বাংলাদেশ সবশেষ ওয়ানডে খেলেছে চলতি বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দীর্ঘ বিরতির পর আবার একদিনের ক্রিকেটে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বোলিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিল টাইগাররা। তবে নবীর অনবদ্য ইনিংসের পরও ২৩৫ রান সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মিরাজ-শান্তর ৫৫ রানের জুটিতে ভালো শুরু পায় টাইগাররা। তবে এরপর শান্ত বিদায় নিলে তাসের ঘরের মতো ভাঙতে থাকে টাইগারদের উইকেট।
দলীয় ১৩৫ থেকে ১৩৯ রানের মাঝে হারিয়ে বসে পাঁচ উইকেট। তাতে হার চোখ রাঙাতে থাকে শান্তদের। শেষ পর্যন্ত শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের ম্যাচ দিয়ে বিশ্বের প্রথম ভেন্যু হিসেবে ৩০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাইলফলক স্পর্শ করার দিনে ৩৪.৩ বলে ১৪৩ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। তাতে শারজার ঐতিহাসিক দিনে ৯২ রানের বিশাল জয়ে রাঙিয়ে রাখল আফগানরা। আর এতে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে রইল হাসমতউল্লাহ শহীদীর দল।
২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১২ রানে ৫ বলে মাত্র ৩ রান করে এ এম গজানফরের বলে আউট হন তানজিদ তামিম। এরপর ক্রিজে আসা অধিনায়ক শান্তকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন সৌম্য। শান্ত কিছুটা দেখেশুনে খেলতে থাকেন। অন্যদিকে রানের চাকা সচল রাখেন সৌম্য।
দুজনের পাল্টা আক্রমণে ব্যাকফুটে চলে যায় আফগানরা। তবে এরই মাঝে ওমরজাইকে পুল করতে গিয়ে ৩৩ রানে আউট হয়েছেন সৌম্য। এরপর ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে সেটার প্রতিদান ভালোভাবেই দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে সুইপ করতে গিয়ে তিনি ও শান্ত সাজঘরে ফেরেন। প্রথমে নবীকে ৪৭ রানে আউট হন শান্ত।
এরপর আর কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শান্তর বিদায়ের পরই মিরাজ ফেরেন ২৮ রানে। এরপর তাসের ঘরের মতো ভাঙতে থাকে টাইগারদের উইকেট। শুধু আসা যাওয়া করেছেন। ১১ রানের মাঝে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। আফগানদের হয়ে বল সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেন গজনফর।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও সিদিকুল্লাহ আতাল। ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে বেশি সুবিধা করতে পারলেন গুরবাজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তাসকিনের ফুলার লেংথে বল এগিয়ে এসে ড্রাইভ করতে যেয়ে মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। যাওয়ার আগে নামের পাশে ৫ রান যোগ করেন তিনি।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট হাতে নামেন রহমত শাহ। তাকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেবার চেষ্টা করছেন আরেক ওপেনার আতাল। গুরবাজের বিদায়ের পর ক্রিজে আসা রহমত শাহকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন অভিষিক্ত সেদিকউল্লাহ আতাল। শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন এই দুই ব্যাটার। তবে দলীয় ৩০ রানে ফের উইকেট হারায় আফগানরা। ১৩ বলে ২ রান করা রহমতকে সাজঘরে ফেরান পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
এরপর দ্রুতই আফগান শিবিরে আরও জোড়া আঘাত হানেন দ্য ফিজ।। অভিষিক্ত সেদিকউল্লাহ ও আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে আউট করেন তিনি। সেদিকউল্লাহ ২৯ বলে ২১ ও ওমরজাই রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান। আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ ও গুলবাদিন নাইব মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে দলীয় ৭১ রানে ৩২ বলে ২২ রান করে তাসকিন বলে সাজঘরে ফিরে যান নাইব।
তার বিদায়ে ফের হোঁচট খায় আফগানিস্তান। এরপর ক্রিজে আসা নবিকে সঙ্গে নিয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকেন হাশমতউল্লাহ। এই দুই ব্যাটারের ব্যাটে দেড়শোপার করে আফগানরা। একপ্রান্তে শাহিদি ধরে খেললেও শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন নবী। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুজনই অর্ধশতক পূরণ করেন। অবশ্য ফিফটির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আফগান অধিনায়ক। মুস্তাফিজের বলে ৫২ রানে বোল্ড হন এ ব্যাটার।
এরপর আফগান ব্যাটারদের কেউই আর টিকতে পারেননি। তবে একপ্রান্ত আগলে ঠিকই দলকে এগিয়ে নিয়েছেন নবী। শেষদিকে আউট হওয়ার আগে ৭৯ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এ অলরাউন্ডার। আর শেষ দিকে নাঙ্গেয়ালিয়া খারোটের ২৭ রানের ক্যামিওতে ৪৯.৩ ওভারে অলআউট হয়ে ২৩৫ রানে থামে আফগানদের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন তাসকিন ও মুস্তাফিজ।