অন্তরকে বলা হয় দেহের নেতা ও সর্দার। অন্তরের সুস্থতা ও পরিশুদ্ধির ওপর দেহের সুস্থতা ও পরিশুদ্ধি নির্ভর করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জেনে রাখো, শরীরে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, সমস্ত শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সে গোশতের টুকরটি হলো কলব বা অন্তর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২)
অন্তরের পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার অর্থ
অন্তরের পরিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়ার অর্থ হলো, বিভিন্ন ধরনের পাপ ও মন্দকাজে লিপ্ত হয়ে নিজের চিন্তা-ভাবনা, কাজ-কর্ম ও মন-মস্তিষ্ককে পাপাচ্ছন্ন করে ফেলা। মনের ইচ্ছা ও চাহিদাগুলো পূরণ করার মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তিকে শক্তিশালী করা, জ্ঞান-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে যাওয়া। এভাবে আল্লাহর দ্বিন, হুকুম ও বিধান থেকে সরে গিয়ে মনচাহি জীবন কাটানো। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/৮১৬; তাফসিরে উসমানি, পৃষ্ঠা ৭৯৩)
অন্তরের পরিশুদ্ধি কেন প্রয়োজন
ইসলামের দৃষ্টিতে অন্তরের পরিশুদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর ওপর নির্ভর করে ব্যক্তির আমলের প্রতিদান ও পরকালীন সাফল্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই সে সফল হয়েছে, যে নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা বিনষ্ট করেছে।’ (সুরা শামস, আয়াত : ৯-১০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৭)
যেসব কাজে অন্তরের শুদ্ধতা নষ্ট হয়
কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু কাজের বিবরণ এসেছে, যা অন্তরের পরিশুদ্ধতা নষ্ট। যেমন-
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৩৪)
২. মানুষের ওপর ভরসা করা: আল্লাহর পরিবর্তে মানুষের কাছ থেকে অকল্যাণ বা কল্যাণের প্রত্যাশা করলে অন্তরের পবিত্রতা নষ্ট হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্য গ্রহণ করে এজন্য যাতে তারা তাদের সহায় হয়; কখনোই নয়, তারা তো তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।’ (সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৮১-৮২)
৩. অসত্য সঙ্গ গ্রহণ করা: অসত্য ও আল্লাহবিমুখ মানুষের সঙ্গ অন্তরের পরিশুদ্ধতা নষ্ট করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যেসব লোক কোনো দরবারে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তাআলার জিকির করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮০)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হায় দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অনুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমাকে সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ আসার পর। শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা ফোরকান, আয়াত : ২৮-২৯)
৫. হারাম উপার্জন: হারাম জীবিকা মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় দূর করে দেয়। তাতে দূষণ ও কঠোরতা তৈরি করে। মানুষ যখন চুরি ও ডাকাতি করা, চাপে ফেলে আদায় করা সম্পদ খায়; এমনকি যখন বৈধ কাজে যখন অপচয় করে, তখন সে সত্কাজের সাহস হারিয়ে ফেলে। তার ওপর শয়তানের প্রভাব বাড়তে তাকে। তার অন্তরের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে চলে যায়।
আল্লাহ সবার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দিন। আমিন।