নিউজ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বগ্রহণকারীদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনকে ভিসা প্রদানের ওপর কড়াকড়ি আরোপ এবং বার্ষিক ৫০ হাজার রিফ্যুজিকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দানের বিধি সীমিত করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি প্রদানের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিল উঠলো যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে। মঙ্গলবার আরকানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন এবং জর্জিয়ার রিপাবলিকান সিনেটর ডেভিড পারডিউ এই বিল উত্থাপন করেছেন।
নাগরিকত্ব গ্রহণকারীরা শুধুমাত্র তাদের স্বামী/স্ত্রী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে পারবেন-এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ল্যাটিনো এবং এশিয়ান-আমেরিকানদের টার্গেট করেই এ বিল উত্থাপন করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন। কারণ, আইরিশ, জার্মান এবং ইটালিয়ানরা অনেক আগেই তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনকে যুক্তরাষ্ট্রে এনেছেন। এই বিলে ডিভি লটারিও স্থায়ীভাবে বিলুপ্তির কথা রয়েছে।
সিনেটর টম কটন এ বিলের যুক্তি উপস্থাপনকালে বলেন, ‘যখনই কেউ ইমিগ্র্যান্ট-ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেন, তখনই গ্রিনকার্ড হাতে পান। এরপরই স্বামী/স্ত্রী, মা-বাবা এবং সেই সূত্রে ঘনিষ্ঠ সকলকে বৈধভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে আনার পথ সুগম হয়। আমি মনে করি এমন ব্যবস্থা আমেরিকান শ্রমিক-কর্মচারির জন্যে কোনভাবেই শুভ নয়। ’ এ বিলসমূহ পাসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে রিপাবলিকান-সম্পৃক্তরা আশা করছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী কর্মকান্ডে সারা যুক্তরাষ্ট্রে যখন তুমুল বিক্ষোভের পাশাপাশি আইনগত লড়াই চলছে, তখন এ বিল গোটা পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করলো বলে মন্তব্য করেছেন ‘ইমিগ্রেশন লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার’র এটর্নী মার্ক সিলভারম্যান। তিনি বলেন, ‘এহেন অ-আমেরিকান কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে একদিন হয়তো ওরা স্ট্যাচু অব লিবার্টিও উচ্ছেদ করবে। সিটিজেনশিপ গ্রহণকারীদের সবকিছু কেড়ে নিতে চাইবে। ’
ইউএস সুপ্রিম কোর্টের এটর্নী মঈন চৌধুরী এবং ইমিগ্রেশন বিষয়ক প্রখ্যাত এটর্নী অশোক কর্মকার পৃথক পৃথকভাবে এ সংবাদদাতার কাছে রিপাবলিকানদের এমন কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘অথচ এই যুক্তরাষ্ট্র গড়ে উঠেছে অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেও অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত করা হয়েছে। ’
এই দুই আইনজীবী সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমক্র্যাটদের ব্যাপক বিজয় প্রদানের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকানদের এমন কর্মকাণ্ডের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার আহবান জানান। ’
অশ্বেতাঙ্গরা যাতে কোনভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম না হয়, সে জন্যেই রিপাবলিকানরা এমন অ-আমেরিকান পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক লীগের সভাপতি খোরশেদ খন্দকার। তিনি বলেন, ‘অমানবিক আচরণের স্থায়িত্ব খুবই স্বল্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ রিপাবলিকানরা যা করছে, তার অবসান খুব দ্রুত ঘটবে প্রকৃতির নিয়মেই। ’
পারিবারিক কোটায় আত্মীয়-স্বজনকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই ধীরগতি শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সিনেটের এ বিল পাশ হলে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ এশিয়ান, স্প্যানিশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের লোকজনের স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসতির প্রত্যাশা ধুলিসাত হয়ে যাবে বলে ইমিগ্রেশন এটর্নীরা জানান।