তাকে আমলে নিয়ে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের চিন্থাভাবনা করে তারাই নাজাত লাভ করবে। আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা লাভ করতে হলে বান্দাকে অবশ্যই তাঁর রবের হুকুম-আহকাম পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। আল্লাহর হুকুম মেনে নেয়া ছাড়া তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। রমজানের প্রস্তুতি কল্পে কুরআনের সতর্কবার্তা অনুযায়ী যে অঙ্গগুলোর হেফাজত করা জরুরি। তার বর্ণনা রোজা পালনকারীসহ সব মুসলিম উম্মাহর জন্য তুলে ধরা হলো-
অন্তরের হেফাজত
অন্তর বা হৃদয় মহান আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার পরিপূর্ণ ক্ষমতা শুধুমাত্র জিন এবং মানুষকেই দান করেছেন। রমজান মাসে পবিত্র কুরআনুল কারিমের শিক্ষা গ্রহণ এবং তা থেকে পরিপূর্ণ উপকারিতা লাভে অন্তরকে পাপমুক্ত রাখা জরুরি।
কারণ যে অন্তরে পাপ বা অন্ধকার থাকবে না; সে অন্তরে আল্লাহ তাআলার কুরআনের নূর প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি অন্তরে মন্দ ধারণা করাকে বড় গোনাহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ এবং গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান কর না।’ (সুরা হুজুরাত : আয়াত ১২)
দুনিয়ার কুচিন্তা ও মন্দ ধারণাসহ যাবতীয় খারাবি থেকে অন্তরকে হেফাজতের অন্যতম সময় হলো পবিত্র রমজান মাস। রমজানের রহমত বরকত মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভে রোজার আগেই অন্তরকে কুলুষমুক্ত করা জরুরি।
চোখের হেফাজত
চোখ আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম। চোখের সাহায্যে মানুষ অনেক ইবাদত-বন্দেগি করে থাকে। ভালো চিন্তায় চোখের উত্তম দৃষ্টিদানও ইবাদত। হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে বিশেষ ভাবে চোখের হক আদায় করার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন। চোখের জিনা থেকে মুক্ত থাকার বিষয়ে তাগিদ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে নারী-পুরুষকে সম্বোধন করে বলেন, ‘মুমিন পুরুষদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। এবং ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। (সুরা নুর : আয়াত ৩০ ও ৩১)
তাইতো রমাজনের আগে চোখের হেফাজত অনেক জরুরি। আল্লাহর দেয়া সেরা নেয়ামত চোখ দিয়ে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত কোনো ধরনের অবৈধ জিনিস না দেখে চোখের হেফাজত করে রমজানের জন্য ক্ষমা লাভে চোখকে অশ্রসিক্ত করতে প্রস্তুতি নেয়াও জরুরি।
জিহ্বার হেফাজত
জিহ্বা আল্লাহ তাআলার অন্যতম সেরা নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা জিহ্বাকে এত নরম করে তৈরি করেছেন; যাতে মানুষ এ জিহ্বা দ্বারা সুন্দর, নরম ও কোমল কথা বলতে পারে। যে কথায় থাকবে মাওলার অসংখ্য প্রশংসা ও গুণগান।
রমজানের আগেই জবানের হেফাজত করা জরুরি। কারণ মানুষ নরম জিহ্বা দিয়ে কুঠার আঘাতের চেয়েও মারাত্মক কাজ করে থাকে। অন্য মানুষকে কথার দ্বারা আঘাত করে থাকে। জবান দিয়েই ঝগড়া-বিবাদ, গালাগালি, পরনিন্দা এবং গিবতের মতো অমার্জনীয় অপরাধ করে থাকে।
অথচ রমজানের প্রতি তাসবিহ ও নফল ইবাদত অন্যান্য সময়ের ৭০টি নফল ইবাদতের চেয়ে বেশি সাওয়াব লাভ করা যায়। আল্লাহ চাইলে এর চেয়ে বেশি সাওয়াব দান করতে পারেন। মানুষ সবচেয়ে বেশি গোনাহ ও হারাম করে থাকে এ জবান বা জিহ্বা দ্বারা। তাই রমজানের আগেই মন্দ ও খারাপ কথা পরিহার করতে জবানের হেফাজত জরুরি।
কানের হেফাজত
মানুষের শ্রবণ শক্তি আল্লাহ তাআলার অপার নেয়ামত। রমজানের আগেই মানুষকে অশ্লীল ও বেহায়াপনা বিষয়াবলী শুনো থেকে বিরত থাকা জরুরি।
কোনো মানুষ যদি কুরআন তেলাওয়াত করে আর অন্য কোনো ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শুনে তবে উভয়েই সমান সাওয়াব লাভ করবে। কেউ যদি কোনো অন্যায় বা বেহায়াপনামূলক কথাবার্তা বা বিনোদনে লিপ্ত হয়; তা থেকে নিজের কান তথা তা শ্রবণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে।
তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।’ আলোচ্য আয়াতে কাউকে জবানের দ্বারা আক্রমণ এবং তা শুনে প্রতি আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
রমজানের আগেই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা এবং শোনার পাশাপাশি অশ্লীল গান এবং বাদ্যবাজনা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী জাহান্নামের আগুণ থেকে নাজাত লাভে রমজান মাসের রোজা পালন এবং ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।