নিউজ ডেস্ক:
মহান আল্লাহপাকের কাছে আপনি দিনের পর দিন দোয়া করছেন, প্রার্থনা করছেন, করেই যাচ্ছেন। এখন কি হতাশা হয়ে পড়েছেন? কেন আপনার দোয়ার কোন ফল দেখতে পাচ্ছে না। আপনি আল্লাহর কাছে হয়তো কোন কিছু চাচ্ছেন কিংবা ক্ষতিকারক কোন বিষয় থেকে উদ্ধার হতে চাচ্ছেন। কিন্তু কোন বিষয়েই কিছু হচ্ছে না। আপনি কোন ধারণাও করতে পারছেন না কেন এমন হচ্ছে?
আপনি তো খারাপ নন। আমাদের সমাজে তো আপনার থেকেও খারাপ মানুষ আছে। তবুও কেন আল্লাহ আপনার দোয়ার ফলাফল দিচ্ছেন না। আপনি কি খারাপ কোন কাজের সাথে জাড়িত? না কি আল্লাহর দোয়া কবুলের কোন ফর্মুলা কিংবা কোন কোর্ড আছে? যেটা ছাড়া আল্লাহ দোয়া কবুল করেন না?
প্রথমে আমি আপনাকে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দেব। আপনি দোয়ায় যা প্রার্থনা করেন সেটা আল্লাহ ফেরেশতাদের সাথে আলোচনা করেন, এবং আপনি যা করেন সেই সকল বিষয়েও তিনি জানেন। তিনি কুরআনে এমন বলেছেন, আমার বান্দা যেখান থেকেই আমাকে আহ্বান করুক না কেন আমি সেটা শুনতে পাই। শোন, আমি তোমাদের অতি নিকটে। আমি বান্দাদের ডাকে অবশ্যই সাড়া দেই। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি এবং আমার রাসুলের প্রতি ঈমান রাখ। আয়াতের শেষাংশে আল্লাহপাক বলেছেন, তোমরা আমার ডাকে সাড়া দাও এবং আমার প্রতি বিশ্বাস রাখ। আপনি কি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিচ্ছেন? এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি পূর্ণ ঈমান রাখছেন? হয়তো আপনি বিষয়গুলো করছেন কিংবা করছেন না। যাই হোক আসুন আমরা জেনে নিই কি কি কারণে আমরা অনেক সময় দোয়ার ফলাফল দেখতে পাই না।
১. আপনার করণীয়-পালনীয় কাজগুলো করছেন না। হতে পারে এটাই সব থেকে বড় সমস্যা। আপনি চান আল্লাহ আপনকে এটা দেন, সেটা দেন। কিন্তু আল্লাহ আপনার উপর যে ফরজ বিধান আরোপ করেছেন তার কিছুই আপনি আদায় করছেন না। আপনি হয়তো নিয়মিন নামাজ পড়ছেন না। আপনি হয়তো রমজনের রোজা রাখছেন না। আপনার উপর হয়তো যাকাত ফরজ হয়েছে কিন্তু আপনি যাকাত আদায় করছেন না। আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত যে আল্লাহ আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন আমরা ভুল পথে চলার কারণে। অপরাধের শাস্তি যে জাহান্নাম বিষয়টা এমন নাও হতে পারে। শাস্তিটা আমরা আমাদের জীবনেও পেয়ে যেতে পারি। যারা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ পালন করবেন না তারা অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হবে। আর এই শাস্তিটা এমনও হতে পারে যে, আপনি আল্লাহর কাছে যা চাচ্ছেন আল্লাহ আপনাকে সেই কাঙ্খিত বস্তুটি দিচ্ছেন না। সুতরাং আল্লাহ আপনাকে যে আদেশ করেছেন আপনি সেগুলো পালন করুন তাহলে হয়তো আপনি আপনার দোয়ার প্রতিফলও দেখতে পাবেন।
২. আপনি অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। আপনি অল্পতেই অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। ধৈর্য ধারণ করতে পারছেন না। যখন আপনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে চাচ্ছেন কিন্তু আল্লাহ আপনার কাঙ্খিত বস্তুটি দিচ্ছেন না তখনই আপনি ধৈর্য হারা হয়ে পড়ছেন। এমনকি আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া-প্রার্থনা করা ছেড়ে দিচ্ছেন। এবং মনে মনে এ বিশ্বাস স্থির হওয়া শুরু করেন যে, দোয়ায় আপনি আল্লাহর কাছে যেই বিষয়টি চাচ্ছেন, আল্লাহ আপনাকে সেই বিষয়টি দেবেন না। একটি হাদিসে এসেছে, একজন আল্লাহর বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সে ব্যাকুল হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। বলা হলো হে আল্লাহর রসূল, ব্যাকুল হয়ে পড়ার মানে কি? বারবার আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আমার দোআ কবুল হবে না এমন ভেবে আল্লাহর ওপর নাখোশ এবং হতাশ হয়ে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদত করা বন্ধ করে না দেয়া। আপনার জ্ঞান তো সীমিত। কিন্তু আল্লাহর জ্ঞান অসীম। আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার কাঙ্খিত বিষয়টি পাওয়ার এখনই মোক্ষম সময় কিন্তু আল্লাহ ভালো জানেন কোন সময় আপনি সেই বিষয়টি পেলে আপনার জন্য ভালো হবে। হতে পারে তিনি সেই সময় আপনার কাঙ্খিত বস্তুটি দেননি। কেননা সেই সময় যদি আপনি কাঙ্খিত বস্তুটি পেতেন তাহলে হয়তো আপনি আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতেন। হয়তো আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষা করতে চেয়েছেন এবং আপনি পরীক্ষায় ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই তিনি আপনাকে আরো ভালো কোন পুরস্কার দেবেন। যাই হোক, এই বিষয়ে মহান আল্লাহই ভালো জানেন। সুতরাং আপনি ধৈর্য হারা হয়ে পড়বেন না। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন। অন্যথায় আপনি সব কিছুই হারাবেন।
৩. আপনি হয়তো অকল্যাণকর কিছু প্রার্থনা করছেন। এটা কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ নয়। কিন্তু কেন মানুষ আল্লাহর কাছে খারাপ কিছু প্রার্থনা করে? হতে পারে এটা আপনিও করেছেন। হতে পারে আপনি আল্লাহর কাছে এমন কিছু প্রার্থনা করছেন যেটা আপনাকে পাপের দিকে ধাবিত করবে। হতে পারে আপনি আল্লাহর কাছে একজন গার্লফ্রেন্ড চাচ্ছেন। আপনি হয়তো দোয়ায় সুদ খাওয়ার পথ সহজ হওয়ার বিষয়ে প্রার্থনা করেছেন। কেননা এটা আপনার বাড়ি ও গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। কিংবা আপনি হয়তো এমন কোন চাকরির জন্য প্রার্থনা করেছেন যেখানে চাকরি করলে আপনাকে শুকুরের মাংস বিক্রি করতে হবে অথবা মদ বিক্রি করতে হবে। হতে পারে আপনি এই সকল বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করেছেন। আর যদি আপনি এই সকল বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করে থাকেন তাহলে এখন তো বুঝতে পারছেন কেন আল্লাহ আপনার দোয়ার ফলাফল দেন নি।
৪. আপনি হয়তো ভাবছেনও না যে আপনি বিষয়টি পাবেন। আপনি বিশ্বাসই করতে পারছে না যে আল্লাহ আপনাকে এটা দেবে। আর এই জন্যই হয়তো আপনি তার কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করেন নি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে লাভ কি তিনি দিতে পারেন যদি এই বিশ্বাসটুক তার উপর না থাকে। সম্ভব আর অসম্ভবের বিষয়টি আপনার কাছে। আপনি চিন্তা করুন এটা হতে পারে এই চিন্তা কখনো করবেন না যে, এটা হতে পারে না। আল্লাহ চাইলে যে কোন কিছুই ঘটাতে পারে। আপনি কি জানেন না যে আল্লাহ হচ্ছে, আল আজিজ: মহা পরাক্রমশালী। আস সামাদ: যার উপর সকল কিছু নির্ভর করে। আস কাদীর: মহা ক্ষমতাশীল। দোদুল্যমান হয়ে দোয়া করবেন না। পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করবেন যে আল্লাহ এটা আপনাকে অবশ্যই দেবেন। বিশেষ করে যদি আপনি ভালো ও উপকারী কিছুর জন্য দোয়া করেন। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তোমরা দোয়ায় বলো না- হে আল্লাহ এটা আপনি আমাকে দেন যদি আপনি চান অথবা এমনও বলো না, হে আল্লাহ আপনি যদি চান তাহলে আমার উপর দয়া করুন বরং আপনার অনুরোধ দৃঢ় হওয়া উচিত। তাহলেই হয়তো আল্লাহ আপনকে দেবেন।
৫. আপনি কি অনেক বেশি খারাপের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন? একটি হাদিসে এসেছে- হে মানুষ, আল্লাহ ভালো এবং তিনি সকল বিষয়ের যেটা ভালো সেটাই গ্রহণ করেন। আল্লাহ নবীদেরকে বলার মাধ্যমে মুমিনদেরকে আদেশ দিয়েছেন। হে রসূল! পাক-পবিত্র জিনিস খাও এবং সৎ কাজ করো। তোমারা যা কিছুই করো না কেন আমি তা ভালোভাবেই জানি (সূরা মুমিন : ৫১) কুরআনের অন্য জায়গাতে এসেছে, হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর ইবাদাতকারী হয়ে থাকো, তাহলে যে সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস আমি তোমাদের দিয়েছি সেগুলো নিশ্চিন্তে খাও এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (সূরা বাকারা : ১৭২) নবীজি বলেন, তারপর একজন ব্যক্তি এলো যিনি ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করে থাকেন, তার চুল অপরিচ্ছন্ন ও ধুলো দিয়ে আচ্ছাদিত।
তিনি আকাশের দিকে হাত তুলে প্রার্থনা করেন,হে প্রভু, হে প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য বেআইনী, তার পানীয় বেআইনী, এবং তার পোশাক বেআইনী। তাহলে কিভাবে তার অনুরোধ গ্রহণ করা যাবে? (মুসলিম) এই হাদিসে দোয়া বিষয়ক এমন কিছু বিষয় আছে আপনি চাইলে এগুলোকে গ্রহণ করতে পারেন। কয়েকটি বিষয় আমরা তুলে ধরছি। আল্লাহ ভালো এবং তিনি সব বিষয়ের ভালোকেই পছন্দ করেন। সুতরাং আপনি যদি ভালো হয়ে থাকেন তাহলে তিনিও আপনাকে ভালো কিছু দেবেন।আপনার খাওয়া এবং খাওয়া জিনিসগুলো আপনার আধ্যাত্মিকতা এবং আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠতা উপর প্রভাব ফেলবে। আমরা আমাদের নবীর উদাহরণকে সামনে এনে দেখতে পারি। ইনশাআল্লাহ, আমি আশা রাখি এটি আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আমাদের জন্য একটি অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে।