নিউজ ডেস্ক:
অনেক রঙে এই প্রাণীটিকে দেখতে পাওয়া যায়। তবে আবার ভাবেন না যে, এটি ক্যামেলিয়ন এর মতো রং বদলাতে পারে। আসলে এর শরীর রংবেরঙের হয়ে থাকে। দেখতে চিংড়ি মাছের মতো নিরীহ মনে হলেও আসলে এটি কিন্তু মোটেই সেরকম নয়। ম্যান্টিস চিংড়ি খুবই ভয়ংকর একটি সামুদ্রিক প্রাণী। এরা সামনের বড় দুটি পা দিয়ে প্রতিপক্ষকে লাথি মারতে সক্ষম। তাদের লাথির গতি এতটাই দ্রুত গতির যে, পানিতে ছোট ছোট বাবল তৈরি হয়ে যায়। সামুদ্রিক বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াকে ক্যাভিটেশন বলে থাকেন।
ম্যান্টিস চিংড়িরা প্রায় ৪০০ প্রজাতি রয়েছে। এই প্রাণীগুলো মাত্র ১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এদের ওজন প্রায় শুন্য দশমিক ছয় কেজি হয়। এটি একটি বাস্কেটবলের মতো ভারী। এরা সমুদ্রের গভীরে পাথরের মধ্যে বসবাস করতে পছন্দ করে। এই চিংড়ির প্রজাতি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। দৈহিক অনুপাতে সবচেয়ে শক্তিশালী লাথির রেকর্ড এদেরই। সাধারণত এরা ঝিনুক এবং কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী শিকার করে। এদের চ্যাম্পিয়ন বক্সার বলা হয়। শিকারকে বধ করতে, ড্যাক্টিল ক্লাব নামক বিশেষ দুটি অঙ্গ দ্বারা প্রচণ্ড গতিতে আঘাত করে। মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরত্বের ব্যবধানে, এরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে শত্রুর দিকে ছুটে যায়। আঘাতের ত্বরণ ২২ কিলোমিটার ক্যালিবার বুলেটের চেয়েও বেশি। ম্যান্টিস চিংড়িগুলো তাদের ওজনের চেয়েও ১০০ গুণ বেশি একটি শক্তিশালী হয়।
এই প্রচণ্ড বেগ শক্ত খোলস বিশিষ্ট যে কোনো শত্রুকে কাবু করতে যথেষ্ট। এই আঘাত এতো বেশি শক্তিশালী যে, এরা মাঝে মাঝেই অ্যাকুরিয়ামের কাঁচও ভেঙ্গে ফেলতে পারে। সেজন্য এদেরকে সাধারণত কাঁচের তৈরি অ্যাকুরিয়ামে না রেখে পুরু প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা হয়। এছাড়াও আঘাতের আগেই এদের গতি এবং পানিতে যে বুদবুদের মতো সৃষ্টি করে, সেটা অনেকটা শক ওয়েভের মতো কাজ করে। সেই তরঙ্গের আঘাতে এদের শত্রু প্রথমে অবশ হয়ে যায় এবং এরপর তাদের উপর মূল আঘাতটি এসে পড়ে। এতো জোরে আঘাত করা সত্ত্বেও নিজেদের শরীরের কোনো ক্ষতি না হওয়ার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা এদের মুষ্ঠিতে এক ধরনের বিশেষ পদার্থের খোলসকে চিহ্নিত করেছেন।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই খোলসটি নিয়ে গবেষণা করছেন ক্ষুদ্র এবং পাতলা, কিন্তু শক্তিশালী আবরণ তৈরি করার জন্য, যা প্রচন্ড আঘাতেও ভেঙ্গে পড়বে না। আক্রান্ত স্থানে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়, যার তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৫০০০ কেলভিনের উপরে। ফলে জল বাষ্পীভূত হয়ে বাবল তৈরি হয়। এই চিংড়ির আরো একটি বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হলো এদের চোখ। এরা স্বতন্ত্রভাবে প্রতিটি চোখ নাড়াতে পারে। মানুষের কালার রিসেপ্টর যেখানে তিনটি (লাল, সবুজ, নীল), এদের কালার রিসেপ্টর ১২ থেকে ১৬টি পর্যন্ত থাকে। ফলে এরা আমাদের চেয়েও অনেক বেশি রঙিন পৃথিবী দেখে। প্রকৃতপক্ষে প্রাণিজগতে এরাই সবচেয়ে বেশি রং দেখতে পায়। এরা এমন কিছু রং দেখতে পায়, যেগুলো অন্য কোনো প্রাণীর কল্পনাতেও নেই।
চিংড়ি হিসেবে ডাকা হলেও আদতে এরা চিংড়ি নয়। বরং স্টমাডোপোডা নামক স্বতন্ত্র একটি পদের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের ৪০ কোটি বছরের পুরোনো ফসিলও পাওয়া গেছে। কোটি কোটি বছরেও এদের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রাণীরা টিকে থাকতে অভূতপূর্ব সব কৌশল আয়ত্ত করে। তবে এই ম্যান্টিস চিংড়ি বা পিকক ম্যান্টিস চিংড়ির জীবন কৌশল অন্য যে কোনো প্রাণীর থেকে আলাদা।