নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এই সার্ভিসের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে বিনিয়োগকারীদের ১৬ ধরনের সেবা দেবে সরকার। ফলে বিনিয়োগে হয়রানি কমবে ও সেবাপ্রাপ্তি সহজ হবে। এতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন দেশি-বিদেশি সবাই।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস আগে ছিল, কিন্তু কার্যকর ছিল না। কারণ, ওটার কোনো আইনি কাঠামো ছিল না। এখন আইনের ফ্রেমওয়ার্কে চলে আসবে। কেউ যদি ফেল করে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে। মূলত আমাদের এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে, বিনিয়োগ সেবা ফ্যাসিলেটেড করতে এ আইনটা আনা হয়েছে। যাতে বিনিয়োগে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হন।
শফিউল আলম বলেন, এটা একটা ছোট্ট প্যাকেজ আইন। এটাতে মূলত ওয়ান স্টপ সার্ভিসটা কীভাবে পরিচালিত হবে সেটার একটা আইডিয়া দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস বিনিয়োগকারীদের এক অফিস থেকে ১৬ ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করবে। যেমন: ট্রেড লাইসেন্স, জমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ ২৭টি ক্যাটাগরিতে কমনলি (সাধারণভাবে) ১৬টি সেবা দেওয়া হবে। এগুলো যেন এক জায়গায় বসে পেতে পারে সেজন্য এই আইনটি করা হচ্ছে।
সচিব জানান, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নাম ছাড়পত্র ও নিবাসী-অনিবাসী ভিসা দেবে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা দেবে বেজা বা হাইটেক পার্ক, অর্থনৈতিক রপ্তানি প্রক্রিয়া এলাকা দেবে বেপজা, ওয়ার্ক পারমিট দেবে বেজা, বেপজা বা হাইটেক পার্ক এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন, পৌরসভা দেবে ট্রেড লাইসেন্স। তা ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ করবে ভূমি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন, ভূমি ক্রয় ও লিজ রেজিস্ট্রেশন করবে রেজিস্ট্রেশন বিভাগ, নামজারি করবে ভূমি অফিস, পরিবেশগত ছাড়পত্র দেবে পরিবেশ অধিদপ্তর, নির্মাণ অনমুতি দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন দেবে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে বিদ্যুৎ বিভাগ, গ্যাস সংযোগ দেবে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। আর ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা (যেখানে যেটা প্রযোজ্য) দেবে পানি সংযোগ। টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ দেবে বিটিসিএল। আর অগ্নিনিরোধ সংক্রান্ত সেবা দেবে ফায়ার সার্ভিস।’
শফিউল আলম বলেন, এই ওয়ান স্টপ সার্ভিসে সেবা প্রদানকারী সবগুলো দপ্তরের লোকজন থাকবে। তবে কতদিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের কোন সেবা দেওয়া হবে তা বিধি দিয়ে ঠিক করা হবে। বিধি না মানলে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, বিদেশিদের জন্য ভিসা ও ইমিগ্রেশন সুবিধা প্রক্রিয়া সহজ করতে কিছু সুবিধা রাখা হয়েছে।
ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে শফিউল আলম বলেন, গ্লোবালি ডুয়িং বিজনেস ক্যাটাগরিতে ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। সরকারের পলিসি হল আগামী ৫ বছরের মধ্যে অবস্থান একশর নিচে নামিয়ে আনা। সেটা করতে গেলে বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো করতে হবে, বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে। তার জন্য একটা শর্ত ছিল ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন প্রবর্তন করা।