নিউজ ডেস্ক:
নিম্ন আদালতের বিচারকদের অবকাঠামোগত ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনলেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। এসব সমস্যাসূমহ সমাধানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আগামী বছর হবে আদালত ও জনগণের অধিকার রক্ষার বছর।
শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য ড. গোলাম মূর্তজা মজুমদার ১১ দফার অবতারণা করেন। পরে বিকালে কর্ম অধিবেশনে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজ এ কে এম তোফায়েল হাসানও বেশ কয়েক দফা সমস্যা তুলে ধরেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১. দীর্ঘ নয় বছরেও ম্যাজিস্ট্রেসীর জন্য পৃথক ভবন নির্মিত হয়নি। যথাসময়ে ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় বিচারকগণকে এখনও এজলাশ ভাগাভাগি করতে হচ্ছে, যা জনগণের দ্রুত বিচার প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করছে।
২. সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে আইন ও বিচার বিভাগ, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ বিচার প্রশাসন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগকৃত বিচারকগণ যাতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বঞ্চিত না হন, সেদিকে কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি। এরূপ কর্মকর্তাগনের জন্য ইতিপূর্বে ছয় মাসের বিচারিক অভিজ্ঞতা থাকলে পদোন্নতি দেয়ার নজির আছে এবং বর্তমানে এ বিষয়ে ফুলকোর্টের সিদ্ধান্তও রয়েছে। তৎসত্ত্বেও সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় জি.ও. জারি করা হচ্ছে না। ফলে শূন্য পদসমূহ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়েছে, যা আদৌ কাম্য নয়।
৩. বিদ্যমান বিধিতে বিচারকগণের বদলি, পদোন্নতি ও কর্মস্থল নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য পাবে মর্মে বলা আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পদোন্নতিমূলে পদায়নের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের প্রদত্ত পরামর্শ অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে জি.ও. জারি না করে অনেক বিচারককেই মাসের পর মাস পদোন্নতি হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিচারকের পদোন্নতির জি.ও. জারি না করেই জ্যেষ্ঠতার তালিকায় জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আদেশ জারি করার মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাও ঘটেছে, যা বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ভবিষ্যতে যাতে জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে কোন কর্মকর্তার পদোন্নতির জি.ও. জারি করা না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সদয় ও বিশেষ দৃষ্টি প্রার্থনা করছি।
৪. জুডিসিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ পদোন্নতি প্রাপ্ত হলেও বিদ্যমান বেতন-ভাতাদি আদেশের ১৩ অনুচ্ছেদের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদের বেতন পাচ্ছেন না। পদোন্নতির পরেও অতিরিক্ত জেলা জজগণ যুগ্ম জেলা জজের এবং যুগ্ম জেলা জজগণ সিনিয়র সহকারী জজের বেতন নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা জজগণ প্রতিমাসে কমপক্ষে ১৫,০০০/- টাকা করে বেতন কম পাচ্ছেন এবং এই মিলনায়তনে উপস্থিত বিভিন্ন স্তরের কমপক্ষে পাঁচ শত বিচারক এই বেতন বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। এমতাবস্থায়, বেতন-ভাতাদি আদেশের ১৩ অনুচ্ছেদ অবিলম্বে বাতিল করার জন্য দাবি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি ও সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
৫. মাজদার হোসেন মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৩ সালে বিচারকদেরকে মূল বেতনের ৩০% ভাতা দেয়া হয়েছিল। জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-কমিশনের প্রতিবেদনে উক্ত ভাতা বহাল রাখার সুপারিশ করা সত্ত্বেও, ২০১৬ সালের নতুন পে-স্কেলে বিচারকদেরকে এই ভাতা বর্তমান মূল বেতনের সমানুপাতে না দিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া জেলা জজদের ডমেস্টিক এইড এলাউন্সও বাদ দেয়া হয়েছে। এই সকল বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সদাশয় কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
৬. অতিরিক্ত জেলা জজগণকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গণপরিবহন বা রিকশা ব্যবহার করে বাসায় ফিরতে হয়, যা তাদের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত জেলা জজগণসহ চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারকার্য সম্পাদনকারী সকল স্তরের বিচারকগণকে সার্বক্ষণিক গাড়িসহ নিরাপত্তা দেয়া অত্যন্ত জরুরি।
৭. প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০১৪ অনুযায়ী সরকারের যুগ্ম সচিব ও ইকোনোমিক ক্যাডারের যুগ্ম প্রধান পর্যন্ত এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্মসচিব (ড্রাফটিং) হতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণকে সুদমুক্ত ২৫ লাখ টাকা বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৪৫,০০০/- করে দেয়া হয়। কিন্তু কোন পর্যায়ের বিচারককেই এই সুবিধা দেয়া হয়নি।
৮. বিচারকগণের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে জনস্বার্থে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ন্যায়, সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।