লোকাল পরিবহন ধর্মঘট : টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ
নিউজ ডেস্ক:অফিসের নির্ধারিত সময়ের পরে পাসপোর্ট নিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে শ্রমিক নেতার হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। হাতাহাতির ঘটনায় মেহেরপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকসহ দু’জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সাহারুল ইসলাম নামের এক গাড়ি চালক মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ নিয়ে বিকাল ৪টার পর থেকে সড়কের কয়েকটি স্থানে আগুন জ্বেলে অবরোধ করাসহ মেহেরপুরের সকল রুটে পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনার সৃষ্টি হলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) আন্ত: জেলা পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল।
পাসপোর্ট নিতে আসা মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের আবু সাইদ ড্রাইভারে ছেলে মামুনুর রশিদ জানান, অফিস সময়ের পরে পাসপোর্ট নিতে যায়। এসময় নিরাপত্তা কর্মী পুলিশের নায়েক কামরুল হোসেন বলেন সময় শেষ হয়ে গিয়েছে এক হাজার টাকা দিলে পাসপোর্ট ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি অভিযোগ করেন। মামুনুর রশিদ বিষয়টি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানকে জানালে মতিয়ার রহমান নিরাপত্তা কর্মীকে পাসপোর্ট দিয়ে দেয়ার কথা জানান। এসময় নিরাপত্তাকর্মী কামরুল হোসেন মতিয়ার রহমানের সাথে উগ্র আচরণ করেন। তাঁর আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে মতিয়ার রহমান সেখানে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে একটি ধাক্কা দেয়। পরপরই অফিসের সকল নিরাপত্তাকর্মী একসাথে সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ও তাঁর সাথে থাকা সাহারুল ড্রাইভারকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এসময় সাহারুল ইসলামের নাকের হাড় ভেঙে রক্তপাত শুরু হয়। তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত নায়েক কামরুল হোসেন টাকা চাওয়ার ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অফিসে ঢুকেই তাকে একটি থাপ্পড় মারলে তার সহকর্মীদের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
এদিকে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা পাসপোর্ট অফিসের সামনে আড়াআড়িভাবে দুটি বাস রেখে সড়ক অবরোধ করে রাখে এবং টায়ার জ্বালিয়ে নিরাপত্তাকর্মী কামরুলের বিচার দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ ফরিদ আহমেদ, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, সদর থানার ওসি রবিউল ইসলাম, ডিবির ওসি শাহীন উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শ্রমিকরা মেহেরপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে পুনরায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবিব, সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানসহ শ্রমিক নেতাদের সাথে জরুরী বৈঠক করে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দিলে তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। তবে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত লোকাল পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবিব জানান, আমাদের শ্রমিক নেতাকে মারধর করা হয়েছে। তার বিচার চাই। তবে আগামি কাল (আজ) সকাল ১০টা পর্যন্ত লোকাল রুটের পরিবহন বন্ধ থাকবে এবং দুরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, শ্রমিক নেতা মতিয়ার রহমান সরকারি অফিসে কর্মরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যর গায়ে হাত তুলে অন্যায় করেছেন। তারপরও জেলার কর্তা ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সমাধান না হলে পরিবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার সময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সকলে মিলে বসা হবে। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।