নিউজ ডেস্ক:
আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার পাশাপাশি রপ্তানিতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য হবে উৎপাদন ও বিনিয়োগমুখী। রোববার চট্টগ্রামের ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চিটাগাং চেম্বার কর্তৃক নির্মিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বাজেট প্রস্তাব অত্যন্ত উন্নত মানের। চেম্বারের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখার ধারণা স্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, রপ্তানিতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা, জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ, বিনিয়োগ ও উৎপাদনমুখী বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বাজেটে সাধারণ মানুষের জীবন স্পর্শকারী পণ্য কর অব্যাহতি পাবে। আগামী পয়লা জুলাই থেকে ভ্যাট ও এসডি আইন বাস্তবায়ন অনলাইন ভিত্তিতে কার্যকর হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আইন ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হবে।
সভায় চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা, মহিলা ও ৬৫ বছরের উর্ধ্বে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা এবং প্রতিবন্ধী করদাতাদের ক্ষেত্রে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেন।
মাহবুব আলম বলেন, পাবলিকলি ট্রেডেট কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ এর পরিবর্তে ২০ শতাংশ এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কর হার ৩৫ শতাংশ এর পরিবর্তে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। তিনি রেফ্রিজারেটর অ্যাস্যাম্বলিং ইন্ডাষ্ট্রি আমদানিকৃত উপকরণের শুল্ক যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা, উৎপাদনমুখী শিল্পে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগবান্ধব এসআরও প্রণয়ন, চট্টগ্রামে গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার স্থাপনেরও প্রস্তাব দেন।
চেম্বার সভাপতি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে কর হার ৭ থেকে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে। প্রয়োজনীয় অনলাইন ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিশ্চিত করা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কর অব্যাহতি ৫০ লাখ টাকা, টার্নওভার কর নিবন্ধন সীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারন করা, মূল্য সংযোজনের হার ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ ধরে এর করের হার ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ করার সুপারিশ করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্যাকেজ ভ্যাট বিবেচনারও অনুরোধ জানান তিনি।
এ সময় মাহবুব আলম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন, লালদিয়ার চরে খালি কন্টেইনার ইয়ার্ড তৈরি করা, গ্যান্ট্রি ক্র্যানের বিকল্প হিসেবে মোবাইল হার্বার ক্র্যান সংগ্রহ করা, বন্দরে স্ক্যানার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কনভেয়র বেল্ট স্থাপনেরও দাবি জানান। এ ছাড়া বারিক বিল্ডিং হতে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ, কর্ণফুলি ব্রিজ থেকে মেরিন ড্রাইভ বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সম্প্রসারণ, চাকতাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারী বাজারকে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করতে কর্ণফুলি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালসমূহ সংস্কার, কালভার্ট নির্মাণ, স্লুইচ গেইট নির্মাণে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দেরও দাবি জানান।
চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম বলেন, শিল্পায়ন ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট ও রাজস্ব নীতি ব্যাপক কর্মসংস্থান দেশের রাজস্ব আয়, প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে। তাই বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিধারাকে আরো বেগবান করতে হবে। তিনি আগামী বাজেটে শুল্ক, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত ব্যবসায়ী সমাজের প্রস্তাবনার প্রতিফলন ঘটবে বলে প্রত্যাশা করেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, এনবিআর সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ ও এম এ মোতালেব, প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী (বাবুল), কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মাহফুজুল হক মনি, বিজিএমইএর পরিচালক কাজী মাহবুব উদ্দিন জুয়েল, বিকেএমইর প্রাক্তন পরিচালক শওকত ওসমান, ওম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি আবিদা মোস্তফা, আইসিএবির প্রাক্তন সভাপতি শওকত হোসেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান প্রমুখ।