মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি: প্রবাসে আলোর গান
হায়দার আলী খান
প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল l প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা l প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০১৬ ১২৮ পৃষ্ঠা l দাম: ২৫০ টাকা।
এই প্রথম বই, যাতে একজন রাজনীতি-সচেতন বাঙালি তরুণের বয়ানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে কিংবা তার প্রতিকূলে যা কিছু ঘটেছিল, তার প্রায় অনুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে, একান্ত ঘরোয়াভঙ্গিতে। স্মৃতিকাতর লেখক হায়দার আলী খান অবশ্য যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরছেন, তেমনি থেকে থেকেই ফিরে যাচ্ছেন অনতি অতীতে। পা রাখছেন স্মৃতির ওপর ভর করে দেশের মাটিতে। জানাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ কামালের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের নিবিড়তার কথা, স্মরণ করছেন নিজের পরিবার ও পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা, তাঁর রাজনীতিমনস্ক ও সক্রিয়তাবাদী হওয়ার কথা। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের বৃত্তান্ত প্রায় সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে সেই দিনটির কথা, যেদিন শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। এসবই ফ্ল্যাশব্যাকের কথা—আমেরিকার মাটিতে বসে। কিন্তু এ বইয়ের মূল বিষয় উঠে এসেছে এখানে উদ্ধৃত এই কয়টি অধ্যায়ের মাধ্যমে। অধ্যায়গুলো হলো: ‘নিউইয়র্কের রাজপথে বাংলাদেশের মুখ’, ‘একবাল আহমদ ও আমাদের আন্দোলন’, ‘ইতিহাসের ভাঙাগড়ায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশের আন্দোলন: এক আমেরিকান কিশোরের প্রতিক্রিয়া’, ‘মার্চের নিউইয়র্ক ও আমাদের মুক্তিসংগ্রাম’, ‘মার্চের শেষ দিনটি’, ‘৩১ মার্চের একটি ছবি’, ‘মিসক্রিয়েট বনাম মুক্তিযোদ্ধা’, ‘বরফে পায়ের ছাপ: বাঙালি মধ্যবিত্তের স্বরূপ’, ‘রবার্ট হাফম্যান: আমেরিকা, পাকিস্তান ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’, ‘লেনারড বার্নস্টিন ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’, ‘অ্যালেন গিনসবার্গের সঙ্গে কয়েকটি সন্ধ্যা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে এক মার্কিন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিক্রিয়া’, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ১: রবিশঙ্কর, জর্জ হ্যারিসন ও অন্যান্য শিল্পী’ এবং ‘পল রোবসন, পিট সিগার ও জোন বায়েজ’। উপরিউক্ত শিরোনামের অধ্যায়গুলো পড়লেই বোঝা যাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর বিরোধী হলেও দেশটির সমাজের নানাস্তরে চলেছে তার অনুকূলে নানা উদ্যোগ, আয়োজন ও সমর্থনের পালা। হায়দার আলী খানকে ধন্যবাদ এমন সব তথ্য এ বইয়ে তুলে ধরার জন্য, যা এত দিন আমাদের কাছে অজানা ছিল। এ বইয়ের বাড়তি পাওনা হলো মনজুরুল হকের দীর্ঘ সুলিখিত ভূমিকা। এটি বইয়ের পাঠকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বইটি মূলত স্মৃতিচারণামূলক, তবে তা ইতিহাসেরও অঙ্গীভূত অংশ হয়ে উঠেছে।