নিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) লোকসান কমেছে। ২০১৫-১৬ সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৬৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ৪৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় বিজেএমসির লোকসান কমেছে ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বিজেএমসির মিলসমূহের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কর্মসম্পাদন মূল্যায়ন সভায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।গত রোববার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিজেএমসিকে আত্মনির্ভরশীল সরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মৌসুমের শুরুতেই পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, পাট ক্রয়-বিক্রয় সহজীকরণ ও এসএমএস ভিত্তিক পাট ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকরণ, কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ, পাটজাত পণ্য রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিকরণসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিজেএমসির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। বিজেএমসির দুর্নীতি নির্মূল করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বিজেএমসির আগের প্রচলিত দুর্নীতি ও অদক্ষতার অবসান ঘটেছে।
এ সম্পর্কে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বিজেএমসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য বাস্তবভিত্তিক নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিজেএমসির মিলসমূহ দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মিলগুলো চীন ও অন্যান্য দেশের সহায়তায় আধুনিকায়ন করার জন্য ইতিমধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাট থেকে অমিত সম্ভাবনাময় চারকোল, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল, পাট পাতার কোমল পানীয়, নদী ভাঙ্গন রোধে পরিবেশবান্ধব জুট জিও টেক্সটাইল, পলিথিনের বিকল্প পাটের শপিং ব্যাগ উৎপাদনের মাধ্যমে পাটখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বিজেএমসি ও পাট খাতের সুদিন ফিরে আনতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
লোকসান হ্রাস পাওয়ার কারণ হিসেবে বিজেএমসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাটক্রয় কেন্দ্রের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমানো হয়। এ অর্থবছরে পাটক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৪টি, যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেন্দ্রের পরিমাণ ছিল ১৪৭টি। প্রতি বছরের খোলাপাট ক্রয় করা হলেও গত বছর বেল আকারে গুণগতমানের পাট ক্রয় করা হয়। যাতে করে কমদামে ভালোমানের পাটক্রয় করা সম্ভব হয়েছে। এ খাতে দূর্নীতির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামুলক ব্যবহার আইন-২০১০’ এ নির্ধারিত ১৭টি পণ্য পরিবহন ও সংরক্ষণে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণভাবে পাট পণ্যে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থবছরের শুরুতে প্রত্যেকটি মিল ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এ ছাড়া আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেকটি মিলের লাভ-লোকসানের হিসাব উপস্থাপন করা হয়। এতে করে প্রত্যকটি মিলের কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা কঠোর হওয়ায় ও সার্বক্ষণিক তদারকির কারণে মোটাদাগের দুর্নীতি যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিকভাবে পাট কেনা ও পরিবহন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম, অলস মজুরি প্রদান, সক্ষমতা অনুসারে মিলের কার্যক্রম পরিচালনা না করা এবং অলস পাট ক্রয়কেন্দ্র পরিচালনা হ্রাস পেয়েছে।
ধারাবাহিক লোকসান সম্পর্কে বিজেএমসির কিছু যৌক্তিক কারণ হল, কারখানাগুলোয় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করছে; যাদের মজুরি কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত হারে প্রদান করতে হয়। বিশ্ববাজারে চাহিদা সমস্যার কারণে পাটজাত পণ্য রপ্তানি আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে বিজেএমসিকে অর্থসংকটে পড়তে হয়েছে। অর্থসংকট থাকায় সময়মতো কাঁচাপাট কেনা সম্ভব হয় না। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে বিজেএমসি ধারাবাহিক লোকসানের মুখে পড়েছে।