বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের সচেতন জনতা এমন অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আর কাউকেই যেতে দেবে না। জুলাই-আগস্টের গণহত্যার প্রধান নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা কীভাবে, কার সহায়তায় দেশ থেকে পালিয়ে গেলেন, সেই প্রশ্ন আমাদের তুলতে হবে। সম্প্রতি দেশের এক জাতীয় দৈনিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মাইনাস টু-এর দুরভিসন্ধি করে কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এসময় তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব এবং প্রত্যাশাসহ নানান বিষয়ে কথা বলেন।
বর্তমান সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
ইশরাক হোসেন : অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে ধ্বংসস্তূপরূপে পেয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যাশাও ছিল অনেক। এসব প্রত্যাশার আংশিক পূরণ হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় তারা আরও ভালো করতে পারত। যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ এবং যেসব ষড়যন্ত্র চলছে সেগুলো আরও ভালোভাবে প্রতিহত করা উচিত ছিল। যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে ভালো হতো। দেশের মধ্যে যারা এখনো আত্মগোপনে রয়েছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে সরকার আরও কঠোর হতে পারত। বর্তমান সরকারের মূল দায়িত্ব এখন দুটি। গণহত্যাকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। এতে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। এজন্য নির্বাচনি রোডম্যাপ জনগণের সামনে খোলাসা করতে হবে। এতে দেশ নির্বাচনি আমেজের মধ্যে ঢুকে পড়বে।
নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি উঠছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ইশরাক হোসেন : শেখ হাসিনা তো একজন অপরাধী। পালিয়ে যখন গিয়েছেন এখন তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রচেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। অথবা আগামীতে যে নির্বাচিত সরকার আসবে তাদের সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এতগুলো খুন করে কেউ পালিয়ে যাবে, এটা হতে পরে না।
সাম্প্রতিক রাজনীতিতে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে নিয়ে ‘মাইনাস টু’ প্রসঙ্গ বেশ আলোচিত। এ প্রসঙ্গে আপনি কী বলবেন?
আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য আপনি কতটা প্রস্তুত?
ইশরাক হোসেন : আমি সব সময়ই প্রস্তুত। বিএনপি একটি নির্বাচনকেন্দ্রিক, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা নির্বাচনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকি। এক সপ্তাহের নোটিসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আমাদের জন্য কঠিন বিষয় নয়।
আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, এমন দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে। আপনার মতে এই চ্যালেঞ্জটা কী?
ইশরাক হোসেন : চ্যালেঞ্জিং এই কারণে যে জনগণ এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে। বিএনপির প্রতি জনগণের যে আস্থা আছে, সেটা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ বাংলাদেশের এমন কোনো গ্রাম নাই যেখানে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনেক সময় দেখা যায়, কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। দলের বাইরে থেকেও বিভিন্ন অপশক্তি দলের ভিতর ঢুকে দলের দুর্নাম করার চেষ্টা করে থাকে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বারবার চ্যালেঞ্জের বিষয়টি তুলে ধরছেন এবং আমাদের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং বার্তা দিচ্ছেন।
৫ আগস্টের পর বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে দখল-বাণিজ্যসহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
ইশরাক হোসেন : বিভিন্নভাবে কিছু চাঁদাবাজি কম অথবা বেশি বাংলাদেশে সব আমলেই ছিল। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ চাঁদাবাজির বিষয়টিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। পেশিশক্তির ব্যবহার করে তারা একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছে। পুরো সিস্টেমটাকে নষ্ট করে ফেলেছে। ৫ আগস্ট যখন আওয়ামী লীগ হঠাৎ করে হারিয়ে গেল, তখন সেখানে একটা শূন্যতা তৈরি হয়। এই সুযোগে অনেকেই ঢুকে পড়ে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের চেয়ে এখানে সিস্টেমটাই বেশি দায়ী। আগামী সরকারগুলোকে বাজার, পরিবহন এমন আরও যেসব চাঁদাবাজির ক্ষেত্র রয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে।