নিউজ ডেস্ক:
নবজাতক শিশুর সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখার জন্য মাতাপিতার আরো একটি বিশেষ কর্তব্য। অন্তত জন্মের সপ্তম দিবসে তার জন্য একটি শ্রুতিমধুর ও অর্থবোধক নাম রাখা উচিত। আল্লাহ্ তাআলা হজরত আদমকে (আ.) সব জিনিসের নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে হজরত আদম (আ.) আল্লাহ শিখানো জ্ঞানে সবকিছুর নাম বলে দিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত এই ঘটনা থেকে এটুকু বোঝা যায় যে, নাম জানা বা নাম রাখার বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
মানুষের জীবনের নামের অনেক প্রভাব পড়ে। তাই সন্তানের জন্য একটি সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা প্রত্যেক পিতামাতার গুরুদায়িত্ব। যাতে এ নামের প্রভাবে পরবর্তী জীবনের সন্তানের স্বভাব-চরিত্রে শুভ্রতা ফুটে উঠে। এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত সাঈদ ইব্ন মুসাইয়্যাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, তাঁর দাদা হাযন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর খিদমতে গেলে তিনি জিজ্ঞাসা করেন তোমার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম হাযন (শক্ত)। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন, না বরং তোমার নাম হওয়া উচিৎ ‘সাহল’ (সহজ সরল)। তিনি উত্তরে বললেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা আমি পরিবর্তন করব না। সাঈদ ইবন মুসাইয়্যাব (রা.) বলেন, এরপর আমাদের পরিবারের পরবর্তীকালে কঠিন অবস্থা ও পেরেশানী লেগেই থাকত। (সহিহ বুখারি, সূত্র : মিশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা-৪০৯) তাই অর্থ না জেনে নাম রাখা ঠিক নয়। এতে অর্থ বিকৃতি ও হাস্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অধিকন্তু নাম রাখার ক্ষেত্রেও অর্থ, প্রয়োগবিধি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ রাখা একান্ত প্রয়োজন। বিদেশী ভাষার অর্থ জানা, সচেতন শিক্ষিত ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে নাম রাখা বাঞ্ছনীয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে নাম রাখাও একটি নিরাপদ পন্থা।
সপ্তম দিনে শিশুর নামকরণ করা উত্তম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সামুরা ইব্ন জুন্দুব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবজাতক আকিকার সাথে সম্পৃক্ত থাকে, জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে প্রাণী জবেহ্ করবে, তার নাম রাখবে আর মাথা মু-ন করবে। (তিরমিজি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩৬; আবু দাউদ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৪)
নবজাতকের নাম রাখার সময় একটি সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা প্রত্যেক পিতামাতার অবশ্য কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে হাদিস শরীফ ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, পিতার উপর নবজাতকের হক হল তার জন্য সুন্দর নাম রাখা। (কানজুল উম্মাল, ১৬তম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪১৭)
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ্ ও আবদুর রহমান। (কানজুল উম্মাল, ১৬তম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪১৭) আল্লাহ্ তাআলা বহু গুণবাচক নাম রয়েছে। ঐ সমস্ত নামের সাথে ‘আবদ’ শব্দ যোগ করে নাম রাখা উত্তম। অনুরূপভাবে নবী-রাসূল ও ওলী-বযূর্গগণের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখাও উত্তম। অজ্ঞাতসারে বা অবহেলাবশত কোন অর্থহীন বা বিদঘুটে কোনো নাম রেখে ফেললে তা পরিবর্তন করে একটি সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা অবশ্য কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কোনো সাহাবী ইসলাম পূববর্তী যুগের রাখা এ ধরনের কোনো নাম শুনতে পেলে সাথে সাথে তা পরিবর্তন করে একটি সুন্দর অর্থবোধক ও শ্রুতিমধুর নাম রেখে দিতেন। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত জুওয়ারিয়া (রা.)-এর পূর্ব নাম ছিল ‘বাররাহ’। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে জুওয়ারিয়া রাখলেন। (মুসলিম শরিফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-২০৮)