ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার আওতাধীন উকড়ীর বিলে বর্ষার মৌসুমে বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ করায় পানি চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে ৫০ একর ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকেরা বাঁধ কেটে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে কৃষকদের নামে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বাঁধ অপসারণ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে উপজেলার স্বরুপপুর ইউনিয়নের কেশবপুর, কুশাডাঙ্গা, হানেফপুর, করিঞ্চা, তৈলটুপি গ্রামবাসী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
গতকাল সোমবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দত্তননগর বাজারে মেইন সড়কে বসে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।এসময় সড়কে যানচলাচলে বন্ধ হলে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিক্ষুব্ধ জনতাকে সঠিক বিচারের আশ্বস্ত করেন। এর আগে রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার দত্তননগর বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন পাঁচ গ্রামের ৪শতাধিক কৃষক।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোটচাঁদপুর এলাকার কবির হোসেন ও একটি প্রভাবশালী মহল ২২৪.২৫ একর রেকর্ডীয় বিল চাষ করার জন্য সরকারি ভাবে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন। কিন্তু ইজারাদার সাধারণ কৃষকদের প্রায় ১হাজার একর জমি ১৫/১৬ বছর ভোগ দখল করছে। সাধারণ কৃষক তাদের নিজের জমিতে চাষ করতে গেলে তাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানির ও মারপিট করে থাকেন। তাদের ক্ষমতা ও টাকার কাছে প্রশাসন এতদিন চুপ ছিলো। যা ফলে সাধারণ কৃষকেরা এতদিন তাদের জমি বুঝে পায়নি বরং বর্ষায় বিলে বাঁধ দেওয়ার কারণে মাঠের ফসলের জমিতে গলা পর্যন্ত পানি বেঁধে গেছে, যার ফলে স্বরুপ ইউনিয়নের ৫/৬ গ্রামের ৬ শতাধিক কৃষকের কৃষি ক্ষেত বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় সৃষ্টিসহ ৫০ একর জমিতে আমন ধান, রবি শস্য ফসল পানির নিচে তলিয়ে আছে। বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে ২৭জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০জন অজ্ঞত আসামি করে পুলিশদ্বারা তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, বিলে আমার ১৭ বিঘা জমি আছে, সেখানে আমার একটা পুকুর আছে পুকুর ৬/৭ বছর আগে কবির হোসেন, দত্তনগর ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ সাগর শিকদারসহ কয়েক দাড়িয়ে থেকে জাল টেনে মাছ তুলে নিয়ে আমাকে জানান বর্ষা পানিতে পুকুর ছাপিয়ে গেছে। কিন্তু তারা যে ভাবে জাল টেনে মাছ ধরে বিলে ছেড়েছে তার প্রমাণ স্বরূপ আমি ভিডিও ফুটেছ সংরক্ষণ করে রেখেছি। আজ ১৫ বছর আমার এভাবেই নির্যাতিত। আমাদের একটাই দাবি ছিলো বাঁধ কাটার,এই দাবি নিয়ে আমরা ভূমি অফিস, ইউএনও, জেলা প্রশাসক, সাবেক এমপিসহ সরকারি সকল দপ্তর গিয়েছি, আমাদের সকল কাগজ পত্র দেখাতে কেউ তা দেখেনি এর বিচার আমরাও কোথাও পায়নি। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে আমরা সকল কৃষকেরা মিলে আমাদের ফসল রক্ষার্থে বিলের বাঁধ কাটে পানি বের করে দিলে আমাদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করেন। মামলায় আমাকে আসামি করা হয়। শনিবার রাতে দত্তনগর ফাঁড়ির ইনচার্জ অচিন্ত কুমারসহ কয়েকজন পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে রাস্তায় আনেন আমার ছেড়ে দেওয়া জন্য ৫হাজার টাকা দাবি করেন।আমি টাকা দিতে না পারায় ও পা ভাঙ্গা কথা জানালে তিনি আমাকে সকালে টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে দেখা করতে বলেন।
দত্তনগর ফাঁড়ির ইনচার্জ অচিন্ত কুমার বলেন, আমরা সেদিন রাতে মেম্বারসহ একজনের বাড়ি গিয়েছি এবং তিনি পা ভাঙ্গার কথা জানান, তিনাকে রাস্তায় নিয়ে আসার পর সত্যি দেখি পা ভাঙ্গা তাকে ছেড়ে দিয়েছি।তাছাড়া তারা যে অভিযোগ দিয়েছি তা মিথ্যা। এ বিষয়ে ইজারাদার কবির হোসেনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন মনিরা জানান, বর্ষার মৌসুমে উকড়ির বিলে পানি বেড়ে গেলে কৃষকদের জমি প্লাবিত হয়ে কৃষকদের আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, কমিটির প্রতিবেদন প্রক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।