নিউজ ডেস্ক:
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন ভিসি ও প্রো-ভিসির পদ শূন্য থাকায় থমকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম।
শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানের প্রধান দুটি পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা সংক্রান্ত নানা জটিলতায় পড়েছে পাঁচটি অনুষদের ১৫টি বিভাগের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিনের চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে পদটি শূন্য রয়েছে।
প্রো-ভাইস চান্সেলর ও ট্রেজারের পদ কয়েক বছর যাবৎ শূন্য থাকায় ভিসির অবর্তমানে তার দায়িত্ব পালনে কেউ নেই। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে।
গত ১৮ জুন প্রক্টর ড. মো সিরাজুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ফলে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন, অন্যদিকে থেমে গেছে দাপ্তরিক কাজ।
ভিসি নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় পরীক্ষার ফল প্রকাশ, মূল সনদপত্র উত্তোলন, অর্থ সংক্রান্ত অনুমোদন, একাডেমিক সভা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, বিদেশ গমন, বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বেশি বিপাকে পড়েছেন শিক্ষা ও গবেষণার কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য আবেদন করা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি শেষ হলেও ক্যাম্পাস প্রাণ ফিরে পায়নি। শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন ও ভিসি না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখনো ক্যাম্পাসে আসেননি।
শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভিসি স্যারের স্বাক্ষর ব্যতিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না, এটা শিক্ষকদের জানা ছিল। তবে কেন ভিসি স্যার চলে যাওয়ার পূর্বে শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি?
শিক্ষার্থীদের অনেকে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন পরীক্ষার ফলপ্রকাশ ও মূল সনদের জন্য এসে ফিরে যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে মূল সনদসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা প্রদানে ব্যর্থ হলে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাবে। এই আশঙ্কায় বৃত্তিপ্রাপ্তরা হতাশায় ভুগছেন।
অনেক শিক্ষার্থী বলেন, তারা ইতোমধ্যে এক বছরের সেশনজটে পড়ে গেছেন। এমতাবস্থায় অতি দ্রুত পরীক্ষা যদি না শুরু হয়, তবে আবার সেশনজটে পড়তে হবে। এতগুলো শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা করে সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ভাইস চ্যান্সেলর হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। আড়াই মাস ভিসি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম স্থগিত আছে। এতে নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না এবং পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। অতিদ্রুত যদি ভিসি নিয়োগ না হয়, তরে কোনোভাবেই সেশনজট এড়াতে পারবেন না।
তারা বলেন, গত ১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংকট তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর পত্র পাঠানো হয়েছে। ১২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দ্রুত ভিসি নিয়োগের দাবিতে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি)।