নিউজ ডেস্ক:
গরমের সময় বেশি হবে ঘাম। বাড়বে ঘামের গন্ধও। কিন্তু কী আর করা যাবে! লোক সমাজে যেতে গেল যে পার্ফিউম ছাড়া যে উপাই নেই। না হলে বন্ধু থেকে সহকর্মী, সবারই মজার পাত্র হতে হবে। আর এমনটা হোক, কে বা চায় বলুন। তাই তো ব্যাগ ভর্তি করে বাজার কাপানো সুগন্ধিতে আলমারি ভর্তি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আচ্ছা, সে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু আপনাদের কী জানা আছে ঘামের গন্ধ কেন হয়?
সাধরাণত আমাদের শরীরের যে যে অংশে ঘাম বেশি হয়, সেখানে বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। আর এই সব ব্যাকটেরিয়ার কারণেই গায়ে দুর্গন্ধ হতে থাকে। তবে বিষয়টা যে এখানেই থেমে যায়, এমন নয় কিন্তু। এক্ষেত্রে আমাদের ডায়েটও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডায়েটের সঙ্গে ঘামের গন্ধের সম্পর্ক:
বেশ কিছু খাবার শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু ঘটনা ঘটায় যা ঘামের দুর্গন্ধকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই তো এই সব খাবারগুলি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই আপনিও যদি ঘামের গন্ধের কারণে বেজায় চিন্তিত থাকেন, চাহলে এই প্রবন্ধিটি একবার পড়ে নিন। নিচে আলোচিত খাবারগুলির সঙ্গে গায়ের গন্ধের সরাসরি যোগ রয়েছে, তাই এই ধরনের খাবারগুলি এড়িয়ে চলাই ভাল।
১. রেড মিট:
সুস্বাদু মটন কারি খেতে তো ভাল লাগেই। কিন্তু তার পরে সেই মটন কারি শরীরে ঢুকে কত কিছু যে করে সে বিষয়ে কি কোনও জ্ঞান আছে? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে রেড মিট খাওয়ার পর তার বেশিরভাগ অংশই একেবারে হজম হতে পারে না। ফলে যে অংশটা হজম না হয়ে পরে থাকে, সেটি ঘামের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে। আর এমনটা যখন হতে থাকে তখন শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলি আরও অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে গায়ের দুর্গন্ধ আরও মারাত্মক আকার নেয়।
২. অ্যালকোহল:
দুলতে থাকা বরফের সঙ্গে ঠান্ডা অ্যালকোহল যখন আমাদের গলা দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে, তখনই তা অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়ে ত্বকের ছিদ্রগুলি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়াদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনি যদি ঘামের গন্ধের কারণে লজ্জায় ভোগেন তাহলে এই ধরনের পানীয়ের থেকে দুরত্ব বজায় রাখাই ভাল।
৩. বিশেষ কিছু সবজি:
আপনার গায়ে কি খুব গন্ধ হয়? তাহলে ব্রকলি, বাঁধাকোপি, ব্রাসেল স্প্রাউট এবং কর্নফ্লাওয়ার খাওয়া একেবারেই চলবে না। প্রসঙ্গত, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এই সবজিগুলি শরীরকে চাঙ্গা রাখতে দারুন উপকারে লাগে ঠিকই, কিন্তু এতে উপস্থিত সালফার গায়ে মারাত্মক গন্ধ সৃষ্টি করে। তাইতো যাদের গায়ে খুব বদ গন্ধ হয়, তাদের এই সবজিগুলি খেতে মানা করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
৪. অ্যাসপেরাগাস বা শতমূলী:
এই শাকটি খেলে শুধু গা থেকে নয়, প্রস্রাব থেকেও মারাত্মক গন্ধ বের হয়। আসলে এতে উপস্থিত মার্কেপটন নামে একটি গ্যাস এই কুকর্মটি করে থাকে।
৫. মাছ:
শরীর সুস্থ রাখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের কোনো বিরল্প হয় না বললেই চলে। আর এই উপাদানটি প্রচুর মাত্রায় থাকে মাছে। তাই তো সুস্থ জীবন পেতে মাছ খাওয়াটা জরুরি। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। মাছে কোলিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা গায়ের গন্ধকে বাড়িয়ে দেয়। আসলে অনেকেই মাছ খাওয়ার পর তা ভাল করে হজম করতে পারেন না। ফলে কোলিন নামক উপাদানটি এতটাই সক্রিয় হয়ে যায় যে ঘামের সঙ্গে ট্রিমেথিলেমিন নামে একটি উপাদান বেরতে শুরু করে, যা গন্ধের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
৬. কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার কম খেলে:
শরীরে যাতে কোনো সময় এনার্জির ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখে কার্বোহাইড্রেট। তাই তো এই উপাদানটির ঘাটতি হলে নানা সমস্যা দেখা দেখা দেয়। প্রথমেই যে ঘটনাটি ঘটে সেটি হল শরীর নিজেকে সচল রাখতে কিটোন বডি নামে এক ধরনের জ্বালানির উৎপাদন করতে শুরু করে। এই কিটোন বডি আবার একটোন নামে এক ধরনের উপাদানের জন্ম দেয়, যা বদ গন্ধের মাত্রা বৃদ্ধি করে। তাই তো গায়ের গন্ধের হাত থাকে বাঁচতে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে কখনও ভুলবেন না।
৭. বেশি ঝাল মশলা দেওয়া খাবার খাবেন না:
সুস্বাদু পদের জন্ম আদা, রসুন এবং পেঁয়াজ ছাড়া সম্ভবই নয়। কিন্তু সমস্যাটা হল এমন ধরনের খাবারে উপস্থিত এই সব মশলাগুলিতে প্রচুর মাত্রায় সালফার থাকে। আর একথা তো কারও আজানা নেই যে গায়ে বদ গন্ধ সৃষ্টিতে সালফারের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো গরমকালে একটু কম মশলা দেওয়া খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। দেখবেন তাতে ফল পাবেন একেবারে হাতে-নাতে।