নিউজ ডেস্ক:হেমন্ত এলেই দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ রঙে। এই শোভা দেখে কৃষকের মন নেচে ওঠে নতুন ফসল ঘরে ওঠার আনন্দে। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির জীবনে অগ্রহায়ণ কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আসে। নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ নানা রকম খাবারে মুখরিত হয়ে ওঠে বাঙালির প্রতিটি ঘর। নতুন ধানের পিঠা-পায়েসের ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। নতুন ধান ঘরে আসার পর শুরু হয় চালের তৈরি পিঠাপুলি খাওয়ার নবান্ন উৎসব। বাঙালির ঘরে ঘরে নবান্নের হই-চই পড়ে যায়। গাঁয়ের বঁধূদের ব্যস্ততা আর কৃষকের মুখের হাসিই বলে দিচ্ছে নবান্ন এসে গেছে। গোলা ভরা ধান হবে, আর সেই ধানের চাল থেকে তৈরি করা হবে নানা রকম পিঠা। পিঠার গন্ধে ভরে উঠবে গ্রামের বাতাস।
গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকেই চুয়াডাঙ্গার বেগমপুরের নেহালপুর গ্রামের বধূরা সেজেছিল নানা রঙের সাজে আর তৈরি করেছিল নানা রকমের পিঠা। উৎসবে মেতে উঠেছিল যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ। আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠেছিল গ্রাম আর নানা রকম পিঠার গন্ধ সুবাস ছড়িয়ে ছিল বাতাসে। পিঠার গন্ধ আর চারিদিকে উৎসবই বলে দিচ্ছিল নবান্ন এসেছে, ধান কেটে ঘরে তুলতে হবে। বাড়িতে এসেছে নতুন অতিথি আর সেই আনন্দে শামিল হতে ভুল করেননি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগর টগর, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান, ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আহসান, অধিনায়ক মেজর কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসান, তিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের নেহালপুর গ্রামের পান্তাপাড়া মাঠে দিনব্যাপী নানা উৎসবের আয়োজন করেন বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার। সকাল সাড়ে সাতটায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ফিতে কেটে নবান্ন উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর অল্প কিছুক্ষণ পর চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগর টগর নবান্ন উৎসবে যোগ দিয়ে অনুষ্ঠানকে মুখরিত করে তোলেন। তাঁতে বোনা গামছা, রাখাল টুপি (মাতাল) আর নবান্ন উৎসব লেখা সাদা টি-শার্ট উপহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের বরণ করা হয়। পরে আয়োজনস্থল পান্তাপাড়া মাঠ থেকে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি গ্রামের মেঠো পথ ঘুরে একই স্থানে এসে সমাপ্তি হয়।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে গতকাল সবাই যেন সেজেছিল নতুন সাজে। বিভিন্ন বয়সী নারীদের গড়ে তোলা ১০টি পিঠার স্টল পরিবেশকে করে তুলেছিল আনন্দঘন। স্টলে ছিল নানা রকমের সুস্বাদু পিঠা। এবার আমন্ত্রিত অতিথিদের পালা-আমন্ত্রিত অতিথিরা স্টলগুলো পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা পারভীন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসরাত জাহান ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ঢেকিতে চাল ভাঙে আর এর নের্তৃত্ব দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী। আলী আজগর টগর এমপির নের্তৃত্বে নবান্নের নতুন ধান কাটা হয় এবং গরুর লেজ উঁচিয়ে হাতে লাঠি নিয়ে মাড়ানো হয় সেই ধান। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে বসে থাকেনি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারাও। নবান্ন উৎসবে ছিল গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও ঝাঁপান খেলা। উৎসব অনুষ্ঠান পরির্দশন শেষে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হাজী আলী আজগর টগর উৎসবের আয়োজকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরে পরবর্তী প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেওয়া। আজকের এ আয়োজনই মনে করিয়ে দিবে বাংলার ঐতিহ্য এখনও হারিয়ে যায়নি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াহ্ ইয়া খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মুনিম লিংকন, জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রির সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক, সহসভাপতি মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম, নির্বাচন অফিসার তারেক আহমেমদসহ সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।