1. [email protected] : amzad khan : amzad khan
  2. [email protected] : NilKontho : Anis Khan
  3. [email protected] : Nil Kontho : Nil Kontho
  4. [email protected] : Nilkontho : rahul raj
  5. [email protected] : NilKontho-news :
  6. [email protected] : M D samad : M D samad
  7. [email protected] : NilKontho : shamim islam
  8. [email protected] : Nil Kontho : Nil Kontho
  9. [email protected] : user 2024 : user 2024
  10. [email protected] : Hossin vi : Hossin vi
ভারতে শেখ হাসিনার ১০০ দিন : কিভাবে রয়েছেন, ভবিষ্যৎ বা কী? | Nilkontho
১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হোম জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি জেলার খবর আন্তর্জাতিক আইন ও অপরাধ খেলাধুলা বিনোদন স্বাস্থ্য তথ্য ও প্রযুক্তি লাইফষ্টাইল জানা অজানা শিক্ষা ইসলাম
শিরোনাম :
জেনেভা কনভেনশনকে শক্তিশালী করার আহ্বান পররাষ্ট্র সচিবের কোরিয়ান অভিনেতার ‘রহস্যজনক’ মৃত্যু পায়ের নিচে নূরের পাখা প্রতারণার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হারাম জীবনের লক্ষ্য অর্জনে স্বপ্ন দেখতে হবে: তরুণদের উদ্দেশ্যে ড. ইউনূস ‘আগেই ভালো ছিল’ বলার সুযোগ দিচ্ছি, এটা আমাদের ব্যর্থতা: হাসনাত মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বন্ধে পশ্চিমা বিশ্বের করণীয় কী? চুয়াডাঙ্গায় স্ত্রীকে হত্যার পর, আত্মহত্যা নাটক সাজানোর অভিযোগ বিদেশে হামলা চালানোর সক্ষমতা এখনো রাখে হিজবুল্লাহ: মার্কিন গোয়েন্দা দুই মাসে ৭ হাজার ৪২৭ অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন বাগেরহাটে বিএনপি কর্মীসহ দুজনকে কুপিয়ে হত্যা স্ত্রী-শ্যালিকাকে ভারতের যৌনপল্লিতে বিক্রি, গ্রেফতার ৪ অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে চাইলে চূড়ান্ত বিপ্লবের ডাক আসবে: আসিফ ৮ বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, সাবেক আইজিপিসহ ৩ জন ফের রিমান্ডে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে খাবার কর্মসূচি চালু হবে: উপদেষ্টা দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২২১ জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নতুন অর্থনৈতিক কাঠামোর আহ্বান সোনার কানের দুলের জন্য ১০ বছরের শিশু হত্যা মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদে বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলন। পলাশবাড়ীতে বসতবাড়ীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করায় ভোগান্তিতে কয়েকটি পরিবার।

ভারতে শেখ হাসিনার ১০০ দিন : কিভাবে রয়েছেন, ভবিষ্যৎ বা কী?

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

ভারতের রাজধানী দিল্লির কেন্দ্রস্থলকে চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে যে ইনার রিং রোড, তার ঠিক ওপরেই চারতলা বাড়িটা। ডাক বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, ঠিকানা ৫৬ রিং রোড, লাজপত নগর, দিল্লি ১১০০২৪।

শহরের দক্ষিণপ্রান্তে পাঞ্জাবি অধ্যুষিত ওই এলাকায় বাড়িটার আলাদা করে কোনো বিশেষত্ব চোখে পড়ার কারণ নেই! কিন্তু আসলে ক’জনই বা জানেন প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে শেখ হাসিনা যখন প্রথম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার ঠিকানা ছিল রিং রোডের এই ভবনটাই?

আসলে তখন ৫৬ রিং রোড ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ‘সেফ হাউজ’ বা গোপন অতিথিশালা। শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন তার মেয়েকে সপরিবার ভারতে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রথমে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল ওই বাড়িটিতেই।

পরে একাধিকবার হাতবদল হয়ে ওই ভবনটি এখন শহরের একটি ছিমছাম চারতারা হোটেলে রূপ নিয়েছে। নাম ‘হোটেল ডিপ্লোম্যাট রেসিডেন্সি’।

মজার ব্যাপার হলো, লাজপত নগরের ওই এলাকাটি এখন দিল্লির আইভিএফ চিকিৎসার প্রধান হাবে পরিণত- যার সুবাদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে হাজার হাজার নিঃসন্তান দম্পতি ওখানে আসেন এবং দিনের পর দিন ওখানকার হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে থাকেন।

কিন্তু বাংলাদেশের এই মেডিক্যাল ট্যুরিস্টদের যারা ওই বিশেষ হোটেলটিতে ওঠেন, তাদের হয়তো কারোরই জানা নেই শেখ হাসিনাও তার জীবনের ভয়াবহ সঙ্কটের মুহূর্তে ওই একই ভবনে আশ্রয় পেয়েছিলেন!

লাজপত নগরের ওই ঠিকানায় অবশ্য শেখ হাসিনা বা তার পরিবারকে খুব বেশি দিন থাকতে হয়নি।

শহরের ব্যস্ততম রাস্তার ওপর একজন গুরুত্বপূর্ণ অতিথিকে দীর্ঘ সময় রাখাটা নিরাপদ নয় বিধায় তাদের সরিয়ে নেয়া হয় দিল্লির কেন্দ্রস্থলে অভিজাত পান্ডারা রোডের একটি সরকারি ফ্ল্যাটে, যার বাইরে ঝোলানো থাকত ভিন্ন নামের নেমপ্লেট। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর সেখানেই ছিলেন তারা।

লাজপত নগরের ওই ভবনে ওঠার ঠিক ৪৯ বছর পর বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা যখন আরো একবার ভারতে আশ্রয় নিলেন- তখনও কিন্তু শহরে তার প্রথম ঠিকানায় তিনি থিতু হননি।

আসলে আজ থেকে ঠিক এক শ’ দিন আগে আগস্টের ৫ তারিখে শেখ হাসিনা যখন ভারতে পা রাখেন, দিল্লির বিশ্বাস ছিল তার এই অবস্থান একেবারেই সাময়িক। ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যাওয়ার আগে এটা একটা সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির বেশি কিছু নয়!

যেকোনো মুহূর্তে তৃতীয় কোনো দেশের উদ্দেশে তিনি রওনা হবেন- এই ধারণা থেকেই প্রথম দু-চার দিন তাকে (ও সাথে বোন শেখ রেহানাকে) রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে, যেটির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার ভারতীয় বিমান বাহিনীর।

কিন্তু চট করে শেখ হাসিনার তৃতীয় কোনো দেশে পাড়ি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর ভারত সরকার তাকে হিন্ডন থেকে সরিয়ে নেয় দিল্লির কোনো গোপন ঠিকানায়। পরে তাকে হয়তো দিল্লির কাছাকাছি অন্য কোনো সুরক্ষিত ডেরাতে সরিয়েও নেয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে ভারত সরকার আজ পর্যন্ত কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি।

কিন্তু ‘লোকেশন’ যা-ই হোক, ভারতে তার পদার্পণের এক শ’ দিনের মাথায় এসে এই প্রশ্নটা ওঠা খুব স্বাভাবিক যে এখন শেখ হাসিনাকে কিভাবে ও কী ধরনের নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে? আর সেটার পেছনে কারণটাই বা কী?

পাশাপাশি এই ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি সিচুয়েশন’ বা ভয়াবহ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তিনি স্বাধীনভাবে কতটা কী করতে পারছেন? কিংবা ‘হোস্ট কান্ট্রি’ হিসেবে ভারত কি তাকে কোনো কোনো কাজ না করারও অনুরোধ জানিয়েছে?

দিল্লিতে একাধিক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ওয়াকিবহাল মহলের সাথে কথাবার্তার সারাংশ এই প্রতিবেদনে থাকছে।

নিরাপত্তা প্রোটোকলটা ঠিক কী রকম?
সরকারি পদমর্যাদা ও নিরাপত্তাগত ঝুঁকি বিবেচনায় ভারতের ভিভিআইপিরা বিভিন্ন ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। যার মধ্যে ‘জেড প্লাস প্লাস’-কেই সর্বোচ্চ বলে ধরা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা অবশ্য সম্পূর্ণ আলাদা মানদণ্ডে আয়োজন করা হয়, ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ বা এসপিজি কমান্ডোরা সচরাচর বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সাথে সমন্বয় রেখে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলান।

যে ভিভিআইপিদের নিয়মিত প্রকাশ্যে আসতে হয়, আর যাদের লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও চলে- অবশ্যই তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার আয়োজনও হয় কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের।

তাহলে ‘অপ্রত্যাশিত অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ’ অতিথি শেখ হাসিনার জন্য ভারত এখন ঠিক কোন ধরনের নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করছে?

হুবহু এই প্রশ্নটাই করা হয় ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে, যিনি গত ১০০ দিন ধরে ভারতে শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত।

ক্ষুদে বার্তায় তিনি ছোট ছোট তিনটে বাক্যে এই প্রশ্নের যে উত্তর দিলেন, তা এরকম :

১। ‘বেয়ার মিনিমাম, প্লেইন ক্লোদস, নো প্যারাফারনেলিয়া!’
যার অর্থ হলো, যেটুকু না হলে নয় শেখ হাসিনাকে সেটুকু নিরাপত্তাই দেয়া হয়েছে, সাদা পোশাকের রক্ষীরাই তার চারপাশে ঘিরে রয়েছেন (জলপাই-রঙা উর্দির কমান্ডো বা সেনা সদস্যরা নন), আর পুরো বিষয়টার মধ্যে কোনো আতিশয্য রাখা হয়নি! মানে ঢাকঢোল পিটিয়ে বা ঘটা করে তাকে কোনো নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে না, বরং পুরো জিনিসটাকে খুব নিচু তারে বেঁধে রাখা হয়েছে।

২। ‘ইন হার কেস, সিক্রেসি ইজ দ্য সিকিওরিটি!’
সোজা কথায়, তার বেলায় গোপনীয়তাই হল নিরাপত্তা! এটারও অর্থ খুব সহজ। শেখ হাসিনার অবস্থানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষার ওপর, কারণ তিনি কোথায়, কিভাবে আছেন এটা যত গোপন রাখা সম্ভব হবে, ততই তার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা সহজ হবে।

৩। ‘মুভমেন্টস অ্যান্ড ভিজিটস- অ্যাজ লিটল অ্যাজ পসিবল!’
ফলে ওই কর্মকর্তা তার তৃতীয় বাক্যে জানাচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা তার সাথে অন্যদের দেখা করানোর ব্যবস্থা- এটাও যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার মুভমেন্টস বা ভিজিটস যে পুরোপুরি বন্ধ নয়, তার কথায় সে ইঙ্গিতও ছিল!

ওই কর্মকর্তার কথা থেকে স্পষ্ট, শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও সেটা খুব বিশেষ এক ধরনের আয়োজন- মানে ধরা যেতে পারে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা থাকে তার সাথে সেটা মাত্রায় তুলনীয় হলেও আয়োজনে একেবারেই অন্য রকম!

শেখ হাসিনাকে যেন কোনোভাবেই প্রকাশ্যে না আসতে হয়, এই প্রোটোকলে সেই চেষ্টাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

ফলে দিল্লির মর্নিং ওয়াকারদের স্বর্গ লোদি গার্ডেনে তিনি এসে মাঝেমাঝে হাঁটাহাঁটি করে যাচ্ছেন কিংবা ইচ্ছে করলে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যায় কাওয়ালি শুনে আসছেন- এই ধরনের যাবতীয় জল্পনা হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলের কর্মকর্তারা!

একইসাথে তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে, এর অর্থ হলো তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বও কিন্তু এখন ভারতেরই কাঁধে। সেখানে সামান্য কোনো ভুল হলেও তার দায় ভারতের কাঁধেই আসবে এবং সেটা দিল্লির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর হবে।

ফলে সেই নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করা যাবে না এবং তার জীবনকে সামান্যতম ঝুঁকিতেও ফেলা যাবে না। আর পাশাপাশি পুরো বিষয়টা অত্যন্ত গোপন রাখতে হবে- এগুলো বিবেচনায় নিয়েই সাজানো হয়েছে তার নিরাপত্তা প্রোটোকল!

ঘনিষ্ঠজনদের সাথে মেলামেশা?
গত ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসে নামলেন, সেদিনই সন্ধ্যায় দিল্লিতে কংগ্রেসের একদা মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখার্জি নিজের এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে একটি টুইট করেন।

তাতে তিনি লেখেন, ‘স্টে সেফ অ্যান্ড স্ট্রং, হাসিনা আন্টি। টুমরো ইজ অ্যানাদার ডে, মাই প্রেয়ার্স আর উইথ ইউ!’

শেখ হাসিনাকে ‘আন্টি’ বলে ডাকতে পারেন, দিল্লিতে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি ছাড়া এমন আর দ্বিতীয় কেউ আছেন কিনা বলা খুব মুশকিল! সেই প্রিয় আন্টিকে মনোবল শক্ত রাখার কথা বলতে তিনি কিন্তু এক মুহূর্ত দেরিও করেননি।

আসলে শর্মিষ্ঠা মুখার্জির আর একটা পরিচয় হলো, তিনি ভারতের পরলোকগত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়ে। খুব ছোটবেলায় শেখ হাসিনার পরিবারের সাথে তার যে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল, তা আজও এতটুকু ম্লান হয়নি বলেই তিনি ওই কথাগুলো সেদিন বলতে পেরেছিলেন।

পঁচাত্তরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে আশ্রয় দেয়ার পর তাদের ‘স্থানীয় অভিভাবক’ হিসেবে সবকিছু দেখাশুনোর ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন তার আস্থাভাজন বাঙালি কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির ওপর। হিন্দি ও পাঞ্জাবি ভাষাভাষীদের শহর দিল্লিতে নির্ভেজাল বাংলায় কথা বলতে পারাটাও তখন শেখ হাসিনা ও তার স্বামী-সন্তানদের জন্য ছিল বিরাট একটা ব্যাপার!

প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির সাথে নিবিড় পারিবারিক বন্ধন গড়ে উঠেছিল শেখ হাসিনার। আর শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল ও প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা ছিল প্রায় সমবয়সী, দু’টি বাচ্চা মেয়ে প্রায়ই পান্ডারা রোড থেকে হাঁটাপথের দূরত্বে ইন্ডিয়া গেটের প্রশস্ত লনে খেলতে চলে যেত!

প্রণব মুখার্জির নিজে একবার এই প্রতিবেদককে হাসতে হাসতে গল্পচ্ছলে বলেছিলেন, ‘নিজের ছেলেমেয়েদের কখনো সেভাবে সময় দিতে পারিনি, কিন্তু মিসেস গান্ধীর নির্দেশে আমি শেখ হাসিনার ছেলে-মেয়ে, জয় আর পুতুলকে নিয়ে হরিয়ানার দমদমা লেকে বোটিং পর্যন্ত করিয়েছি!’

ফলে প্রণব মুখার্জির গোটা পরিবারের সাথে শেখ হাসিনার পরিবারের সবার কেন নিবিড় আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তা বোঝা মোটেই শক্ত নয়।

বাবাকে নিয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি গত বছর ‘প্রণব মাই ফাদার’ নামে যে স্মৃতিচারণাটি লিখেছেন। তাতেও তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও দিল্লিতে হুটহাট প্রণব মুখার্জির কাছে তার ফোন আসত!

প্রণব মুখার্জি হয়তো তখন ভারতের অর্থ, প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি শেখ হাসিনাকে মনে করিয়ে দিতেন এভাবে একজন প্রধানমন্ত্রীর অন্য দেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে সরাসরি ফোন করাটা ঠিক বিধিসম্মত নয়!

শর্মিষ্ঠা মুখার্জি জানাচ্ছেন, তখনই হাসিনা তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠতেন, ‘আরে রাখেন তো আপনার প্রোটোকল! শোনেন, যে জন্য ফোন করলাম …’

ওপরের এতগুলো কথা এই জন্যই বলা যে দিল্লিতেও এমন কেউ কেউ আছেন রাজনীতি বা কূটনীতির ঊর্ধ্বে উঠে শেখ হাসিনা যাদের ‘ফ্যামিলি’ বলে ভরসা করতে পারেন।

দিল্লিতে ওই সময় বহু দিন থাকার সুবাদে তার নিজস্ব পরিচিতিরও একটা বলয় গড়ে উঠেছিল, যাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো জীবিত বা সক্রিয় আছেন।

কিংবা দিল্লিতে আজও আছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল অশোক তারার মতো কেউ, যিনি একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর সকালে ধানমন্ডিতে পাকিস্তানি সেনাদের পাহারায় থাকা শেখ হাসিনাসহ মুজিব পরিবারের সদস্যদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। আজও অশোক তারা ও তার স্ত্রী, দুজনের সাথে শেখ হাসিনার দারুণ সুসম্পর্ক!

এমনকি ঢাকাতে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, এমন অনেক সাবেক ভারতীয় কর্মকর্তার সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে শেখ হাসিনার সৌহার্দ্য আছে।

জানা গেছে, গত এক শ’ দিনের ভেতর তার পুরনো পরিচিত এই ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে কেউ কেউ শেখ হাসিনার সাথে সামনাসামনি দেখা করারও সুযোগ পেয়েছেন।

এই ধরনের ‘ভিজিটে’র সংখ্যা হাতেগোনা হতে পারে, কিন্তু ভারত সরকারও সচেতনভাবে তার ক্ষেত্রে এই ধরনের কিছু দেখা সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছে, যাতে তাদের ভিভিআইপি অতিথি মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকেন!

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কতটা অবাধ?
গত মাস তিনেকে শেখ হাসিনার সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কথিত ফোনালাপের বেশ কিছু অডিও ‘ভাইরাল’ হয়েছে। যাতে একপক্ষের কণ্ঠস্বর হুবুহু শেখ হাসিনার মতোই শোনাচ্ছে।

ভারত যদিও এই সব ‘ফাঁস’ হওয়া অডিও নিয়ে সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে একাধিক পদস্থ সূত্র একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেছেন, এগুলো বাস্তবিকই শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর!

দিল্লির নর্থ ব্লকের একজন কর্মকর্তা আবার বলছেন, ‘আমি জানি না এটা এআই দিয়ে বানানো হয়েছে নাকি শেখ হাসিনার নিজেরই গলা। তবে তার তো পরিচিতদের সাথে কথাবার্তা বলায় কোনো বিধিনিষেধ নেই। এখন কেউ যদি সেই আলাপ রেকর্ড করে লিক করে দেয়, তাতে আমাদের কী করার আছে?’

ভারতে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক আবার ধারণা করছেন, শেখ হাসিনা যাতে নিজের দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তাদের মনোবল ধরে রাখতে পারেন সে জন্য দিল্লিই এই সব কথাবার্তা হতে দিচ্ছে এবং পরে সুযোগ বুঝে তা ‘লিক’ও করে দিচ্ছে, যাতে তা যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে পৌঁছতে পারে!

এর আসল কারণটা যাই হোক, বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনা ভারতে কোনো গৃহবন্দীও নন বা রাজনৈতিক বন্দীও নন। ফলে দেশে-বিদেশে তার পরিচিতদের সাথে কথাবার্তা বলার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন।

ওই কর্মকর্তা আরো বলছিলেন, ‘ভারতে যখন কোনো রাজনৈতিক নেতা গৃহবন্দী হন, তার বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগযোগের অধিকারও কার্যত কেড়ে নেয়া হয়! যেমন ধরুন পাঁচ বছর আগে কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতিদের যখন গৃহবন্দী করা হয়, তারা কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের সাথে দেখা করা তো দূরস্থান- মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগও পাননি!’

সুতরাং শেখ হাসিনা যে ভারতে মোটেই গৃহবন্দী নন- তার প্রমাণ তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিতই কথাবার্তা বলতে পারছেন।

দিল্লিতে থাকা মেয়ে সাইমা ওয়াজেদ বা ভার্জিনিয়াতে থাকা ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথেও তার প্রায় প্রতিদিনই যোগাযোগ হচ্ছে। নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটেও তার সম্পূর্ণ অ্যাকসেস আছে।

তবে ৫ আগস্ট পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের যে নেতাকর্মীরা পালিয়ে ভারতে গেছেন, তাদের কারো কারো সাথে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হলেও এরা কেউই সশরীরে (ইনপার্সন) দলনেত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ পাননি।

আর ভারতের মাটিতে বসে শেখ হাসিনা যাতে এখনই নিজের বয়ানে কোনো প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিবৃতি না দেন, সে জন্যও তাকে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

আসলে শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে তারপর তার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উসকানি দিতে চাইছে- এটা যাতে কেউ বলতে না পারে, সে জন্যই দিল্লির এই সতর্ক অবস্থান!

আর যেহেতু শেখ হাসিনার নিজস্ব কোনো ভেরিফায়েড ফেসবুক বা এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টও নেই- ফলে এটাও দিল্লির স্বস্তির একটি কারণ, যে সেখানেও তার কোনো পোস্ট আসছে না!

কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পুনর্বাসন কি আদৌ সম্ভব? এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়টা নিয়ে দিল্লি কী ভাবছে?

ভারত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কথাও বলছে না সঙ্গত কারণেই, তবে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন, এই কাজটা শুধু কঠিন নয়। খুবই কঠিন!

তিনি বলেন ,‘এখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে, তাদের দলীয় সংগঠনও ছত্রভঙ্গ! শেখ হাসিনার বয়স আজকের চেয়ে ১০ বছর কম হলে তবু হয়তো মনে করা যেত তিনি দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।’

কিছুদিন আগে ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে শেখ হাসিনার মতো কণ্ঠস্বরে একজনকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি (বাংলাদেশের) খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে চট করে ঢকে পড়তে পারি!’

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীও হয়তো ভাবছেন, তাদের নেত্রীর দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!

তবে শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে যে দেশের আতিথেয়তায় আছেন তারা কিন্তু এখনই অতটা আগ বাড়িয়ে ভাবতে রাজি নয়!

সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ক্রিকেটের উপমা দিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, ‘পিচ এখনো প্রতিকূল, বল উল্টোপাল্টা লাফাচ্ছে। এরকম সময় চালিয়ে খেলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে! এখন বরং ধৈর্য দেখানোর সময়, ফলে প্রতিপক্ষের লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়।’

রাজনীতির উইকেটে পোড় খাওয়া ব্যাটার শেখ হাসিনাও নিশ্চয় এটা জানেন এবং সেই অনুযায়ী উপযুক্ত সুযোগ এলে তবেই সেটা কাজে লাগাবেন। ১০০ দিনের মাথায় ভারতও আপাতত এটুকুতেই তাদের ভাবনা সীমিত রাখছে

এই পোস্ট শেয়ার করুন:

এই বিভাগের আরো খবর

নামাযের সময়

সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:৫৭
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:২৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০২
  • ১১:৫২
  • ৩:৪৫
  • ৫:২৪
  • ৬:৪০
  • ৬:১৬

বিগত মাসের খবরগুলি

শুক্র শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০