নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক দুর্নীতি এখন অর্থনৈতিক অপরাধে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন নিউ ইয়র্কপ্রবাসী সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের ব্যাক্তিবর্গরা। মূল্যবোধের অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করায় এখন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলার বোধশক্তিও যেন স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। ৯ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত ’আন্তর্জাতিক দূর্নীতি বিরোধী দিবস’ উপলক্ষ্যে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজায় ইন্টারন্যাশনাল কমিটি এগেইন্সট ফিনানন্সিয়াল ক্রাইমস ইন বাংলাদেশ (আইসিএফসিএবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
উম্মুক্ত এ আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশে দূর্নীতি এখন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। দুর্নীতি এমনভাবে এখন বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। দূর্ণীতির ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিকরণের ফলে দুর্নীতি এখন বিচারব্যাবস্থা, প্রশাসন, শিক্ষাব্যবস্থাসহ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিয়ে নিজেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। এই অবস্থায় গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সুশাসন ও জবাবহিহিতা নিশ্চিতকরণ ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের ভাগ্যবরণ করতে যাচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ‘বাংলাদেশ প্লাজা’ অডিটোরিয়ামে এই আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নিউইয়র্ক সিটি অফিস অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড বাজেট-এর সাবেক চীফ ইকোনোমিস্ট ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ ইউসুফ রহমান। এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাপ্তাহিক এখনই সময়ের প্রধান সম্পাদক কাজী শামসুল হক, সিনিয়র সাংবাদিক মইনুদ্দিন নাসের, বিশিষ্ট কমিউনিটি লিডার এবং সেফেস্ট-এর প্রেসিডেন্ট মাজেদা উদ্দিন, বাংলাদেশ-আমেরিকান প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দর্পন কবির, সাপ্তাহিক ঠিকানার বার্তা সম্পাদক মিজানুর রহমান, গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক রিমন ইসলাম, ব্যারিস্টার আফতাব আহমেদ, সাপ্তাহিক আজকালের নির্বাহী সম্পাদক শওকত হোসেন রচি, সাংবাদিক বেলাল , কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মশিউর রহমান লিটন প্রমুখ ।
আলোচনা সভায় জাতিসংঘের এবছরের দূর্ণীতিবিরোধী দিবসের মুল প্রতিপাদ্য, আইসিএফসিএবিপি-এর লক্ষ্য, কর্মকান্ড ও উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশে দূর্ণীতি ও অরাজকতার সাম্প্রতিক কিছু চিত্র তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএফসিএবিপি-এর মুখপাত্র কাউসার মুমিন। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দেশে যে অবাধে বিভিন্ন পন্থায় ব্যাংক ডাকাতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও আর্থিক অরাজকতা চলছে, তার বিরুদ্ধে দেশে –প্রবাসে সকল সচেতন বাংলাদেশীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন, আইসিএফসিএবি-এর সদস্য সচিব সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী ইমরান আনসারী।
আলোচনা সভায় বক্তারা বাংলাদেশে বিভিন্নপন্থায় অবাধে ব্যাংক ডাকাতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও আর্থিক অরাজকতার বিষয় তুলে ধরে বলেন সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি বাংলাদেশে সব্যগ্রসাসী রূপ নিয়ে আবির্র্ভূত হয়েছে। দূর্নীতি সর্বস্তরে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে দেশের সকল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে বিভিন্ন দেশে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করতে প্রতিবছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ঘুষ লেনদেন হয়। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও আমলা ও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নিজেদের যোগসাজসে এই অর্থ ভোগ করছে। এই দুর্নীতির ফলে একটি দেশের অথনৈতিক উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সেইসাথে সাধারণ মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণ এই দুর্নীতির জন্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বক্তারা বাংলাদেশে সম্পর্কে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক ওয়াচডগের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, দেশে বর্তমানে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়ম চরম আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ পরপর বেশ কয়েকবছর ধরে বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দুর্নীতিকে দেশটির উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
তারা বলেন, জাতিসঙ্ঘ শুধু দুর্নীতি বোরোধী দিবস পালন করলেই হবেনা। এই দূর্ণীতি সম্পর্কে তাদের একটি নীতিমালা ও মানদন্ড থাকতে হবে। বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে দূর্ণীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সেসব দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির সুনির্দ্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বারবার বাংলাদেশের শীর্ষস্থানে অবস্থান বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশনের (এমসিসি) মূল্যায়নে বাংলাদেশ দুর্নীতিসহ ১০ সূচকে রেড জোনে অবস্থান, যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান লিগাটাম ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘প্রসপারিটি ইনডেক্স র্যাঙ্কিংস ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সার্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের এক বছরে ১১ ধাপ অবনমন ইত্যাদি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আজ শুধু আর্থিক প্রতিস্ঠানই নয়, দূনীতি দেশের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. ইউসুফ রহমান বলেন, দুর্নীতি বিশ্বের সবদেশেই আছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। কারণ বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে যে অবস্থার দিকে যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের পরিণাম ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে।