নিউজ ডেস্ক:
শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থবান মুসলমানের গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বোত্তম ফরজ ইবাদত হলো হজ। বান্দার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শারীরিক ও আর্থিক ত্যাগের নির্দেশও এটি। আল্লাহ তাআরা হজ এ ঘোষণা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে।
আল্লাহ তাআলার সে নির্দেশটি কুরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
(হে নবি আপনি) মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দিয়ে দিন। লোকেরা পায়ে হেঁটে, বিভিন্ন যানবাহনে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকে দলে দলে আপনার দিকে (হজের জন্য) ছুটে আসবে। (সুরা হজ : আয়াত ২৭)
আল্লাহর নির্দেশ পালন করে যারা বাইতুল্লাহ, মিনা, মুজদালিফা এবং আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয় একং দুনিয়ার স্বার্থ ত্যাগ করে হজ পালন করে-
পবিত্র নগরী মক্কায় অনুষ্ঠিত হজের এই বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে মহান রবের ডাকে সাড়া দেয়া ব্যতিত একজন হজ পালনকারীর অন্তরে দুনিয়ার কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্য থাকে না। উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একটাই আর তা হলো আল্লাহ নির্দেশ পালন, তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি, মাহাত্ম্য ও একক কর্তৃত্বের ঘোষণা করা।
আল্লাহ তাআলা তাঁর ঘরে উপস্থিত হওয়া সম্পর্কে কুরআনে বলেন-
‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে মকামে ইবরাহিমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর নির্দেশ; যে লোকের এ পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য রয়েছে। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ৯৬-৯৭)
যেহেতু হজ মুসলিম উম্মাহর মহাসম্মিলন। তাই সারা দুনিয়ার মুসলমানরা এখানে সমবেত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর তাআলার একত্ববাদের ঘোষণা দেয়। বিশ্বব্যাপী আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের বাণী পৌঁছিয়ে দেয়।
হজ পালনের মাধ্যমে একজন মুসলমান তাওহিদের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়। স্বকাতর কণ্ঠে ঘোষণা করে-
‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক্; লা শারিকা লাক।’
‘হে আল্লাহ! আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, হে আল্লাহ আমি হাজির, নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়া’মত, কর্তৃত্ব ও রাজত্ব সব তোমারই জন্য, তোমার কোনো শরিক নেই।’
বাইতুল্লাহর এ ‘লাব্বাইক’ ঘোষণা পৃথিবীর সব জায়গায় সব কাজে এ রকম ঘোষণার দৃপ্ত শপথ নেয়ার পাশাপাশি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর শরিক না করার সম্মিলিতভাবে শপথ গ্রহণ করার শামিল।
এ তালবিয়া পাঠের মাঝেই রয়েছে শিরকমুক্ত থাকার ও শিরকমুক্ত ইবাদত করার জন্য নিজেদের তৈরির সঙ্গে সঙ্গে সব প্রশংসা, মালিকানা, কর্তৃত্ব, রাজত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করার ঘোষণা।
হজ পরবর্তী জীবনেও তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা এবং জীবনের বাকি সময়গুলো সাধ্যমত সর্বোচ্চ ত্যাগ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে জীবন-যাপনের দ্বীপ্ত শপথ হলো এ হজ।
আর এ কারণেই যারা হজ পালনের মাধ্যমে উল্লেখিত বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, তাদের জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন-
‘যিনি হজ করলেন, ঝগড়া-ঝাটি, অন্যায়, ফাসেকি ও নাফরমানির কোনো কাজ করেননি, তিনি মায়ের পেট থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশুর ন্যায় হয়ে যাবেন।’
পরিশেষে…
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর ওই সব হজ পালনকারীকে জান্নাত দান করবেন যারা হজ পালনের পর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিষ্পাপ শিশুর মতো হয়ে যাবেন। আর তাঁদের ব্যাপারেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর হজ পালনকারী সব হাজিকে নিষ্পাপ থাকার এবং পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।