এন.আই.মিলন, দিনাজপুর প্রতিনিধি– দিনাজপুরের বীরগঞ্জের দারিদ্রতার কাছে মাথা নত না করে বরং দারিদ্রকে জয় করে মাথা উচু করে দাড়ানো অদম্য ইচ্ছা শক্তির অধিকারী কিশোর তরমুজ বিক্রেতা মোঃ আসিক ইসলাম এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়ে মেধাবী মুখ হিসাবে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সমাজে সবাইতো বিত্তবান হয় না। তাই বলে বসে থাকলে চলবেনা। কাজ যত ছোটই হোক মনের জোর থাকলে দারিদ্র ও সফলতা দুটোই জয় করা সম্ভব। অভারের কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি বীরগঞ্জ পৌর শহরের তাজমহল সিনেমা হলের সামনে ফুটপাতে বাবার ব্যবসায় সময় দেওয়া আর দারিদ্র জয়ের স্বপ্ন দেখা ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। অদম্য ইচ্ছা শক্তিই প্রেরণা যুগিয়েছে তার দারিদ্র জয়ের।
সব বাধা পেরিয়ে বীরগঞ্জ কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ নিয়ে, একই বিদ্যালয় থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ৪ দশমিক ২৮ পেয়ে, বীরগঞ্জ মডেল প্রাথমিক সরকারী বিদ্যালয় হতে প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট পেয়ে পাশ করেছে।।
আসিক ইসলাম বীরগঞ্জ পৌর শহরের খালপাড়া এলাকার মোঃ হাসেম আলীর পুত্র। বাবা একজন মৌসুমী ব্যবসায়ী। মা মোছাঃ আফিনা বেগম একজন আদর্শ গৃহিনী। পৌর শহরের তাজমহল সিনেমা হল মোড়ে শীতকালে ফুটপাতে ডিম বিক্রয় করে এবং অন্যান্য সময় মৌসুমী ফল বিক্রয় করে তাদের সংসার চলে। সম্পদ বলতে বসত ভিটার ৩ শতক জমি। পরিবারের ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় সে।
মোঃ আসিক ইসলাম জানান, অর্থাভাবের কারণে প্রাইভেট পড়তে না পারলেও শিক্ষকদের সহযোগিতার অভাব ছিল না। মা, বাবা দুজনের উৎসাহে তার এই সফলতা। লেখাপড়া ফাঁকে অবসর সময়ে এবং স্কুল বন্ধ থাকলে দিনভর ফুটপাতে বাবার দোকানে বসতাম।। ভবিষতে সে বিসিএস ক্যাডারের একজন বড় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চায়।
বাবা মোঃ হাসেম আলী জানান, ইচ্ছে তো অনেক। তবে ফুটপাতে বসে অর্জিত অর্থে ছেলেকে কতদুর পড়াতে পারবো জানিনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মুল্যের উর্ধগতিতে আমাদের মতো গরিবের সংসার চালানো কঠিন পড়েছে। এখন নতুন করে একটি চিন্তা যোগ হয়েছে ছেলেকে নিয়ে। কোথায় ভর্তি করাবো। তার ভর্তি এবং পড়াশুনার টাকা আসবে কোথা থেকে। পড়াশুনার পাশাপাশি দোকানে বসতো সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এখনো জানি না তার পড়াশুনা চলবে। নাকি বন্ধ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবার পক্ষ থেকে সমাজের সকলের সহযোগিতা এবং দোয়া কামনা করছেন তিনি।
কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, মোঃ আসিক ইসলাম খুব মেধাবী ছাত্র। সে কিছুটা লাজুক স্বভাবের এবং নিয়মিত ক্লাশ করতো। আমরাও তাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আগামী দিনে সে দেশ ও আমাদের সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে।