নিউজ ডেস্ক:
দেশের নৌবন্দর এবং স্থলবন্দরগুলো ব্যবসাবান্ধব করতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা বন্দর খোলা রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকর করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্দেশনা বাস্তবায়নে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর ও স্থলবন্দর সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের কার্যক্রম সমন্বয় সংক্রান্ত এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এ আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে বন্দর সংশ্লিষ্টরা ১ আগস্ট থেকে তা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন।
বৈঠকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব নজিবুর রহমান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ইউনুসুর রহমান এবং নৌ সচিব অশোক মাধব রায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রম নির্বিঘ্ন এবং নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে গত ২ জুলাই অনুষ্ঠিত সচিবদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর থেকেই সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন।
বৈঠকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ দুটি কমিটির কার্যক্রম তদারকি করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান করে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এই কমিটিকে অন্য কমিটিগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ জট এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য খালাসের জটিলতা নিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বৈঠক করেন। এ সময় নৌমন্ত্রী বন্দরগুলোর বিদ্যমান সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বৈঠকে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ জট এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, গার্মেন্টস খাত নানা প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে। রপ্তানির অন্যতম এই খাতটি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে বন্দরের জটিলতার কারণে এ সঙ্কট আরো তীব্র হচ্ছে।
তারা বলেন, পোশাক খাতের রপ্তানিতে বাংলাদেশ ১১ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ভারত, ভিয়েতনাম ৪০ শতাংশ এগিয়ে গেছে। যা বাংলাদেশের জন্য মোটেও শুভ নয়। এজন্য সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বন্দরগুলোকে সচেষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তা আরো বেগবান হয়েছে। বন্দরগুলোর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি রাজস্ব আদায় হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সময়মতো পণ্য খালাস হলে এ সমস্যা হতো না। যেভাবেই হোক বন্দর সচল রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বৈঠকে নৌমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, যারা ব্যবসা করেন তাদের পণ্য যদি যথাসময়ে রপ্তানি না হয়, তাতে আর্থিক ক্ষতি হবে। এটাই বড় নয়, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। একই সঙ্গে দেশ বৈদেশিক আয়ও হারাবে। সরকার ব্যবসায়ীদের অসুবিধার ব্যাপারে সবসময় সজাগ। আপনারা যখন যা বলেছেন, আমার মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করেছে।
তিনি আরো বলেন, আশা করছি, বেনাপোলের সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে। বেনাপোলে নতুন আটটি ইয়ার্ড তৈরির কাজ চলছে, সেগুলো শেষের পথে। আশা করছি, ইয়ার্ডের কাজ শেষ হলে সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে। বেনাপোলের রাস্তা প্রশস্ত হওয়া দরকার। এই রাস্তা দিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নত করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন রেলের জায়গাটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। রেলমন্ত্রী এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। খুব শিগগির এর কাজ শুরু হবে।