নিউজ ডেস্ক: এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের অংশীদারি চুক্তি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। গত সোমবার এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ীরা আনন্দিত।
বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম টিপিপি চুক্তির আওতায় ছিল। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে যেত। অবশ্য পোশাকের কাঁচামাল (তুলা, সুতা বা কাপড়) টিপিপিভুক্ত দেশ থেকে আমদানিকৃত হতে হবে। সব মিলিয়ে চুক্তিটি বাস্তবায়ন হলে পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল বাংলাদেশের।
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় ২০১৫ সালের অক্টোবরে তাঁর প্রচেষ্টায় ১২টি দেশের মধ্যে টিপিপি চুক্তি হয়। এতে স্বাক্ষর করা দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশ এই দেশগুলোর দখলে। তবে চুক্তিটি এখনো কার্যকর হয়নি। মার্কিন কংগ্রেসও চুক্তি অনুসমর্থন করেনি।
বাংলাদেশের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, টিপিপি হওয়ার পর থেকে চীনের অনেক ব্যবসায়ী ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ভিয়েতনাম থেকে পণ্য কেনার পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। এসব উদ্যোগের কারণ ছিল টিপিপি বাস্তবায়ন শুরু হলে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায় করা।
ব্যবসায়ীদের এসব বক্তব্যের সত্যতা পরিসংখ্যানের মাধ্যমেও পাওয়া যায়। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, গত বছরের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ হাজার ৪৯৬ কোটি ডলারের পোশাক কেনে। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক কেনার এই পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। সার্বিকভাবে আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় সব দেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যায়। ব্যতিক্রম কেবল ভিয়েতনাম। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে ভিয়েতনাম। এটি ২০১৫ সালের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ৫৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। গত বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি হয় ৪৯৩ কোটি ডলারের পোশাক। এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে চীন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল বলেন, ‘টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসায় আমরা সবাই আনন্দিত। কারণ চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে ভিয়েতনামের চেয়ে আমাদের সক্ষমতা কমে যেত।’ তিনি বলেন, ‘টিপিপি চুক্তির কারণে চীনের ব্যবসা যতটুকু ভিয়েতনামে যাওয়ার কথা ছিল তার অনেকটা আমাদের দেশে আসবে। এতে রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করছি।’
এদিকে টিপিপি থেকে বেরিয়ে এলেও ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির পণ্য আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে। এ পরিকল্পনা বাস্তব রূপ পেলে বাংলাদেশসহ সব দেশকে সব পণ্যে বাড়তি শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে হবে।
এ বিষয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, সব দেশের ক্ষেত্রে সমান হারে শুল্ক আরোপ করলে সমস্যা নেই। দেশভেদে পার্থক্য থাকলে জটিলতা হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করায় টিপিপি চুক্তি অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়বে বলে মনে করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে গতকাল বিবিসির প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই টিপিপিকে এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ‘টিপিপি টুয়েলভ মাইনাস ওয়ান’ নামে নতুন চুক্তির চিন্তাভাবনাও করছে।