বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫

বেড়েই চলেছে পলিথিনের ব্যবহার !

নিউজ ডেস্ক:

দেশের পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ পলিথিনের ব্যবহার। অপচনশীল এই বস্তুটি ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। যা ড্রেন, স্যুয়ারেজে আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পলিথিন ব্যবহারের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশ পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষায় পলিথিন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০০২ সালে। ওই বছর আইন করে পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) ২০০২ নামে পরিচিত। ওই আইনে বলা হয়েছে, ‘পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা যাবে না। আইন অমান্য করে পলিথিন উৎপাদন করলে ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার করা হবে। এ ছাড়া যারা বাজারজাত করবে তাদের ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবেশ সুরক্ষায় পলিথিন বন্ধ করতে যে আইন করা হয়েছে তা কার্যকর হচ্ছে না। বাজারে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার হলেও এটি বন্ধে এ আইনের তেমন প্রয়োগ নেই।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) গবেষণায় বলা হচ্ছে শুধু ঢাকায় প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে, যা প্রতি মাসের হিসেবে দেখা যায় ৪০ কোটি পিসেরও বেশি।

ওই গবেষণায় পবা ঢাকার জলাবদ্ধতার জন্য পলিথিনকে মূখ্য কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তারা বলছে, ‘পলিথিনের ব্যাগ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়। যার ফলে ড্রেন ও সুয়ারেজ, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়, যা থেকে এমনকি ডায়রিয়া ও আমাশয় হতে পারে।

পরিবেশবিদরা বলেছেন, উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্মপ্রদাহের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করে।

সূত্র জানায়, পলিথিন তৈরির কারখানাগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। মিরপুর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, কামরাঙ্গীচর ও কেরানীগঞ্জ, টঙ্গী, গাজীপুরের বেশ কিছু কারখানা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। নামমাত্র প্যাকেজিং ব্যবসা চালালেও এর আড়ালে চলে পলিথিন উৎপাদন। এসব কারখানায় গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে পলিথিন উৎপাদন। পরে তা কায়দা করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধের আইন দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মনিটরিং না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিন এবং টিস্যু ব্যাগে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আগামী ১৫ মে থেকে সারা দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু হবে। যারা  আইন অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আগামী ১৫ মে থেকে দেশের সকল সড়কপথ, জলপথ, স্থলবন্দর, মালামাল পরিবহনকারী যানবাহন, উৎপাদনকারী, প্যাকেটজাতকারী, আমদানিকারক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। স্বরাষ্ট্র, বন ও পরিবেশ, সড়ক ও সেতু পরিবহন, নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাবের সহায়তায় এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular