দোয়া মুমিনদের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। এমনকি দোয়ার ফলে ভাগ্যও ঘুরে যায়।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না। ’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২১৩৯। ) দোয়া সব ইবাদতের মূল। দোয়ার তাৎপর্য সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম ইবাদত হল দোয়া। ’( মুসতাদরাক আল হাকেম, হাদিস নম্বর ১৭৬০। ) অন্য হাদিসে এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে বেশি মর্যাদাময় আর কোনো আমল নেই। ’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ৩৩৭০। )
মানুষের কাছে কিছু চাইলে মানুষ বিরক্ত হয়। আর আল্লাহর কাছে না চাইলে আল্লাহ রাগ হন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ হন। ’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ৩২৯৫। ) যে দোয়া করতে অলসতা করে তার সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে হতভাগ্য মানুষ হল সে- যে দোয়া করতে অলসতা করে। (তাবারানি, হাদিস নম্বর ৬০। ) আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করার জন্য সবসময় প্রস্তুত।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল! যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দিন- আমি বান্দার খুব কাছেই আছি। সে যখনই আমার কাছে দোয়া করে, আমি তার দোয়া কবুল করি’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬। ) রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রভু খুবই লজ্জাশীল। বান্দা যখন দোয়ার জন্য হাত উঠায়, সে হাত খালি ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ লজ্জা পান। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৩৩৭০। )
দোয়া কবুলের অনেক শর্ত আছে। এখানে বিশেষ কিছু শর্ত তুলে ধরা হল। আল্লাহর উদ্দেশে একমাত্র তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য খালেস দিলে দোয়া করা। সুন্নাত তরিকা মেনে দোয়া করা। দোয়ায় অসৎ উদ্দেশ্য না থাকা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার আবেদন না করা। দোয়াকারীর খাবার ও পোশাক হালাল উপার্জনের হওয়া।
দোয়ার সুন্নাত তরিকা হল- আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূল (সা.)-এর ওপর দরূদ পড়ে দোয়া করা। বিনয় কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করা এবং দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নিজের প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না’ (সূরা আরাফ, আয়াত ৫৫। ) আশা ও ভয়ভীতি নিয়ে দোয়া করা।
এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তাঁকে ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে’ (সূরা আরাফ, আয়াত ৫৬। ) সম্ভব হলে অজু করে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা। নিজের গোনাহের কথা স্বীকার করে আল্লাহর নেয়ামতের স্বীকৃতি দেয়া। দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্তগুলো হল, আজান ও ইকামাতের মাঝের সময়, ফরজ সালাতের পর এবং শেষ রাতে, জুমার দিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত এবং পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় বলে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে। আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন যাদের দোয়া নিশ্চিত কবুল হয় বলে নবীজি (সা.) বলেছেন।
তারা হলে, বাবা-মা, নেক সন্তান, মুসাফির, মজলুম ব্যক্তি, ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোগী এবং হাজী। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ চায় যে বিপদের সময় তার দোয়া কবুল হোক, তাহলে সে যেন সুখের দিনগুলোতে বেশি বেশি দোয়া করে’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ৩৩৮২। ) করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে চোখ ভেজা মোনাজাতে নিজেকে সমর্পণ করুন। ইনশাল্লাহ! দোয়ার ফলে আল্লাহ পৃথিবীর ভাগ্যে সুদিন ফিরিয়ে দেবেন। হে আল্লাহ! পৃথিবীবাসীকে ধ্বংসাত্মক করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি দিন।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়