নিউজ ডেস্ক:
বিদআত কী এবং কেন? ‘বিদআত’ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ নতুন, অভিনব, দৃষ্টান্তবিহীন উদ্ভাবন বা আবিস্কার ইত্যাদি। বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম বিদআতের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। ইমান নববী (রহ.) বলেন, বিদআত বলা হয় এমন কার্যকলাপকে যার কোনো পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। আর শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় এমন সব নতুন বিষয়কে দ্বীনের শরয়ী বিধানে যুক্ত করা; যা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সময়কালে ছিল না।
এছাড়া মুফতি সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহ্সান (রহ.) বিদআতের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বলেন, বিদআত হলো এমন নব উদ্ভাবিত বিষয়; যা সাহাবা ও তাবিঈনের যুগেও ছিল না এবং যার উদ্ভাবন শরয়ী কোনো দলীলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লামা শাতিবী (রহ.) বলেন, প্রকৃত বিদআত তাই যার সামর্থনে শরীয়তের কোনো দলীল নেই। না আল্লাহ্র কিতাবে, না রাসুলের হাদিসে, না ইজমার কোনো দলীলে এর প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া এর স্বপক্ষে না এমন কোনো দলীল পেশ করা যায়; যা উলামায়ে কিরামের কাছে গ্রহণযোগ্য। মোটামুটিভাবে ও বিস্তারিতভাবে কোনোভাবেই বিদআতি কার্যক্রমের পক্ষে কোনো শরয়ী দলিল নয় পাওয়া যায় না। যেতেতু এর কোনো পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই, তাই একে ‘বিদআত’ বা নব আবিস্কৃত বলা হয়।
প্রকারভেদ : কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিদআতকে কিছু ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ইমাম, মুজতাহিদগণ ও বিজ্ঞ উলামা কেরাম ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিদআতকে প্রথমত ও প্রধানত দুইভাগে বিভক্ত করেছেন। ১. বিদআতে ইতেকাদী অর্থ্যাৎ আকিদা বা বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত বিদআত। ২. বিদআত আমালী অর্থাৎ কর্মগত বিদআত।
বিদআতে ইতেকাদী অর্থ্যাৎ আকিদা বা বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত বিদআত হলো- যে সকল আকীদা কুরআন ও সুন্নাহর মূলনীতির বহির্ভূত আকীদা বিশ্বাস পোষণ করা বা লালন করা। মূলত এ আকীদাগত বিদআতগুলেঅ হারামের পর্যায়ভূক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারেজী, মুতাজিলা, জাবারিয়া, কদরিয়াসহ বিভিন্ন বাতিল ফিরকার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরকার মতাদর্শ অনুযায়ী আকীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরি।
বিদআত আমালী অর্থাৎ কর্মগত বিদআত আবার দুই প্রকার। (ক) বিদআতে হাসানা বা ভালো বিদআত। (খ) বিদআতে সাইয়্যিয়াহ বা খারাপ বিদআত। বিদআতে হাসানা বা ভালো বিদআত আবার তিন প্রকার। (১) বিদআতে ওয়াজিব। (২) বিদআতে মোস্তাহাব ও (৩) বিদআতে মোবাহ। বিদআতে সাইয়্যিয়াহ বা খারাপ বিদআত আবার দুই প্রকার। (১) বিদআতে হারাম। (২) বিদআতে মাকরূহ।
বিদআতের পরিনাম : হাদিসে আরো ইরশাদ হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোনো নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। [মিশকাত শরীফ]
হজরত আয়েশা (রা.) থেকেও সহীহ বুখারীতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কেউ যদি নতুন কিছু (বিদআত) সংযোজন করে এবং তা ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয় তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী ৩য় খণ্ড, বুক ৪৯, হাদিস নং ৮৬১]
মিশকাত শরীফে আরো একটি হাদিস এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত। এছাড়া রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মে কোনো সুন্নাতুন হাসানা তথা উত্তম প্রথা বা রীতি বা কোনো নিয়ম-পদ্ধতি প্রবর্তন করেন, তিনি এর সওয়াব পান এবং যারা তারপর সে অনুযায়ী আমল করবে, তাদের সওয়াবও তিনি পেতে থাকেন; আর তাদের (পরবর্তী আমলকারীদের) সওয়াবে এতে নূন্যতম কমতি হয় না। অনুরূপ ভাবে কেউ যদি ধর্মে খারাপ কিছু সংযোজন করে আর কেউ তা অনুসরণ করে, সে ওই মন্দের জন্য দায়ী থাকবে। [সাহীহ মুসলিম : ৬৪৬৬]