নিউজ ডেস্ক:
বাঘ আসিতেছে…বাঘ আসিতেছে বলে আখতারুজ্জামান লেবু, আমাদের লেবু মামা আট ঘরের মস্ত উঠান পেরিয়ে বড় পুকুরের দিকে ছুটে যায়। তারপর কই কই যে যায় সে খবর এখন আর কেউ রাখে না। যখন ফিরে আসে তার পেট পিঠের সঙ্গে ল্যাপ্টানো। মুখখানা খটখটে, চুল উষ্কখুষ্ক; আর গভীর কালো চোখ দুটো ওই মুখের সঙ্গে একদম বেমানান। তার অমন চোখ এ গাঁয়ে কেন, আমাদের জানামতে কোনো গাঁয়েই কারও নেই।
কিন্তু ওই চোখ তুলে নির্বোধের মতো যখন তাকায় লেবু মামা, যে কারও ভাবতে কষ্ট হয় এই লেবুই কয়েক বছর আগে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে পাগলামি শুরু করে। সেই পাগলামি দিনে দিনে বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হলে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা ছাড়া আর উপায় থাকে না।
নানাজানেরা পুকুরে চুবিয়ে লেবু মামার গায়ে জ্বর বাঁধানোর চেষ্টা কম করেননি। চুবাতে চুবাতে লেবু মামার চোখ কোকিল চোখের রূপ পেলে তবে পুকুর থেকে তোলা হতো তাকে। ডাক্তার, বৈদ্য, ওঝা যে যা বলেছে, তা যত নির্মমই হোক মামার ওপর নিত্যদিন প্রয়োগ হয়েছে। শুধু পান্না খালার প্রতিরোধের মুখে একসময় বন্ধ হয় ওই নির্যাতন।
পাগল হলেও জওয়ান চাচাতো ভাইয়ের প্রতি পান্না খালার এমন দরদ নিয়ে কানে কানে কথা শুরু হয়ে যায়। নিজেদের ছেলেমেয়ে নিয়ে সেসব কথাবার্তা রুচির মাত্রা হারালে রাগে-ক্ষোভে রুদ্রমূর্তি ধরে পান্না খালা। একুশ-বাইশ বছরের এই দুর্গাকে এর আগে কি কেউ দেখেছে? কেউ কি শুনেছে—তয় বিয়া দিয়া দেন মোর লগেই লেবু ভাইরে। না হইলে চুবাইয়া চুবাইয়া মাইর্যা হালান মানুষটারে। ব্যাবাকতে মিলল্যা তামসা রচনা হরছে, পাগল সারাবে।
আর কী আশ্চর্য, একমাত্র পান্না খালার প্রশ্রয়েই লেবু মামার মাথা বুঝি একটু একটু ঠান্ডা হতে থাকে। তার নাওয়া-খাওয়া-ঘুম দেখতে দেখতে পান্না খালারও যে বেলা বয়ে যায়, রূপ ঝরে যায়। লেবু মামাকে প্রতি বেলায় মুখে তুলে শুধু খাওয়ায়ই না সে, মাথায় কবিরাজের তেল ঢেলে লাউপাতা চাপিয়ে দেয়। রোজ দুপুরে পেছনের উঠানে জলচৌকি পেতে বালতি বালতি জল ঢেলে নাইয়ে দেয়, চৌকির বিছানায় শুইয়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ঘুম পাড়ায়। মা মরা পাগল ছেলেটা এবার মায়ের আদর পাচ্ছে দেখে সোমত্ত মেয়েটার বিয়ে-থা নিয়ে কেউ কি কিছু ভাববে না আর? লেবু-পান্নাকে নিয়ে এত বড় বাড়িতে কোনোদিন কোনো উদ্বেগ ছিল কি? কোনো কথা কি ছিল? বছরের পর বছর এ নিয়ে টুঁ-শব্দটি নেই আর, রা নেই!
একদা লেবু মামার শিকল খুলে দেওয়া হলে প্রায় প্রতিদিনই ওই এক কাণ্ড তার—বাঘ আসিতেছে…
এখন সময়টা খুব খারাপ। শুনি লেবু মামার কলেজের ছেলেরা ঢাকায় চলে যায়। তারা কথা বলে। আলোচনা করে। প্রতিবাদ করে। দাবি জানানোর দলে ভিড়ে মিছিলে গুলি খেয়ে মরে। আর এই দূরগ্রামে সেই খবর যখন আসে, আমাদের কাছে রূপকথার মতো মনে হয়। একেকটা খবরের মধ্যে একেক রকম রহস্য লুকানো, একেক রকমের উদ্বেগে ঠাসা। একেক রকমের আলো-আঁধারিতে আচ্ছন্ন। পান্না খালার ঘোর আর কাটে না। শিশিরের শব্দেও কি ঘুম ভাঙে তার? নাকি রাতভর জেগে থাকে সে? বাতাসে কি কান পেতে থাকে? কেননা পান্না খালা কী না জানে!
এত দিনে একটা নাম মুখস্থ হয়ে গেছে আমাদের—শেখ মুজিব। আর একটা কথা—জয় বাংলা। পান্না খালা যখন তার বড় ভাই আমাদের ছোট মামা রুস্তমের সাত ব্যান্ডের রেডিওটার স্পিকারে কান চেপে নবটা কেবল ঘুরায় আর ঘুরায়—আমরা হাঁ হয়ে বসে থাকি। কখন ওটা ঠিকঠাক বাজবে, খবর হবে, গান হবে। খবর আসে, রুস্তম মামা কলেজ ছেড়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকায় চলে গেছে। আমার বাবা সেখানে চাকরি করেন। মামা কি তবে তার কাছে গেছে? আমরা জানি না।
আমার নানিজান দিনরাত শুধু কাঁদছেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে শুধুই কাঁদছেন আর বলছেন—মজিবররে মজিবর, শেখ লুৎফরের ব্যাডা, কাঁচা কাঁচা পোলাপানডিরে বোলাও ক্যারে, ভাই? মায়ের বুক খালি করো ক্যারে…
নানির ক্রন্দনের সেই ভাষা পুরোটা আমরা বুঝি না। মামা গেছে বলে আর একজনকে কেন দুষছেন নানি? নানাজানকেও দুষছেন, অথচ যে গেছে তাকে কিছু বলছেন না!
শীত কেটে যাচ্ছে। দাদাজান আমাকে দেখতে এসেছেন। বেয়াই-বাড়ির খোঁজখবর নিতে এসেছেন। আমার মা নেই। কিন্তু দুই পরিবারের সম্পর্কে এক ফোঁটা চিড় ধরেনি তাতে। যদিও মা মারা গেলে নানাজান তখন চেয়েছিলেন পান্না খালাকে দাদার হাতে তুলে দেবেন কিন্তু আমার বাবা রাজি হননি। কেন হননি জানি না। উল্টো নানাবাড়িতে খালার আঁচলের তলায় নানির আদরে বড় হচ্ছি।
হুঁকোয় তামাক ভরে উঠানের এক কোনায় জলচৌকি পেতে দুই বেয়াই নিচু স্বরে কথা বলছিলেন। আমি দাদুর পাশে আলতো রোদে চুপটি করে বসে পিঠা খাচ্ছি। গুরুত গুরুত করে হুঁকোতে দু-চারটা টান দিয়ে দাদু বলছেন, রুস্তমে কি আপনের জামাইর ধারেই গেছে?
না বেয়াই, আপনের ছেলে তো ওসবের মদ্যে নাই, মাতা নোয়াইয়া সরকারের চাকরি করে, কিন্তু পোলায় মোর কিসের মধ্যে যে ঢোকলে! আপনের বেয়াইনে দ্যাহেন, কী কান্দোনডাই না কানতেছে।
বাবার কথা মনে করে আমারও কান্না আসতে থাকে। লুকিয়ে লুকিয়ে চোখ মুছতে থাকি আমি। ঢাকার কোনো খবরই কেউ পায় না আর। না বাবার, না মামার। নানাজান দাদাকে আরও নিচু গলায় বলেন, বেয়াই, রুস্তমের কথা কেউরে কিছু কইতে যাইয়েন না। খুপ সাবধান। কার মদ্যে কী আছে কই ক্যামনে! দিনকাল খুপ খারাপ, বেয়াই।
এদের এইসব ভালো-খারাপের কিছু আমরা বুঝতে পারি না কিন্তু বাবার জন্য আমার পরান পোড়ায়। মায়ের কথা মনে পড়ে।
পিঠা খাওয়া হয়ে গেছে। রোদের তোড়টা আরও একটু বাড়তেই লেবু মামার সেই চিৎকার, বাঘ আসিতেছে… উঠানের মাঝ দিয়ে এক দৌড়ে হাওয়া হয়ে যায় লেবু মামা। দাদাজান খুব আফসোস করেন লেবু মামাকে নিয়ে। বলেন, বেয়াই, পোলাডারে যদি একফির খানজাহান আলীর দরগায় নেতেন। হুনছি এক ফকির আছে, হ্যায় চুবান দেয়, ত্যালপড়া দেয়, একফির চেষ্টা করতে তো দোষ নাই। বড় বেয়াইরে কন। রাজপুত্রের নাহান পোলাডা!
লেবু মামাকে আর দরগা শরিফে নেওয়া হয় না। দেশজুড়ে আকাশ কালো করা শকুনের ঝাঁক উড়ে বেড়ায়। শুনি যুদ্ধ বেধে গেছে। পান্না খালা দিনে-রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে রেডিও শোনে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শোনে। বিবিসির খবর শোনে খুব মন দিয়ে। নানাজান মাঝে মাঝে সব খবর খালার কাছ থেকে জেনে নেন। নানার উদ্বেগের শেষ নেই, তবুও খেতে-খামারে লালশাক আর সরিষার চর্যা করেন। ফলন না হলে খাবেন কী?
আমরা গোপনে খবর পাই রুস্তম মামা, বাবা যুদ্ধে গেছে। নানিজান এখন আর ইনিয়ে-বিনিয়ে কাঁদেন না। না রুস্তম মামার জন্য, না বাবার জন্য। নামাজ পড়ে মোনাজাতে বিড়বিড় করে আল্লাহর কাছে কী কী যেন বলেন।
যুদ্ধের কথা তো কেবল শুনি, কত কী-ই না শুনি। কিন্তু যুদ্ধের আলামত কিছু দেখিনি এখনো। মুক্তিযোদ্ধাও দেখিনি, পাকিস্তানি সেনাও দেখিনি, তবে আন্দাজ করি আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, আমার মামা মুক্তিযোদ্ধা। স্কুলে গিয়ে পাকসার জমিন সাদ বাদ…আর গাই না আমরা। একসময় স্কুলে যাওয়াও একেবারে বন্ধ হয়ে গেল।
দাদাজান একদিন আমাকে নিতে এলেন। দাদার সঙ্গে তাঁর বাড়িতে কত গেছি কিন্তু এবারের যাওয়াটার মতো আর কোনো দিন যাইনি। প্রায় মাইল তিনেক পায়ে হেঁটে বাগড়ির হাটে ঢুকতেই পাক সেনাদের ক্যাম্প। ক্যাম্পের গেটে খাকি পোশাকে মোটা গোঁফওয়ালা তাগড়া তাগড়া দুজন সেনা মোষের মতো রাগী চোখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মাথায় লোহার টুপি, পায়ে কালো গোবদা বুট আর হাতে অস্ত্র। ভেতরে আরও জনা দুইকে দেখা যাচ্ছে নিখুঁত তালে বিপরীতমুখী হেঁটে হেঁটে একবার পশ্চিমে যাচ্ছে, আরেকবার পুবে। অনবরত এই আসা-যাওয়ার মাঝে বারবার তারা দুজন মুখোমুখি হচ্ছে। ব্যাপারটায় আমি এতটাই আশ্চর্য হই যে দাঁড়িয়ে পড়ি। কিন্তু দাদা কোনো দিকে না তাকিয়ে হ্যাঁচকা টান মেরে আমাকে সরিয়ে নিয়ে হনহনিয়ে হাঁটা দেন। সেই প্রথম আমার পাক সেনা দর্শন। আর এক নির্মম ছবি আমার কচি অন্তরে শেলের মতো গেঁথে গেল কিছুদূর এগোনোর পর—দাদাবাড়ির পাশে জাঙ্গালিয়া নদীর ওপর বাঁশের এক বিরাট সাঁকো, সেটির মধ্যিখানে এসে।
তরতর করে বয়ে যাচ্ছে ভাটার জল। নদীর চরে দু-একটা কাদাখোঁচা পাখি পোকা খুটে খায়। আর জলের গভীর কাদায় পোঁতা বাঁশের গিঁরায় আটকে স্রোতের তোড়ে দোলে ফুলে ঢোল হয়ে ভেসে থাকা মানুষের লাশ। মেয়েগুলোর উলঙ্গ শরীর জলের ওপর উপুড় হয়ে আছে, ছেলেগুলো ভাসছে চিৎ হয়ে। ভয়ংকর ওই সাঁকো পার হয়ে এসে দাদাজানকে জাপটে ধরি আমি। থরথর করে কাঁপি। দাদা বলেন, ডরাইয়ো না ভাই, আর্মিরা অগো মাইরা গাঙে ভাসাইয়া দিছে। দাদা যত নির্বিকারভাবে এ কথা বলতে পারলেন, আমি ততোধিক ত্রাসে গুটিয়ে গিয়ে বাড়ির পথে শরীরটাকে টেনে টেনে এগোতে থাকি।
নানাবাড়িতে যেদিন ফিরে এলাম, তার প্রায় আট-দশ দিন পর লোক মারফত বাবার চিঠি এল। রুস্তম মামা ইন্ডিয়া গেছে ট্রেনিং নিতে। দেশ স্বাধীন না করে বাবাও আর ফিরবেন না বাড়িতে। চিঠি পড়তে পড়তে কী জানি কেন পান্না খালা হু হু করে কাঁদলেন। নানাজানও একদম চুপ হয়ে গেছেন। তাঁর আর ভাইয়েরাও তেমন।
আমার নানাদের মামাতো ভাইয়ের ছেলে উত্তরপাড়ার নজু মামা দলবল নিয়ে এসে হাজির হয় একদিন। তারা শান্তি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটিতে নানাদের আর তাদের ছেলেদের একসঙ্গে চায় তারা। দল ভারী করতে চায়।যুদ্ধ বেধেছে বাধুক, এলাকায় যাতে শান্তি বজায় থাকে তার জন্য সবকিছু করতে একজোট তারা।
এক অচেনা আতঙ্কের মধ্যে নানাদের দিন কাটে। তাদের মনে সন্দেহ, নজু মামারা রুস্তম মামা আর আমার বাবার খবর হয়তো জেনে থাকবে। তাই যদি হয় ওরা বিড়ালের মতো ওত পাতবে। তন্ন তন্ন করে মুক্তিযোদ্ধা খুঁজবে। যখন দেখবে এই ঝড়-ঝাপটার দিনেও কাজীবাড়িতে রুস্তম মামা নেই, আকবর মামা নেই, খালেদ মামা নেই, তখন? আর লেবু মামা? সে তো একজন পাগল।
এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে এক সপ্তাহও গেল না। সকাল দশটার দিকে দূর থেকে নারায়ণ কবিরাজের ভিটায় আগুন জ্বলতে দেখা গেল। বুড়ো কবিরাজ আর তাঁর বউ ছাড়া বাড়িতে কেউ নেই। অন্য দুই ঘরের কুটুমেরা কিছুদিন আগেই ভারতে পালিয়ে গেছে। নারায়ণ বাবুকে অনেক বলা হলেও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন ভিটে ছেড়ে তিনি যাবেন না। বলেছেন, চৌদ্দগুষ্টির গেরাম ছাইর্যা, আপনে গো ছাইর্যা যাই কই কন? সংসার যদি শ্মশান হয় তো এই শ্মশানেই পুইর্যা মরমুয়ানে।
থেমে থেমে গুলির শব্দও কানে এল। আমরা দৌড়ে বাড়ির বাইরে গিয়ে দেখি নদীর ধারঘেঁষা বড় রাস্তা দিয়ে উত্তরপাড়ার নজু মামা হনহন করে এগিয়ে আসছে। মাথার টুপি দেখে দূর থেকেই চিনতে পেরেছি নজু মামাকে। তার পেছনে তালে তালে এগিয়ে আসছে আট-দশজন পাক সেনা আর নজু মামার সাঙ্গপাঙ্গ। সেনাদের চিনতে আমার কষ্ট হয়নি, দাদার বাড়িতে যাওয়ার সময় বাগড়ির হাটের ক্যাম্পেই তো দেখেছি ওদের।
দম বন্ধ করে যে যেদিকে পেরেছি লুকিয়ে আছি। লুকোচুরি খেলতে গিয়ে গোরস্তানের এদিকটায় আমরা লুকাই। রবীন, আমি, কুতুব আর আয়েশা মামিকে নিয়ে একটা শুকনো ডোবায় কেয়াগাছের আড়ালে প্রাণ চেপে পড়ে থাকি। আমাদের নিশ্বাস আর পড়ে না, তবুও কান খাড়া করি। ডোবার ওধারে হিজলতলায় পাইত্রারার ঝোপে ডাহুক ডাকে। ওদিকে মায়ের কবরটাও দেখা যায়। প্রতিবছরই বাঁশের ফালি দিয়ে ঘিরে রাখেন নানাজান। পান্না খালার কথা মনে হয়। কোন দিকে কোথায় গেল সে, ভেবে অস্থির হই।
পাক সেনারা বাড়িতে ঢুকে সব ঘরেই হানা দেয়। যাদের পায় লাইন ধরে দাঁড় করায় উঠানে।
শুধু পান্না খালাকে ওদের দুজন ঘরে আটকে রাখে। বুকে কোরআন চেপে ধরে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপে পান্না খালা।
ক্ষুধার্ত শুয়োরের মতো পাঞ্জাবের মানুষ দুটোর চোখ লোভে চকচক করছে। তারা লোহার টুপি খুলে হাসতে হাসতে বলে, বহুত হাসিন লড়কি। মুসলমান। মালাউন আওরাত পে কোয়ি মজা নেহি।
খালা শব্দ করে সুরা পড়তে শুরু করে কিন্তু গলায় আওয়াজ আটকে যায়। মানুষ দুটো ভ্রু নাচায়, দাঁত কেলিয়ে মনের আমোদ প্রকাশ করে। ওদের সামনে দাঁড়িয়ে শরীরের রক্ত জমে যেতে থাকলে কাঁপুনি বেড়ে যায় পান্না খালার। পুরু গোঁফওয়ালা লোকটা এবার বলে, তুমে দিলভরকে সোহাগ করোঙ্গা। ঘাবড়াও মাত। হামভি একই জাত হ্যায়। মুসলমান। তুম ভি। গোদ পে আজাও লড়কি…
ওদের বলা বুঝি আর শেষ হয় না। কোন অন্ধকার থেকে ছায়ার মতো বেরিয়ে আসে লেবু মামা। কিছু আন্দাজ করে ওঠার আগেই চোখের সামনে মুহূর্তে বাঁধাকপির মতো দুটো পাক মাথা ধুলায় গড়িয়ে পড়লে মূর্ছা গিয়ে একেবারে বেহুস পান্না খালা।
গোলাগুলির আওয়াজ শুরুর আগেই দেখা যায় রক্তাক্ত দা হাতে উত্তরের ঘর থেকে বের হয়ে ঝড়ের বেগে উড়ে যাচ্ছে লেবু মামা, আর তার চির চেনা সেই চিৎকার, বাঘ আসিতেছে…বাঘ আসিতেছে…