বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, রাবি;
হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী আমরা। খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার।
শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। যখনই পিঠা-পায়েস, পুলি কিংবা নাড়ুর কথা উঠে তখনি যেন শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ও মনে ভেসে ওঠে। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা পুলির উৎসব। সেই ধারাকে অব্যাহত রেখে জমে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শৈত্যোৎসব ও পিঠা-পুলি মেলা ১৪৩১। আছে নাচ-গান-আনন্দ-উল্লাস, আবৃত্তি, বিতর্কসহ সাংস্কৃতিক আয়োজনও। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলা মাঠ প্রাঙ্গনে এ মেলা শুরু হয়।
তিন দিনব্যাপী শৈত্যোৎসব ও পিঠা-পুলি মেলা আজ শুরু হয়ে চলবে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত পর্যন্ত। ‘শীতের আমেজে পিঠার গন্ধে, বাউল মাতে মন-আনন্দে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউলিয়ানার আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ পিঠা-পুলি উৎসব।
মেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দেশী-বিদেশী প্রায় দেড় শতাধিক বাহারি পদের পিঠা নিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক স্টল বসিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পিঠার পাশাপাশি স্টলের নামগুলোর মধ্যেও রয়েছে অন্যরকম বৈচিত্র্যময়তা। স্টলগুলোর মধ্যে শশুরবাড়ি পুলির আসর, পিঠা খাবি কি না বল, হ য ব র ল, স্বপ্ন ঘুড়ি, খাই দাই পিঠা ঘর, হৃদয় হরণ পিঠা, রসমঞ্জুরী, পিঠা ওয়ালী, পিঠা মহল, সরদার মার্ট, চন্দ্রপুলি, বিহান কুঞ্জ, হাউ মাউ পিঠা খাও, রাণী পিঠা ঘর, মাসুম আলির পিঠা, শৈত্যপুলিসহ আরও বিভিন্ন বাহারি নামে স্টল নিয়ে বসেছে তারা।
স্টলগুলোতে স্থান পেয়েছে বাহারি পদের পিঠা। সেখানে রয়েছে দুধপুলি, চন্দ্র পুলি, নারকেল পুলি, খোলা চিতই, তেল পিঠা, নকশী পিঠা, মালাই বিহার, সুজির বড়া, জামাই পিঠা, পাটি সাপটা, গোলাপ ফুল, ডাবের পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, শামুক পিঠা, রুপালি পিঠা, বুটের বরফি, মোহন ভোগ, ডিম সুন্দরী, মাছের পিঠা, গাজরের হালুয়া ডিমপুরি, গোলাপ, আরশি নগর, ঝাল-মিষ্টি, হৃদয়হরণ পিঠা, সূর্যমুখী, পাকোয়ান পিঠা, রসে ভরা সবজি পিঠা, রস মলাই খিরপুলিসহ প্রায় দেড় শতাধিক পদের পিঠা শোভা পাচ্ছে স্টলগুলোতে। বাহারি পদের এসব পিঠা খেতে শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ১০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পিঠা।
কথা হয় ‘শশুরবাড়ি পুলির আসর’ স্টলের উদ্যােক্তাদের সাথে। তারা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিঠা উৎসব খুবই জমজমাট হয়ে থাকে। এখানে এসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শীতের পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি দারুণ সময় কাটান। এবছর শখের বসে বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে স্টল নিয়েছেন তারা। আনন্দের সাথে সবাই মিলে পিঠা বানানো, স্টলে বসে বিক্রি করা, সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়ে অনবদ্য সময় অতিবাহিত হচ্ছে তাদের। তবে এখানে পিঠা তৈরির খরচটা বেশিই হয় তাই দাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় দাম একটু বেশি। তবে তারা জানান পিঠা বিক্রির যে লভ্যাংশ থাকবে তার দশ শতাংশ অসহায় মানুষের সাহায্যের জন্য ব্যয় করবেন তারা।
এ মেলায় ঘুরতে আসা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী চন্দ্রনা কর্মকার বলেন, এটি একটি আনন্দমুখর আয়োজন।পিঠা উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হল বাঙালি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে উদযাপন করা, বিশেষ করে পিঠার মতো ঐতিহ্যবাহী খাবারকে তুলে ধরা। উৎসবটি শুধু পিঠার স্বাদ উপভোগ করার একটি সুযোগ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সমাবেশের মাধ্যমেও পরিণত হয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়।এছাড়া, পিঠা উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীলতা এবং ঐতিহ্যবোধকে আরও বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ধরনের আয়োজন শুধু খাদ্য সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনই নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে।
এ বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম বলেন,A festival is a joyful celebration. মানুষের জীবনে আনন্দ, বিনোদনের দরকার আছে। এই পিঠা উৎসব আমাদের সংস্কৃতির একটা অংশ।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা তাদের নিজেদের উদ্যোগে যে শৈত্যোৎসব ও পিঠাপুলি মেলা আয়োজন করেছেন তা আসলেই প্রশংসনীয়। অর্থনীতিকে গতিশীল করতে মেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই মেলাও রাখবে বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় এই শব্দদূষণ প্রভাব ফেলে কিন্তু এবারে এটি মেইন গেটের কাছাকাছি করা হয়েছে ফলে শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে এটা তেমন একটা প্রভাব ফেলছে না । কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজন সতর্ক আছে ।কনকনে শীত যেমন কষ্টদায়ক , পীড়াদায়ক তার মাঝে একটু আনন্দের উষ্ণতা নিয়ে রাবিতে যে মেলার আয়োজন চলছে তা প্রশংসার দাবি রাখে।
পিঠা-পুলি ছাড়াও বসেছে বিভিন্ন সাজ-সজ্জা সামগ্রির স্টল,নাগরদোলা ও ফুসকার দোকানও যা এটাকে শুধু পিঠা উৎসবই নয়, দিয়েছে পূর্ণাঙ্গ মেলার রুপ