নিউজ ডেস্ক:
বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বর্হিবিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফায়জুল হক পনির আহম্মেদকে মারধরের প্রতিবাদে চিকিৎসা বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বর্হিবিভাগের সকল চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় হাসপাতালের নীচতলার পূর্ব ব্লকে চিকিৎসক মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সকল বর্হিবিভাগে চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন শত শত রোগী।
ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত স্টাফ নার্স এলিজা বেগম ও তার স্বামী মো. শাহ্ আলম ভূঁইয়াকে আটক করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আটক শাহ্ আলম ভূঁইয়া ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর উপজেলার উত্তর মুরাইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সস্ত্রীক এলিজা নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের চরের বাড়ি এলাকায় ভাড়া বসবাস করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিশু বর্হিবিভাগে রোগী দেখছিলেন ডা. ফায়জুল হক পনির আহম্মেদ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্টাফ নার্স এলিজা ও তার স্বামী শাহ্ আলম কোন টিকেট এবং সিরিয়াল ছাড়া তাদের অসুস্থ্য শিশু সন্তানকে নিয়ে ডা. ফায়জুল হক পনির আহম্মেদের কাছে যায়। ওই নার্স ডিউটিরত এবং ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না। এ সময় চিকিৎসক তার কক্ষে দুই শিশু রোগী দেখছিলেন। চিকিৎসক পনির তাদের একটু অপেক্ষা করতে এবং টিকেট কেটে পাশের কক্ষের জুনিয়র চিকিৎসককে দিয়ে ফরোয়ার্ডিং করিয়ে আনতে বলেন। এতে তারা ধৈর্য হারিয়ে অন্যান্য রোগীদের সামনে ডা. ফায়জুল হক পনিরের শার্টের কলার ধরে টানা হেঁচড়া করে তাকে মারধর করেন। আশপাশের অন্যান্য কক্ষের চিকিৎসরা গিয়ে ফায়জুল হক পনিরকে উদ্ধার করেন।
আক্রান্ত চিকিৎসক পনিরকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেও লাঞ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের মেডিসিন বর্হিবিভাগের চিকিৎসক ডা. রেজোয়ানুল আলম।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের সকল বর্হিবিভাগের চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা বন্ধ রেখে পরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। তাদের দাবির মুখে পুলিশ অভিযুক্তদের আটক করে। চিকিৎসকরা অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শিরিন সাবিহা তন্নী বলেন, একজন চিকিৎসক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় বর্হিবিভাগের সকল চিকিৎসক প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। এ কারণে আজ (সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত) বর্হিবিভাগে কোন চিকিৎসা তো দেনই-নি, উপরন্তু আগামী শনিবারের মধ্যে এই ঘটনার দৃস্টান্তমূলক শাস্তি না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. অসীম কুমার সাহা বলেন, দায়িত্বরত চিকিৎসকে লাঞ্চিত করার বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারছেন না। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত নার্সের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়, সেটি তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। সন্তোষজনক ব্যবস্থা না নিলে অভিযুক্তের বিচারের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করছেন তারা।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (উপ-পরিচালক) ডা. মো. আব্দুল কাদির বলেন, দায়িত্বরত চিকিৎসককে লাঞ্চিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত নার্স এলিজা ও তার স্বামী শাহ্ আলমকে কর্তৃপক্ষ পুলিশের সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে।
স্টাফ নার্স এলিজা নিজেকে নির্দোষ দাবী করে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ওই চিকিৎসক তখন গায়ে বাইরের হাওয়া লাগাচ্ছিলেন। হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স পরিচয় দিয়ে তিনি তার অসুস্থ সন্তানকে দেখার অনুরোধ করলেও চিকিৎসক কোন কর্ণপাত করেননি। এ কারনে তার স্বামী উত্তেজিত হয়ে যায়। এ নিয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে উভয়ে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়।
মারামারির ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন পুলিশের হাতে আটক নার্স এলিজা বেগম।