নিউজ ডেস্ক:মাদ্রাসাছাত্র আবির হুসাইনকে মাথা কেটে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি অবশেষে উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। মাদ্রাসার এক শিক্ষকের নির্যাতনের বদলা নিতে এবং ওই শিক্ষককে ফাঁসাতে আবিরকে গলা কেটে হত্যা করে তারই কয়েকজন সহপাঠী। আলোচিত ওই হত্যাকা-ের তিন মাস পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ছাত্রদের সহায়তায় মাদ্রাসার পাশের পুকুর থেকে ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, কয়রাডাঙ্গা নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হুসাইনকে বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করে আনিসুজ্জামান, ছালিমির হোসেন ও আবু হানিফ রাতুল নামের তারই কয়েকজন সহপাঠী। আলোচিত ওই হত্যাকা-ের পর তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্ত শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর পুকুর থেকে নিহতের মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে খড়ির গাদা থেকে রক্তমাখা তোয়ালে উদ্ধার করা হলেও অনেক খোঁজাখুঁজি করে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। অবশেষে প্রায় তিনমাস পর গতকাল পুকুর থেকে ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল খালেক জানান, ঘটনার দিন এশার নামাজের সময় আবিরকে কৌশলে মাদ্রাসার পাশে একটি বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আবিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গরু কোরবানি দেওয়া ছুরি দিয়ে তার শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে হত্যাকারীরা। পরে মাথাটি তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে পুকুরপাড়ে নিয়ে গিয়ে মাথা ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি পুকুরে ফেললেও তোয়ালেটি মাদ্রাসার পাশের খড়ির গাদার নিচে লুকিয়ে রাখে তারা। ওই হত্যাকা-ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুকুর থেকে মাথা ও খড়ির গাদা থেকে তোয়ালে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে পুকুরে পানি বেশি থাকায় সে সময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে তিন মাস পর পুকুরের পানি কমে আসায় গতকাল দুপুরের দিকে ওই মাদ্রাসার ছাত্রদের সহায়তায় পুকুর থেকে ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার পাশের একটি বাগান থেকে ওই মাদ্রাসারই দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হুসাইনের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর মাদ্রাসার পাশের একটি পুকুর থেকে নিহত ওই ছাত্রের মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় মাদ্রাসাছাত্র হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মাদ্রাসার পাঁচ শিক্ষককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত মাদ্রাসারই পাঁচ ছাত্রের বিষয়ে তথ্য পায় পুলিশ। পরে এ ঘটনায় পুলিশ সদর উপজেলার হানুরবাড়াদী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে আনিসুজ্জামান, টেইপুর গ্রামের আব্দুল হাই কাতুর ছেলে ছালিমির হোসেন, আকন্দবাড়িয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আবু হানিফ রাতুল, মামুন হোসেনের ছেলে আব্দুর নুর ও বলদিয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মুনায়েম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আবির হুসাইনকে হত্যার কথা স্বীকার করে তারা। গ্রেপ্তার ছাত্রদের মধ্যে আনিসুজ্জামান, ছালিমির হোসেন ও আবু হানিফ রাতুল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ওই মামলায় বাকিরা জামিন পেলেও বর্তমানে আনিসুজ্জামান, ছালিমির হোসেন ও আবু হানিফ রাতুল জেলহাজতে আছে।