করোনার বুস্টার ডোজ নিতে এসে একটি কক্ষে ঠাসাঠাসি করে দুটি লাইনে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরলেও প্রচণ্ড গরমে সবাই হাঁপিয়ে উঠছিলেন। এমন সময় চলে যায় বিদ্যুৎ। এ কারণে টিকা নিতে আসা নারী-পুরুষদের ভোগান্তি আরও বাড়ে।
রাজধানী মিরপুরের বাউনিয়াবাদ ঈদগাহ মাঠের পাশে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল। দুপুর ১২টার দিকে এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ চলে যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য ঈদগাহ মাঠের পাশে অবস্থিত কাউন্সিলরের কার্যালয়ে বুস্টার ডোজ টিকা প্রদানের কেন্দ্রে ঠিক করা হয়েছিল। কাউন্সিলরের এই কার্যালয়ের আয়তন আনুমানিক ৪০০ বর্গফুট হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের অনেকেই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে গাছের ছায়ার নিচে আশ্রয় নেন। যাঁরা ভেতরে ছিলেন, তাঁরা ঘেমেনেয়ে একাকার। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকেরাও বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন নারীরা। লাইনে দাঁড়িয়ে নারীদের টিকা কার্ড নেড়ে বাতাস পাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
এই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে একটি ছাউনির নিচে আশ্রয় নিয়েছেন হামিদুল হক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গরমে টিকতে পারছি না। সিরিয়াল দিয়ে এসেছি। একটু পরপর ভেতরে গিয়ে খবর নিয়ে আসব।’
বিদ্যুৎ না থাকলেও টিকা কার্যক্রম চলেছে। এই কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সূর্যের হাসি ক্লিনিক। প্রতিষ্ঠানটির কর্মী (ভ্যাকসিনেটর) যমুনা রায় বলেন, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার টিকা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এর আগে টিকা কার্যক্রম নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রের ভেতরে কথা হয় ক্লিনিক ম্যানেজার এন্ড্রো রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক হাজার টিকা দেওয়ার টার্গেট নিয়ে তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।
টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের টিকা কার্ড ও এনআইডি কার্ড দেখে টিকা দিচ্ছেন। দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ৫২ জন পুরুষ ও ৪৯ জন নারীকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। আজ এক হাজার ডোজ টিকা দেওয়া শেষ না হলেও কাল বাকি টিকা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রটিতে টিকা নিতে এসেছিলেন রেশমা বেগম। টিকা নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ২৫ মিনিট অপেক্ষার পর টিকা দিতে পেরেছেন। ব্যবস্থাপনা মোটামুটি ভালো বলে জানান তিনি।
বাউনিয়াবাদের এক বাসিন্দা মোস্তাকিম বলেন, তিনি ১০ মিনিটের মধ্যেই টিকা দিতে পেরেছেন।
কালশী রোডের বাসিন্দা রহিম বাদশা বলেন, প্রথম ডোজ নিতে এসে মানুষের ভিড়ের কারণে দুই দিন ফিরে গেছেন। আজ বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি।
বাউনিয়াবাদ ঈদগাহ মাঠের যে কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে, এই কেন্দ্রের আশপাশে নিম্ন আয়ের লোকদের বসবাস। কেন্দ্রটির আশপাশের এলাকার লোকজনই এখান থেকে টিকা নিচ্ছেন।
এদিকে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ায় পর ন্যূনতম চার মাস যাঁদের অতিক্রম হয়েছে, তাঁদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এই কেন্দ্রে এমন অনেক নারী-পুরুষ এসে ফিরে গেছেন, যাঁদের চার মাস সময় পার হয়নি।
তাঁদের মধ্যে এমনই একজন রাজিয়া। এই গৃহিণী গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছিলেন। চার মাস পূর্ণ না হওয়ায় তাঁকে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
সারা দেশে আজ সকাল নয়টা থেকে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বিকেল চারটা পর্যন্ত টিকা দেওয়া চলবে।
আজ ৭৫ লাখ মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর এখনো যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ নেননি, তাঁরা আজ দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন। কিন্তু বাউনিয়াবাদের এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের এক কর্মী বলেন, তাঁদের কেবল বুস্টার ডোজ দিতে সিটি করপোরেশনের থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশে ১৬ হাজার ১৮১টি কেন্দ্রে আজ টিকা দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। স্বাস্থ্য বিভাগ টিকা নিয়ে বসে আছে, বুস্টার ডোজ নিতে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান তিনি।