নিউজ ডেস্ক:
অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও মার্কোস রোহোর গোলে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে গত রাতে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে হারিয়েছে নাইজেরিয়াকে। এই জয়ে ৩ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপে রানার্স-আপ হয়ে শেষ ষোলোতে উঠলো মেসির আর্জেন্টিনা। এই গ্রুপে দিনের অন্য ম্যাচে ক্রেয়েশিয়া ২-১ গোলে হারিয়েছে আইসল্যান্ডকে। এই জয়ে ৩ খেলায় ৯ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ক্রোয়েশিয়া। ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে নাইজেরিয়া তৃতীয় ও ১ পয়েন্ট নিয়ে আইসল্যান্ড চতুর্থ হলো।
সমীকরনের বোঝা মাথায় নিয়ে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ তো জিততেই হবে, সেই সাথে ক্রোয়েশিয়ার কাছে আইসল্যান্ডের হার বা ড্র’র জন্য অপেক্ষা করতে হবে মেসির দলকে। নিজেদের ঘাড়ে পড়া দায়িত্ব নিজেদেরই পালন করতে হবে, এটা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিলো তারা । নয়তো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়। অন্যের কাজের জন্য ভাগ্যের উপর ভরসা করা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিলো না। কিন্তু মেসিকে ভালোবেসে এবং মেসির জন্য হলেও আইসল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মড্রিচ।
তাই নিজেদের কাজটা সফলভাবে করতে সেন্ট পিটার্সবার্গে শুরু থেকে নিজেদের গোছানোর চেষ্টা করে আর্জেন্টিনা। দলের অন্য সবাই ঠিক মতো নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার আগেই হঠাৎ জ্বলে ওঠেন প্রথম দু’ম্যাচে নিস্প্রভ থাকা বিশ্ব ফুটবলের ক্ষুদে জাদুুকর মেসি। ১৪ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে মেসির উদ্দেশ্যে হাওয়ায় বল ভাসিয়ে লম্বা করে ক্রস দিয়েছিলেন একাদশে ফেরা মিডফিল্ডার এভার বানেগা। হাওয়া ভেসে উড়ে আসা বলটি বাম উরু দিয়ে নিচে নামিয়ে কয়েক কদম সামনে এগিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত শটে নাইজেরিয়ার গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠান পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা মেসি(১-০)। দলনেতার গোলেই ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এবারের বিশ্বকাপে এটিই মেসির প্রথম গোল। বিশ্বকাপ আসরে ৬৬২ মিনিট পর গোল পেলেন বার্সেলোনার এই তারকা খেলোয়াড়। তবে এবারের আসরের শততম গোলটি কিন্তু এলো এই মেসির পায়ের জাদুতেই।
যেভাবে গোলটি করেছেন মেসি, তাকে দেখে মনে হয়নি অনেক বড় চাপে আছেন তিনি। তারপরও আর্জেন্টিনাকে আরও নিরাপদে নিয়ে যেতে ব্যবধান বাড়াতে পরবর্তীতে নাইজেরিয়ার গোলমুখে আরও দু’বার শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু সেগুলোতে গোলে পরিণত হয়নি।
এছাড়া ডান-প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে কয়েকবারই নাইজেরিয়ার রক্ষণদূর্গ ভাঙ্গার চেষ্টা করেছেন মেসি। সফলও হয়েছেন তিনি। সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোর জন্য বলের যোগানও দিয়েছেন । কিন্তু গঞ্জালো হিগুয়েইন-পেরেজ বা বানেগা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেননি।
ডি-মারিয়া ও বানেগা দলে ফেরায় অনেকটাই নির্ভার ছিলেন তিনি। কারন ডান-প্রান্ত দিয়ে না হলেও, বাঁ-দিক দিয়ে নাইজেরিয়াকে চাপে রেখেছিলেন ডি মারিয়া। ফলে প্রথমার্ধে পুরোপুরিভাবে ব্যাকফুটেই ছিলো নাইজেরিয়া। এই অর্ধে ৬২ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখেছিলো ৪-৪-২ ফরম্যাটে খেলা শুরু করা আর্জেন্টিনা। ঐ মেসির একমাত্র গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ করে আর্জেন্টিনা।
স্বস্তি নিয়ে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের শুরুর মতো এবার নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার পরিকল্পনায় ছিলো আর্জেন্টিনা। কিন্তু ৪৯ মিনিটে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জেভিয়ার মাচেরানোর ভুলে গোল হজম করতে হয় আর্জেন্টিনাকে।
আর্জেন্টিনার গোলবারের বা-দিক দিয়ে কর্নার পায় নাইজেরিয়া। কর্ণার স্পট থেকে বলে কিক নেন মিডফিল্ডার ব্রায়ান ইডু। কিন্তু এসময় নাইজেরিয়ার লিয়ন বালোগানকে বক্সের মধ্যে টান দিয়ে ফেলে দেন মাচেরানো। এতে পেনাল্টির নির্দেশ দেন ম্যাচ পরিচালনকারী অন-ফিল্ড রেফারি। তারপরও আর্জেন্টিনার আবেদনে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্য নিয়ে নাইজেরিয়ার পক্ষে পেনাল্টি নিশ্চিত করেন ম্যাচ পরিচালনকারী অন-ফিল্ড রেফারি। ৫১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে খেলায় ফেরান স্ট্রাইকার ভিক্টর মসেস।
গোল হজমের পর বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। শুধুমাত্র তাদের শরীরী-ভাষাতেই না চোখে মুখে লেগে ছিলো হতাশা। সেটির প্রভাব যেন এসে পড়ে মাঠের খেলায়। কারন গোল হজমের পর প্রায় ৩০ মিনিট কোন আক্রমনই নাইজেরিয়ার শিবিরে করতে পারেনি নীল-সাদা জার্সিধারি আর্জেন্টিনা। অবশ্য এসময় আরও বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে নাইজেরিয়া। ৩-৫-২ ফরম্যাটে শুরু করা নাইজেরিয়া এসময় মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের রক্ষণভাগে নামিয়ে এনে রক্ষণাত্মক হয়ে ওঠে। কেননা শেষ ষোলোতে উঠতে নাইজেরিয়ার দরকার ছিলো ১ পয়েন্ট।
প্রায় আধা ঘন্টা পর ৮০ মিনিটে প্রথম আক্রমন করে আর্জেন্টিনা। গোলের ভালো সুযোগ হাতছাড়া করেন হিগুয়েইন। আর্জেন্টিনার হয়ে গোল মিসের বদনাম গায়ে লেগে আছে তার। সেই বদনাম ঘোচানোর ভালো সুযোগই ছিলো বটে। ডান-প্রান্ত দিয়ে রোহোর ক্রস গোলপোস্টের খুব কাছে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন হিগুয়েইন। গোলমুখে শট না নিয়ে সেটি উপড়ে মারেন হিগুয়েইন।
এমন আক্রমনে উজ্জীবিত হয়ে উঠে আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত ৮৬ মিনিটে মুখে হাসি ফোটান রোহো। ডান প্রান্ত দিয়ে ক্রস করে নাইজেরিয়ার বিপদ সীমানায় বল ফেলেছিলেন রক্ষণভাগ থেকে উপরে উঠে আসা গ্যাব্রিয়েল মার্সাডো। ঐসময় নাইজেরিয়ার বক্সের পেনাল্টি স্পটের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলেন রোহো। উড়ে আসা বলটি তার পায়ে পড়তেই ডান পায়ের শটে বলকে নাইজেরিয়ার জালের স্পর্শ দেন ২৮ বছর বয়সী ডিফেন্ডার রোহো এতে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
এরপর নির্ধারিত সময়ে বাকী ৪ মিনিট ও ইনজুরি সময়ে যোগ হওয়া ৪ মিনিট ভালোভাবে পার করে দিয়ে ম্যাচ জিতে শেষ ষোলোর টিকিট হাতে নিয়েই মাঠ ছাড়ে আর্র্জেন্টিনা। কারন ততক্ষণে আর্জেন্টিনা খবর পেয়ে যায় রোস্তোভে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে বসেছে নবাগত আইসল্যান্ড। তাই আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত জয় ও আইসল্যান্ডের হারে শেষ ষোলোতে পা রাখে মেসি-ডি মারিয়া-রোহোরা।
শেষ ষোলোতে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। কারন ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ফরাসিরা। আগামী ৩০ জুন কাজানে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।