বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ মহান মুক্তিযুদ্ধ। ইতিহাসের অন্যতম স্বাক্ষী বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্জন বিজয়ের মাসের অন্যতম এই দিনকে ঘিরে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠান। এরই অংশ হিসেবে উত্তরায় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজন করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির প্রধান মাহবুব আমীন মিঠু জানান আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যায় উত্তরার স্কিটি অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা এবং থিয়েটার অঙ্গনের দশম প্রযোজনা ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটক মঞ্চায়ন হবে। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। থিয়েটার অঙ্গনের দশম প্রযোজনা ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছে প্রবীর দত্ত। নাটকের প্রধান চরিত্র মুনীর চৌধুরীর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাহবুব আমিন মিঠু। আরও অভিনয় করেছেন সাবিনা আক্তার, মোঃ রাজীব আহমেদ, মোঃ জয় আক্তার সজিব, সম্বিতা রায়, জান্নাতুল ফেরদৌস রশনি, মির্জা সাইফুল ইসলাম সুমন, অক্ষয় কুমার সরকার, মোঃ আলম, সিরাজুল ইসলাম, আজিম আহমেদ সালমান ও মোঃ আবু উবায়দা। ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় আলি আহমেদ মুকুল, পোশাক পরিকল্পনায় ড. আইরিন পারভীন লোপা, আবহ সঙ্গীত শিশির রহমান, আলো শামীমুর রহমান, ভিডিও অরণ্য আলমগীর, কোরিও গ্রাফি সম্বিতা রায়, রূপসজ্জা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, সেট নির্মাণ মনির, প্রচ্ছদ নকশা শিল্পী রফিকুন নবী, প্রযোজনা অধিকর্তা মাহবুব আমিন মিঠু এবং প্রযোজনা উপদেষ্টা হলেনÑ অধ্যাপক ইমেরিটাস রফিকুল ইসলাম, ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও মঞ্চ সারথী আতাউর রহমান। ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জীবন এবং কর্মের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর বহুমাত্রিক নাট্যভাবনার নির্মাণ প্রতিফলিত হয়েছে মৌলিক নাট্যরচনায় ও বিদেশী নাটকের অনুবাদ-রূপান্তরে-যেখানে বেদনার সঙ্গে মিশ্রিত হয়েছে কৌতুক বোধ ও এর সঙ্গে সূক্ষ্ম শৈল্পিক প্রতিবাদ। দৃষ্টি উন্মোচনকারী এই নাট্যকার, প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্য সমালোচক ১৯৭১ সালে বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, আলশামসদের হাতে অন্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে নির্মমভাবে শহীদ হন। কোথাও তাঁর মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! একুশের প্রথম নাটক ‘কবর’ যাকে অমর করে রেখেছে, তারই কোন কবর নেই। তবে কি ‘কবর’ মুনীর চৌধুরীর জীবনের প্রতিচ্ছবি? মূলত নাটকীয় মুহূর্ত তৈরির মাধ্যমে মুনীর চৌধুরীর জীবনালেখ্যই প্রতিফলিত হয়েছে এ নাটকে। এদেশের নব-নাট্যান্দোলনের পথিকৃৎ মুনীর চৌধুরীর বুদ্ধিদীপ্ত প্রচেষ্টায় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় এদেশের আত্ম সচেতন ও সমাজ সচেতন নাট্যভাবনার সূত্রপাত ঘটে। অল্পকাল ব্যবধানে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর গোটা দুনিয়াব্যাপী শিল্প-সাহিত্যের উদার উঠানে, যখন চিন্তার বিলোড়ন তৈরি হয়েছে তখন বাংলাদেশেও (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান) সে প্রবণতার প্রভাব ছায়া বিস্তার করেছে অনিবার্যভাবে। শিক্ষিত-সচেতন মানুষ হিসেবে নাট্যকার মুনীর চৌধুরী বিশ্বমননে স্নাত হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় থেকেই তিনি ঝুঁকে পড়েন নাটকের শিল্প কৌশলের দিকে। তাঁর প্রথম নাটক নওজোয়ান কবিতা মজলিস রচিত হয় ১৯৪৩ সালে। তাঁর নাটকে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার নগরকেন্দ্রিক জীবনপ্রবাহ এক কর্মচাঞ্চল্যের অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পেয়েছে। আর পেশাগতভাবে শিক্ষকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় শিক্ষার্থী-অধ্যাপক-প্রক্টর-হাউসটিউটর, সাংবাদিক-উকিল-পুলিশ-ডাক্তার নেতা, রিক্সাওয়ালা দোকানদার-অভিভাবক প্রেমিক-প্রেমিকা প্রভৃতি চরিত্র তাঁর নাটকের ক্যানভাসে অতি সাবলীলতায় জায়গা করে নিয়েছে।