মাসুদ রানা, মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ আজ মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচন। রোববার মধ্যরাতে প্রচারণার শেষ সময় সামনে রেখে শেষ মুর্হূতের প্রচারণার ব্যস্ত ছিলেন প্রার্থীরা। ভোটারদের মধ্যে আলাদা রকম একটি ইমেজ বিরাজ করছে। সকাল ৮ টা থেকে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চলবে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত।কে হচ্ছেন পরবর্তী পৌর মেয়র তা নিয়ে ভোটার-সমর্থকদের মাঝে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অবশ্য মেয়র প্রার্থীদের একে অন্যের প্রতি রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। সব ছাপিয়ে সুষ্ট পরিবেশ বজায় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। ভোটাররাও মতামত প্রকাশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান রিটন ও বিএনপি প্রার্থী জাহাঙ্গীর বিশ^াস দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মেয়রের চেয়ারে থাকা মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। অপরদিকে সাংস্কৃতিক কর্মী নিশান সাবের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে দ্বিমুখী না ত্রিমুখি লড়াই হবে তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহফুজুর রহমান রিটন জেলা যুবলীগের আহবায়ক। নৌকা প্রতীক বিজয়ী করতে তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলার দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে কিন্তু এক কাতারে। সবাই চাচ্ছেন নৌকার ভোট। নেতাকর্মীরা বলছেন, ভোট চাওয়ার এই দৃশ্য যদি ব্যালটে প্রতিফলিত হয় তাহলে কাঙ্খিত ফল আসতে পারে। জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর বিশ^াস পৌর বিএনপি সভাপতি। তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যে দলীয় কোন কোন্দলও নেই। সংসদ নির্বাচন না হলেও পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বিজয়ের সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ নেতাকর্মীরা। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলেছেন তারা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী হন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতায় ছিলেন। তাদেরকে হারিয়ে তিনি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন পৌর মুকুট। সর্বদলীয় ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এবারের নির্বাচনে অবশ্য গত নির্বাচনের চেয়ে ভিন্ন চিত্র। কেননা দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়ছেন দুটি বড় দলের প্রার্থীরা। তাই মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর অবস্থান কি দাঁড়ায় তা নিয়ে জনমনে কৌতুহল রয়েছে। তবে জয়ের ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী।
মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু তিন মেয়াদে নির্বাচিত হন। তবে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তিনি ২৫ বছর ধরে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মেহেরপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩০ হাজার ৯৬৫ জন। মেয়র পদে চার জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৫ জন প্রার্থী লড়ছেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৫ টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে নানা কর্মকান্ড বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলা নির্বাচন অফিস ও প্রশাসন। রোববার বিকেল থেকে বিজিবি টহল শুরু হয়েছে। এছাড়াও সকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে।
মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনের রির্টার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা জেলা নির্বাচন অফিসার রোকনুজ্জামান বলেন, পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ১৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি কেন্দ্র বিশেষ হিসেবে (ঝুঁকিপূর্ণ) চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়-১ ও ২ এবং শেখপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ কেন্দ্র ও কেন্দ্রের আশাপাশে বাড়তি নিরপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৩ পল্লাটুন বিজিবি, র্যাব’র দুটি টহল দল এবং পুলিশের একাধিক টহল দল মাঠে থাকবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আশাবাদী রির্টার্নিং অফিসার।
এদিকে নির্বাচনকে কন্দ্রেক কঠোর নিরাপত্ত বলয় তৈরি করা হয়েছে। যেখানে প্রতিটি কেন্দ্রে একজিন করে এসআই, তিনজন করে এএসআইসহ ১৩ জন পুলিশ অবস্থান করবে। সাথে থাকবে আনছার সদস্য। এছাড়াও এখাধিক মোবইল টিম, সাদ পোশাকে পুলিশ কজ করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেব থাকছে বিজিবি। এছাড়াও ৯ টি ওয়ার্ডে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে। মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার ৯৬৫। পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩, নারী ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৭৩২। ১৫ টি কেন্দ্রের ৯১ টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৯ টি ওয়ার্ডের ১৫ টি কেন্দ্রে ৯১ টি বুথে