নিউজ ডেস্ক:
এত অর্থকড়ি ব্যয় কিংবা ক্লাবের উন্নয়নের পিছনে যাঁরা আসল কারিগর হিসেবে কাজ করেন তারা হলেন ক্লাবের মালিকরা। কিছু অসাধারণ মানুষের জন্য আজ ইউরোপীয় ফুটবল আরও পরিপূর্ণ। আসুন এখন জেনে নেওয়া যাক এমনই কয়েকজন ক্লাব মালিকের পরিচিতি যাদের সম্পর্কে কিছু কথা না জানলে অনেক কিছু হয়তো অজানা থেকে যাবে।
১। ক্লাবঃ রিয়াল মাদ্রিদ
প্রেসিডেন্টঃ ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ
রিয়াল মাদ্রিদের মূল মালিক হচ্ছে দলের শেয়ারহোল্ডারা। তাদের প্রদানকৃত অর্থের মাধ্যমেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে ক্লাব ফুটবলে স্পেন তথা ফুটবল বিশ্বের রাজকীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। যদিও ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট। তবে তিনি যেহেতু রিয়াল মাদ্রিদের শেয়ারহোল্ডারদের একজন তাই তাঁকে মালিক হিসেবে ধরা যায়। বলে রাখা ভালো পেরেজ মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বারের মত বহাল আছেন। অবাক করার মত ব্যাপার এটাই যে, টেনিস তারকা রাফায়েল নাদালও রিয়াল মাদ্রিদের একজন শেয়ারহোল্ডার।
২। ক্লাবঃ বার্সেলোনা
প্রেসিডেন্টঃ জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ
বর্তমান প্রেসিডেন্ট। অল্প কিছুদিন আগেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদের মত বার্সেলোনাও শেয়ারহোল্ডারদের অর্থেই সচল। কাতালান এ ক্লাবটি স্পেন থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের স্বাধীনতা দাবি করছে। অতীত ইতিহাস বলে স্পেনের রাজপরিবারের বর্বরতার কারণে তাদের পছন্দ করতো না কাতালোনিয়ার কেউই। সেদিক থেকে যদি কাতালোনিয়া স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে বার্সেলোনা হয়তোবা লা লিগা থেকে বের হয়ে যেতে পারে।
৩। ক্লাবঃ বায়ার্ন মিউনিখ
সম্মানিত প্রেসিডেন্টঃ কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রুমেনেগ হলেও জার্মানীর ইতিহাসের সেরা এ ক্লাবের মালিক সেই শেয়ারহোল্ডাররা। এক কথায় জার্মানীর ক্লাব ফুটবলকে এক ঘোড়ার রেসে পরিণত করতে কাড়িকাড়ি টাকা-পয়সা যোগান দিচ্ছেন এই শেয়ারহোল্ডাররা।
৪। ক্লাবঃ এসি মিলান
মালিকঃ লি ইয়ংহং
মাস তিনেক আগেই সাবেক মালিক আদ্রিয়ানো গ্যালিয়ানির কাছ থেকে চাইনিজ ব্যবসায়ী ইয়ংহং লি এসি মিলান ক্লাবটি কিনে নেন ৭৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। এরপর দলকে নতুন করে সাজাতে আরও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউরো প্রদান করেন ২০১৭-১৮ দলবদলের বাজারে। যাতে মিলান ভালো কিছু খেলোয়াড় কিনতে পারে। আর ঠিক তিন মাস পর মিলান অনেকটাই চাঙ্গা অবস্থায় আছে।
৫। ক্লাবঃ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
সিইওঃ এড উডওয়ার্ড
নিউইয়র্ক ষ্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার অবমুক্ত করে দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ক্লাবের ৯০ শতাংশ মালিকানা শেয়ারহোল্ডারদের দেয়া হলেও এড উডওয়ার্ড ক্লাবের সিইও এবং একজন শেয়ারহোল্ডারও বটে। যদিও ক্লাবের নীতিনির্ধারণ কিংবা অন্য কোন কাজের সিদ্ধান্ত আসে গ্লেজার ফ্যামিলির পক্ষ থেকে। এ পরিবার ক্লাবের ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিকও।
৬। ক্লাবঃ পিএসজি
মালিকঃ নাসের আল খেলাইফি
কিছুদিন আগেই পিএসজিতে যোগ দিয়েছেন বার্সেলোনার সাবেক সুপারস্টার নেইমার জুনিয়র। আর তাকে দলে নিতে পারার মত ক্ষমতা ইউরোপিয়ান ফুটবলে যে কয়টি ক্লাবের আছে তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে পিএসজি। আর পিএসজির প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন নাসের আল খেলাইফি।
যিনি কাতারের অরিক্স কাতার ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির মালিক। এই কোম্পানির প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের মত সম্পত্তি রয়েছে। খেলাইফি কাতারের খেলাধুলার সঙ্গেও জড়িত আছেন। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতিও তিনি। তিনি যে বেশ ক্ষমতাবার সেটার প্রমাণ তিনি নেইমারের মত সুপারস্টার কে কিনেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
৭। ক্লাবঃ লিভারপুল
মালিকঃ ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ
লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের মালিকানা এখন আমেরিকান একটি স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের হাতে। আমেরিকান মেজর বেসবল লিগের দল বোস্টন রেড সক্সের মালিকানাও এই স্পোর্টস গ্রুপেরই।
৮। ক্লাবঃ জুভেন্টাস
মালিকঃ এক্সর এন ভি
ইতালির অন্যতম সেরা ক্লাব জুভেন্টাসের মালিকানা নেদারল্যান্ডভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এক্সর এনভির। কিন্তু জুভেন্টাসের পুরো দেখাশোনার ভার ইতালির আগনেল্লি ফ্যামিলির হাতে। এক্সর ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৪০.১ বিলিয়ন ডলারের মত। শত বছরের পুরনো এই কোম্পানি বেশ ভালো ভাবেই ইতালির ঐতিহ্যবাহী ক্লাবকে চালিয়ে নিচ্ছে।
৯। ক্লাবঃ চেলসি
মালিকঃ রোমান আব্রামোভিচ
রাশিয়ান ধনকুবের আব্রামোভিচ ২০০৩ সালে ১৪০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেন চেলসি ফুটবল ক্লাব। মোট ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিক এই রাশিয়ান চেলসি কিনে নেবার পরই মূলত চেলসির উত্থান শুরু। কিন্তু রোমান সাফল্য পেতে এমন কিছু কাজ করেছেন যা আসলেই দৃষ্টিকটু। তবে বর্তমান সময়ে এই মানুষটির কারণেই চেলসি ফুটবল ক্লাব বিশ্ব ফুটবলের সেরা এক নাম।
১০। ক্লাবঃ ম্যানচেস্টার সিটি
মালিকঃ শেখ মনসুর
মাত্র ২০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবকে কিনে নেন শেখ মনসুর। মালিকানা পরিবর্তনের আগে সিটির অবস্থা একদমই ভালো ছিল না। এমন তাদেরকে রেলিগেটেড হয়ে দ্বিতীয় বিভাগেও খেলতে হয়েছে। কিন্তু মনসুর ক্লাব মালিকানা নিজের করে নেওয়ার পর থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলেছেন। আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান মনসুর কোন দিক থেকে ক্লাবকে ঢেলে সাজাতে ধিধা করেননি। এখন দলে খেলছেন ডেভিড সিলভা,ভিন্সেন্ট কোম্পানি, আগুয়েরোদের মত তারকারা। এ সবই মনসুরের অবদান। মালিকানা নেওয়ার নয় বছরেই দুইবার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপাও ঘরে তুলেছেন ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাব।