নিউজ ডেস্ক:
একটি সভ্য সমাজের সুস্থ মানুষরা পরিবারের মৃত মানুষের দেহের সঙ্গে জীবনযাপন করছেন। এটাই নাকি তাঁদের সামাজিক রীতি! অবাক করা এই রীতি ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসির টোরাজা উপজাতির। মৃত্যু, জীবনের শেষ এখানেই। এটাই চরম সত্য। কিন্তু এই সত্যটিকেই মানেন না ইন্দিনেশিয়ার এই গ্রামের মানুষ। তাঁদের কথায়, ‘ওঁরা মারা যেতে পারে। কিন্তু তবুও ওঁরা আমাদের জীবনেরই অঙ্গ।
প্রিয়জন মারা গেলে তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া, অথবা কবর দেওয়া হয়। এটাই সাধারণ সমাজের রীতি। কিন্তু সুলাওয়েসির মানুষরা একটু আলাদারকমভাবে চিন্তা করেন। তাঁদের দাবি একজন মারা গেলেন মানেই তিনি আমাদের থেকে চিরদিনের মতো চলে গেলেন তা নয়। তাঁরা মনে করেন মৃতরা যতদিন তাঁর কাছের মানুষদের কাছে থাকবেন ততই ভালো, কারণ এই জগতের মায়া কাটাতে যেমন তাঁদের সময় লাগে। তেমনই এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে ইহজগতের মানুষেরও। পুড়িয়ে বা কবর দিয়ে দিলে সেই সময়টা পাওয়া যায় না।
এই সময়কে মানিয়ে নেওয়ার আজব রীতি চলে মাসের পর মাস ধরে। কিছুক্ষেত্রে এই প্রথা চলে বছরের পর বছর ধরে। মৃতদের দেহ একটি আলাদা ঘরে এনে রেখে দেন তাঁরা। তারপর নিয়ম করে প্রত্যেক দিন দু বেলা খেতে দেওয়া হয় মৃতদেহকে। টোরাজাদের দাবি, শুধু দেহ রেখে দিলেই হয় না। মৃতরা যখন তাঁদের সঙ্গে আছেন তখন ওদের সাধারণ দিনের মতোই খেতে পড়তে দিতে হবে। তাঁরা মনে করেন এই ব্যবস্থা না করলে আত্মারা রুষ্ট হতে পারেন। পরিবারের ক্ষতিও হতে পারে।
কিন্তু এর শেষ কোথায়? জানা গেছে, যতদিন না মৃতের পরিবার তাঁর শ্রাদ্ধ শান্তির জন্য বিশাল জমকালো অনুষ্ঠান করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পয়সা জোগার করতে পারছে ততদিন চলবে এই মৃতের সঙ্গে প্রতিদিনের এই অদ্ভুত জীবনযাপন।
যা করা হয় সেই বিশেষ দিনে:
সেদিন মহাজাঁকজমকের সঙ্গে কফিনে করে বিদায় দেওয়া হয় প্রিয় মানুষটিকে। বলি দেওয়া হয় প্রচুর মোষ। কারণ টোরাজাদের বিশ্বাস মোষ তাঁদের প্রিয় মানুষটিকে স্বর্গের পথে নিয়ে যাবে।
গল্পের এখানেই শেষ নয়। প্রত্যেক বছর মানেনে নামে এক অদ্ভুত উৎসব পালিত হয়। ওইদিন সমস্ত টোরাজাদের পরিবার তাঁদের পরিবারের মৃতদের দেহকে বের করে আনে। ইহ জগতের আলোয় তাঁদের ফের আনা হয়। তারপর কঙ্কাল সার দেহ সাজিয়ে গুজিয়ে ছবি তুলে ফের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কবরে। মৃতের ইহলোকের সঙ্গে দেখা আবার পরের বছরের উৎসবে। ১০০০-এরও বেশি বছর ধরে চলে আসা এই প্রথায় কোনও খামতি নেই। আছে বিশ্বাস, ভালোবাসা।
সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর সেভেন নিউজ