মাসুদ রানা, মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ বছর ঘুরে আবারও ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। সারা বিশ্বের মুসলমানরা জিলহজের মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করে। বাংলাদেশে এই ঈদ শনিবার। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে ঈদের আমেজ। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উত্সাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মেহেরপুর জেলায় পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আযহা। শনিবার সকালে জেলার ৩৭৩টি ঈদগাহসহ বিভিন্ন মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দো’আ মোনাজাতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতন বন্ধে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছেন মুসল্লিরা। সকাল ৮ টার সময় মেহেরপুর শহরে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় পৌর ঈদগাহ ময়দানে। ঈমামতি করেন মাও. আব্দুল হান্নান খান। এছাড়াও সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে ঈদের দ্বিতীয় বৃহ.জামাত অনুষ্ঠিত হয় মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে অবস্থিত পুরাতন ঈদগাহ ময়দানে। ঈমামতি করেন মাও. রোকনুজ্জামান। সকাল ৯ টায় পৌর ঈদগাহ ময়দানে মহিলাদের ঈদের জামাতে ঈমামতি করেন মাও. আব্দুল করিম। এ দিকে রাজনগর দাখিল মাদ্রসার প্রঙ্গনে ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টার সময় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈমামতি করেন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে সকাল ৮টায় গাংনী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈমামতি করেন মাও. সাইফুল্লাহ। একই সময়ে দ্বিতীয় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় চৌগাছা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। ঈমামতি করেন হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন। গাংনঅ উপজেলার সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় মানিকদিয়া এগারপাড়া ঈদাগহ ময়দানে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে উৎসব মুখর পরিবেশে ঈদুল আযহা উদযাপিত হচ্ছে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করা হয় । হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে থেকে শুরু হয় কুরবানির এই প্রচলন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে হজরত ইবরাহীম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানী করতে উদ্যোত হয়েছিলেন। ওই অনন্য ঘটনার স্মরণেই ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির এ রেওয়াজ চালু হয়।
ঈদের দিন দেওয়া হয় কোরবানি। যদিও ঈদের দিন থেকে তিন দিন কোরবানি দেওয়া যায়। সামর্থ্যবানরা গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া প্রাণী দ্বারা কোরবানি আদায় করবেন। নিয়ম অনুসারে কোরবানি করা পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিন ও পাড়া-প্রতিবেশী, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া যায়। ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরই নামে জবাই করা। আরবি ‘আজহা’ এবং ‘কোরবান’ উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ। কোরবানি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন। তাই ঈদুল আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে মনের পশু অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা।
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন ঈদগাহে দো’আ মোনাজাতে বিশ^ মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে দো’আ করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের উপর শান্তি বর্ষণের দো’আ করেন ঈমামগণ। তবে মোনাজাতে বারবারই উঠে আসে সম্প্রতি চলা মিয়ানমারের নৃশংস গণহত্যার বিষয়। মিয়ানমারের অসহায় মুসলমানদের রক্ষায় আল্লাহর রহমত বর্ষণের ফরিয়াদ করেন মুসল্লিরা।