নিউজ ডেস্ক:
ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের প্রভাবে মন্থর গতিতে চলছে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় এই বন্দরে দিন দিন কমছে যাত্রী।
আর এতে করে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। নোট বাতিলের পর রুপি হয়রানীর কবলে পড়ে ভারতগামী অনেক যাত্রীই পিছিয়ে দিচ্ছেন তাদের যাত্রার তারিখ।ভারত ঘুরে যারা দেশে ফিরছেন, তারাও বলেছেন অশেষ ভোগান্তির শিকার হওয়ার কথা। রুপি বিনিময় করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের প্রায় সবাইকে। চিকিৎসা মাঝপথে রেখে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এ পথে এমনিতে গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার লোক প্রতিদিন ভারতে যাতায়াত করে। এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে এই চেক পোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছেন ২ হাজার ১৭ জন, অক্টোবরে ২ হাজার ৩৭২ জন। নভেম্বরে যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন এক হাজার ৬৯৩ জনে। চলতি ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ পর্যন্ত যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা মাত্র ৮৮৭ জন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ৮ নভেম্বর ১০০০ ও ৫০০ রুপির নোট বাতিলের ঘোষণা দেন। জানা গেছে, আর পরই মানিচেইঞ্জার এবং রুপি ব্যবসার দালালেরা হঠাৎ বাংলাদেশি টাকার মূল্য কমিয়ে দেন। কয়েকমাস আগে বাংলাদেশি ১০০ টাকার বিপরীতে ৮৬ থেকে ৯০ টাকা দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ফলে যাত্রীদেরকে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
এদিকে ভারতীয় মূদ্রা সমস্যার কারণে বিাকে পড়েছেন এই স্থলবন্দরের আমদানি ও রফতানিকারকরা। তারা বলছেন এলসি নির্দিষ্ট পরিমাণের মালামালের চাহিদা দিয়ে এলসির মাধ্যমে টাকা পাঠানো হলেও চাহিদা মতো মালামাল পাঠাতে পারছেন না ভারতীয় রফতানিকারকরা। কারণ তারা টাকা তুলতে পারছেনা না।
ডিসেম্বরের শুরুতে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার হরিকান্ত রায় অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি গিয়েছিলেন। ভারতীয় ৫শ’ ও ১ হাজার রুপির নোট সমস্যার কথা জানলেও রুপির বিপরীতে টাকার মূল্যের এই অবস্থার কথা তিনি জানতেন না। তিনি বলেন, শিলিগুড়িতে ১০০ টাকায় তাকে কোন সময় ৬০ টাকা, কোন সময় ৬৫ টাকা দিয়েছে মানিচেইঞ্জাররা। অল্প টাকা নিয়ে যাওয়ায় টাকা শেষ হয়ে গেছে। তাই মাকে হাসপাতালেরেখেই ফিরে এসে ২/১ দিনের মধ্যে টাকার ব্যবস্থা করে আবার শিলিগুড়ি যাবেন তিনি।
রানীসংকৈল উপজেলার বাদল রায় জানান, ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন বেড়াতে। গত পূজাতেও গিয়েছিলেন। তখন ১শ’ টাকার বিপরীতে দেয়া হতো ৮৬ থেকে ৯০ টাকা। এবার তাকে দেয়া হয়েছে ৬৫ টাকা।
বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান বাবলা জানান, ভারতীয় নোটবদলের প্রভাবে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। যদিও ব্যবসায়ীরা এলসির মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন। কিন্তু এলসির মাধ্যমে টাকা দিলেও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা টাকা তুলতে পারছেন না। ফলে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের চাহিদা মতো মালামালও দিতে পারছে না। তবে এটা ডিসেম্বরের পরপরই কেটে যাবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা কানন সরকার জানান, বাংলাবান্ধায় প্রতিদিন যাত্রী বাড়ার কথা। কিন্তু কমছে। ভারত থকে ফিরে এসে যাত্রীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন ভারতীয় নোট ব্রোকাররা টাকার বিনিময়ে রুপি কম দিচ্ছেন।