বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫

মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রম!

হেলমেট ছাড়া চলাচলকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে -এসপি জাহিদ

নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার ও জেলা ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটাকরে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তখন জেলার প্রায় অধিকাংশ পেট্রল পাম্পগুলোতে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় এ ধরনের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জেলা পুলিশকে সাধুবাদ জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু এক মাস যেতে-না যেতেই এ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ায় হতাশ এ জেলার সচেতনমহল।
মোটরসাইকেলের পেছনের আসনে চালকের স্ত্রী, সামনে বাচ্চা, চালকের মাথায় নেই হেলমেট। এ যেন আবারও সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এ ছাড়া হেলমেট ছাড়া ব্যস্ত সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে স্কুল-কলেজের উঠতি বয়সী যুবকেরা। এ তালিকায় আছেন সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। চুয়াডাঙ্গায় সাধারণ মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হেলমেট ছাড়াই চলাচল করতে দেখা গেছে অনেক পুলিশ সদস্যকেও। অথচ চুয়াডাঙ্গা জেলার মোটরসাইকেল আরোহীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গায় যোগদান করেই ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে দেখা মিলল তার বাস্তব চিত্র। ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবল, জেলা গোয়েন্দা বিভাগের এক উপপরিদর্শকসহ অনেক পুলিশ সদস্যকেই দেখা গেছে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালাতে। পুলিশ সদস্য হয়ে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিভিন্নভাবে তাঁরা এড়িয়ে যান সাংবাদিকদের প্রশ্ন। মোটরসাইকেল চালানোর সময় পুলিশ সদস্যদের মাথায়ই হেলমেট নেই, বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যারাতে শহরের রূপছায়া সিনেমা হলের সামনে দ্রুতগতির মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক পথচারী, নাইটগার্ডসহ হেলমেটবিহীন এক চালক মারাতœকভাবে জখম হোন। কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহীকে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রমের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁদের সরল জবাব, এ বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানা নেই।
চুয়াডাঙ্গা শহরের একাডেমি মোড়ের হক ফিলিং স্টেশন, সাতগাড়ী মোড়ের জোয়ার্দ্দার তেল পাম্প, মামুন ফিলিং স্টেশন, দৌলাতদিয়াড়েরর সীমান্ত পেট্রোলিয়াম, সুগন্ধা পেট্রল পাম্প, আলুকদিয়া বিশ্বাস পেট্রল পাম্পসহ বেশ কয়েকটি পেট্রল পাম্পে সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রমের বাস্তব চিত্র। হেলমেট ছাড়াই তেল কিনছেন অসংখ্য চালক। অথচ এসব পাম্পেই টাঙানো রয়েছে পুলিশের দেওয়া ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রমের ব্যানার। চালকদের হেলমেট না থাকলেও তেল দিয়ে দিচ্ছেন এসব পাম্পের কর্মচারীরা। পাম্পগুলোতে হেলমেট বাদে তেল নিতে আসা মোটরসাইকেল আরোহীদের কাছে হেলমেট ছাড়া তেল নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শোনা যায় তাঁদের একাধিক অযুহাত। কেউ বলছেন, কেবল বাড়ি থেকে আসলাম, আবার কেউ বলছেন, একটু বাজারে যাচ্ছি। আবার অনেকে ধমকের সুরেও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
সাধারণ মানুষেরা মনে করছেন, চুয়াডাঙ্গা পুলিশের ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রমের শুরুতে ট্রাফিক পুলিশসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের যে গতি ছিল, তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে ট্রাফিক পুলিশ একটু কঠোর হলেই কার্যক্রমটি গতি ফিরে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন অনেকে।
হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়ার বিষয়ে পাম্পের কর্মচারীরা বলেন, সবাইকেই বলা হচ্ছে, হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া যাবে না। অনেকেই শুনছেন, আবার অনেকেই গালি-গালাজসহ হুমকি-ধামকিও দিচ্ছেন। এ ছাড়া স্থানীয় ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িতসহ এলাকার অনেক বখাটেরাও হেলমেট ছাড়া তেল নিয়ে যায়। তাদের হেলমেটের কথা বললেই গালিগালাজসহ হুমকি দেওয়া হয় পাম্পের কর্মচারীদের।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আহসান হাবিবের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার মহাদয় গত মাসে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। কার্যক্রমটি চলমান আছে। তা ছাড়াও চালকদের হেলমেট পরার বিষয়ে অনেক ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোসহ গাড়ির কাগজপত্র ও হেলমেটবিহীন চালকদের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশ সর্বদা সজাগ আছে। একই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। চেকপোস্ট চলাকালীন সময় যাঁদের হেলমেট পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি সময়ের সমীকরণকে বলেন, যাঁরা চুয়াডাঙ্গা পুলিশের ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রম মানছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে তিনি জেলাবাসীর সহযোগিতা চেয়ে বলেন, এ জেলার মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই পেট্রল পাম্পগুলোতে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ কার্যক্রম শতভাগ সফল করতে হলে সদিচ্ছা-সহকারে চালকদেরও হেলমেট পরতে হবে। যদি পুলিশের কোনো সদস্য হেলমেট ছাড়া চলাচল করেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যত বড় ব্যক্তিই হোক, হেলমেট ছাড়া কোনো অবস্থাতেই সড়কে চলাচল করতে দেওয়া হবে না।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular