বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫

যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে জয়ী হতে টিউলিপকে যেভাবে সহযোগিতা করেছে আওয়ামী লীগ

টিউলিপ সিদ্দিকের ওয়েবসাইটে তার বক্তব্যের কিছু অংশ নেত্র নিউজের হাতে আসে। টিউলিপের ওই বক্তব্যটি ছিল, ‘আমি আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য ও ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) লবিং ইউনিট এবং ইলেকশন স্ট্র্যাটিজি টিমের হয়ে কাজ করি।’ যদিও বক্তব্যটি ইতোমধ্যে ওয়েবসাইট থেকে ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।

এ থেকে বোঝা যায় যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিটি মিনিস্টার ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতেন। যা তার ওয়েবসাইটে পাওয়া এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট।

২০০৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে টিউলিপের ওয়েবসাইটে আরেকটি লেখায় দেখা যায়, টিউলিপ আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র হিসেবে বিবিসি ওয়ার্ল্ডে এক ইন্টারভিউয়ে অংশ নিয়েছিলেন।

তবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে টিউলিপের এ সহযোগিতা একতরফা ছিল না। তিনিও দলটি থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন।

২০১৫ সালে টিউলিপ প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সে দেশে আওয়ামী লীগের একটি র‌্যালিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। র‌্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনাও। তিনি তার ভাগ্নি টিউলিপকে বিজয়ী অভিনন্দন জানিয়ে কপালে চুমুও দিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উল্লসিত সদস্যদের সামনে টিউলিপ সেদিন বলেছিলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমি কখনোই ব্রিটিশ এমপি হিসেবে এখানে দাঁড়াতে পারতাম না।’

চ্যানেল ফোর নিউজ ‘টিউলিপ সিদ্দিক: বাংলাদেশি শাসক দলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন’ শীর্ষক একটি ভিডিও প্রতিবেদনে টিউলিপের সেই ভাষণের ফুটেজটিও উপস্থাপন করে।

গত ৮ জানুয়ারি দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘টিউলিপ সিদ্দিকের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক খালার (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা কিয়ার স্টারমারের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।’

আরও বলা হয়েছে, কিয়ার স্টারমার যখন ছায়া মন্ত্রিসভায় ছিলেন, তখন তার জন্য ‘ফান্ডরেইজিং’ ডিনারে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার প্রতিনিধি পর্যায়ের কর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন।

২০২১ সালে নেত্র নিউজে অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের একটি কলাম প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ২০১৫ সালে এমপি হওয়ার পর টিউলিপ জানিয়েছিলেন যে আওয়ামী লীগের সাথে তার আর কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এও দাবি করেছিলেন যে তিনি পরিবারের সাথে ‘রাজনীতি নিয়ে কোনো আলাপ করেন না।’

বার্গম্যান লিখেছিলেন, চ্যানেল ফোর নিউজ লেবার পার্টির এই এমপির যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের র‌্যালিতে দেওয়া ভাষণের দুটি ভিডিও ক্লিপ প্রচার করেছিল, যার মধ্যে একটি ভিডিওতে তার খালা শেখ হাসিনাকেও দেখা গিয়েছিল। ভিডিও ক্লিপ দুটি প্রচারের পর টিউলিপের ওই দাবি অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল।

তিনি লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সাথে সিদ্দিকের ধারাবাহিক যোগাযোগ গোপন করা বা ছোট করে দেখানোর ভুল প্রচেষ্টা উন্মোচনের পাশাপাশি, এসব ভিডিও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে টিউলিপ যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পদ্ধতিগত সমর্থন পেয়েছিলেন, তার পটভূমি তৈরিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।’

এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিজয়ী ভাষণেও টিউলিপ বিশেষভাবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ‘আনোয়ার মামা’ বলে উল্লেখ করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।

টিউলিপের জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রচারণা

নেত্র নিউজের কলামে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণার শুরুর একদিন আগে ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর একটি রেস্তোরাঁয় দেশটির আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বৈঠকের কথাও উল্লেখ করা হয়।

বৈঠকের পর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শাহজাহান আহমেদ সাজা নামের এক কর্মী তার ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছিলেন, ‘আসন্ন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা আপার বড় মেয়ে তৃতীয়বারের মতো লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়! প্রতিবারের মতো আবারও বিজয়ী করার জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মানিত সভাপতি সুলতান শরীফ ভাইয়ের দিকনির্দেশনায় ও শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ ভাইয়ের নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ে কর্ম-কৌশল নির্ধারণী সভায় উপস্থিত শুভাকাঙ্ক্ষীবৃন্দ। ইনশা আল্লাহ জয় হবেই!’

পরদিন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিলবার্নের একটি সুপার মার্কেটের বেসমেন্ট থেকে টিউলিপের জন্য তাদের প্রচারণা শুরু করেন।

শাহ শামীম আহমেদ নামে একজনের ফেসবুক প্রোফাইলে প্রচারণার প্রথম দিনের একটি ছবি পোস্ট করা হয়। নেত্র নিউজ ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করেছে। ছবিতে থাকা ব্যক্তিরা হলেন- সৈয়দ শাজিদুর রহমান ফারুক (সাধারণ সম্পাদক), আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), মিসবাহ সাদাত (শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক;), ফখরুল ইসলাম মধু (যুবলীগ সভাপতি), শাহ শামীম আহমেদ (দপ্তর সম্পাদক) ও জামাল খান (যুবলীগের সহকারী সাধারণ সম্পাদক)।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular