নিউজ ডেস্ক:
প্রতিবন্ধিদের জীবনমান উন্নয়নে আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে ১৫টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৯ দফা দাবির বিপরীতে মোট ছয় হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি করেছে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম।
গত সোমবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে লিখিত দাবি সম্বলিত প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বাজেট প্রস্তাবনা প্রতিবন্ধী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু সংস্থার নেতাদেরকে সঙ্গে নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
এ সময় জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি মো. রজব আলী খান নজিব, মহাসচিব ড. সেলিনা আক্তারসহ ফোরামের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীরা যাতে সমাজে সর্বোচ্চ সুযোগ পান সে বিষয়ে শুধু সরকার নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের অংশ থাকা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে খুবই সচেতন। আগামী বাজেটে ভাতার পরিবর্তে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিটি হোস্টেলে আসন সংরক্ষিত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীরা যেসব জিনিস ব্যবহার করেন সেগুলো আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক রহিত করা হবে।
মতিন খসরু বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ চাই, যাতে তারা নিজের পায়ে স্বাবলম্বী হিসাবে দাঁড়াতে পারে। আমরা কারও ভিক্ষাবৃত্তি বা করুণার উপর বাঁচতে চাই না। সম্মান ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে বাঁচতে চাই। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে এখনো আরো অনেক কিছু করার আছে। আর এ জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
ফোরামের পক্ষ থেকে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতি মাসে ৬০০ টাকা হিসেবে ৭ লাখ ৫০ হাজার অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ৫৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। একই সঙ্গে শূন্য থেকে ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত ১৫ লাখ প্রতিবন্ধীর জন্য মাসে দুই হাজার টাকা হিসেবে মোট তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ষাটোর্ধ্ব ৫ লাখ অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য মাসে তিন হাজার টাকা হিসেবে ১৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি করা হয়েছে।
বৈঠকে আগামী অর্থবছরের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দে বিশেষ সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়নে ২৪০ কোটি টাকা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে গৃহীতব্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৫০ কোটি টাকা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি খাতে বর্তমানে ৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে এটি বাড়িয়ে ১২০ কোটি টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে।
প্রতিবন্ধী ফোরাম ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেছে আর এ জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। সরকার প্রতিবন্ধিতা একটি ক্রস-কাটিং বিষয় হিসেবে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে অর্ন্তভুক্ত করেছে। স্থানীয় সরকার ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করছে। স্থানীয় সরকারের আওতায় প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য আগামী বাজেটে ২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি বিভাগ ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র জাতীয়করণ করে এই সেবা সচল রাখার দাবি জানানো হয়। আর এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ৫৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করার দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্য ৫০টি বাস আমদানির দাবি জানানো হয়। আর এ জন্য বাজেটে ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি করা হয়েছে।