বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

যে ভাষা বলতে পারেন মাত্র ছয় জন !

নিউজ ডেস্ক:

অ্যানতিয়া। সমতল থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার উপরে গ্রিসের দক্ষিণ-পূর্বাংশের ওচি পাহাড়ের বুকে ছড়িয়ে থাকা ছোট একটি গ্রাম। গোলক ধাঁধার মতো আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে আধুনিক সভ্যতার সুবিধা বর্জিত এই গ্রামের দিকে যতোই এগোনো যায় ততই সবুজের সমারোহে চোখ জুড়িয়ে যায়। পাশাপাশি কানে ভেসে আসে বিচিত্র রকমের বাঁশির সুরের মতো শব্দ।

অস্পষ্ট হয়ে ভেসে আসা এই শব্দ প্রথম দিকে পর্যটকরা মনে করতো পাখির ডাক। কিন্তু যতই তা কানে স্পষ্ট হয় ততই পাখির ডাকের সাথে পার্থক্য ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে বোঝা যায় এটা পাখির ডাক নয়, মানুষের গলা দিয়ে বের হওয়া বিচিত্র সুরেলা আওয়াজ।

আগন্তুক পর্যটকের কাছে এটা বিচিত্র মনে হলেও অ্যানতিয়ার অধিবাসীদের কাছে এটাই যোগাযোগের ভাষা। গ্রীক ভাষার পাশাপাশি তারা এই সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে।  বিশেষ করে এক পাহাড় থেকে দূরবর্তী অন্য কোনো পাহাড়ে অবস্থানরত প্রতিবেশীকে বিপদ সংকেত পৌঁছে দেওয়া বা কোনো প্রয়োজনীয় ভাব আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম এটি। কারণ উন্মুক্ত উপত্যকায় মুখ দিয়ে উচ্চারিত এই সাংকেতিক ভাষা চার কিলোমিটার দূরে পৌঁছাতে সক্ষম।

অদ্ভুত এই ভাষার নাম ইস্ফায়রিয়া। কীভাবে এই ভাষার উদ্ভব তা নিয়ে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। গ্রীক ইস্ফিরিজো শব্দ থেকে ইস্ফায়রিয়া শব্দের উদ্ভব। ইস্ফিরিজো শব্দের অর্থ বাঁশি। অ্যানতিয়ার কেউ কেউ মনে করে আড়াই হাজার বছর আগে এক পার্সিয়ান সৈনিক এই পাহাড়ে এসে লুকিয়ে ছিল। তার মাধ্যমে এই ভাষার জন্ম। আবার অন্য একদল মনে করে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে শত্রুর আক্রমণ থেকে গ্রামবাসীকে সতর্ক করার জন্য এই সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করা হতো।

বর্তমান পৃথিবীতে বিলুপ্তপ্রায় ভাষার তালিকায় এক নাম্বারে রয়েছে ইস্ফায়রিয়া। কারণ গত দুই দশকে অ্যানতিয়ার জনসংখ্যা আড়াইশো থেকে কমে মাত্র সাইত্রিশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া প্রবীণদের মধ্যে যারা এই ভাষায় দক্ষ তাদের অধিকাংশের দাঁত পড়ে যাওয়ায় এখন আর তারা সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারে না। ফলে সব মিলিয়ে মাত্র ছয় জন মানুষ এই সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে। তাই বলা যায় এটিই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে কম লোকের ব্যবহার করা ভাষা।

তবে ইতিমধ্যে এই ভাষা রক্ষায় কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে হার্ভার্ড ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইস্ফায়রিয়ার সংকেতগুলো রেকর্ড করে রেখেছে। তাছাড়া ২০১৬ সালে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে নিউ ইয়র্ক আর্ট মিউজিয়ামে দেখানো হয়।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular