বড়াইগ্রামে নুয়ে পড়া ধান কাটতে হিমশিম

0
3

নাটোরের বড়াইগ্রামে এ বছর বোরো আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ফলনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। তবে আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও ধান ঘরে তুলতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে শ্রমিকের অভাব। শুধু তাই নয় নুইয়ে পড়া ধান কাটতে বেশি মজুরি লাগছে। বিশেষত জলাজমিতে নুইয়ে পড়া ধান কাটতে আরো বেশি মজুরি লাগছে। কারণ এসব জমির ধান কাটা অপেক্ষাকৃত কষ্টকর ও বেশি সময় সাপেক্ষ। এ কারণে সময়মতো ধান গোলায় তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, অতিবৃষ্টি, ঝড়, দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়া ধান কাটতে কৃষিশ্রমিকের আগ্রহ নেই। তারা বেশি মজুরি দাবি করছেন। কারণ এসব জমির ধান কাটা কষ্টকর এবং বেশি সময় লাগে। ফলে এসব জমির ধান কীভাবে ঘরে তুলবে, তা নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা।

শনিবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষি শ্রমিকরা অধিকাংশই সোজা ধান কাটায় ব্যস্ত রয়েছে। কৃষি শ্রমিকরা জানান, ভালো জমিতে ধান কাটতে বিঘাপ্রতি আটজন শ্রমিকের সময় লাগে ২ ঘণ্টা। এতে মজুরি পায় ৪৫০০ টাকা। সারা দিনে একজন শ্রমিক অন্তত ৩ বিঘা জমির ধান কাটতে পারেন। কেউ কেউ ৪ বিঘার ধানও কাটেন। কৃষি শ্রমিকরা আরো জানায়, জমিতে জমে থাকা পানির মধ্যে সোজা ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কারণ এতে সময় বেশি লাগে। সময় বেশি লাগার কারণে ভালো জমিতে নুয়ে পড়া ধান কাটতেও একই রকম অর্থাৎ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এতে আটজন শ্রমিকের সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। সবচেয়ে সময় বেশি সময় লাগে ও কষ্ট পেতে হয় পানি জমিতে নুয়ে পড়া ধান কাটতে। এতে প্রতি বিঘায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। মজুরি নেওয়া হয় জমির ধরন বুঝে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।

উপজেলার বনপাড়া কালিকাপুর এলাকার কৃষি শ্রমিকদের সরদার হানিফ সেখ জানান, কৃষি শ্রমিকরা আটজন করে দলবদ্ধ হয়ে ধান কাটতে চুক্তিবদ্ধ হয়। কোনো কোনো সময় চারজনের বা ছয়জনের দলও তৈরি করে ধান কাটে। সাধারণত ভালো জমির সোজা ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৪৫০০ টাকা নেওয়া হয় এবং এ মজুরি উপজেলার সব জায়গার জন্য একই। শুধু নুয়ে পড়া ধান কাটতে গিয়ে দরদাম করতে হয় কৃষকদের সঙ্গে। জমির ধরন ও ধানের অবস্থান কেমন তা দেখে বিঘাপ্রতি ধান কাটার মজুরি নির্ধারণ করা হয়। তবে ভালো জমিতে সোজা ধান কাটতেই আগ্রহ বেশি কৃষি শ্রমিকদের। ফলে শত শত হেক্টর নুয়ে পড়া পাকা ধান এখন অবদি মাঠেই পড়ে রয়েছে। সোজা ধান কাটার পর শ্রমিকরা তখন ওই ধানগুলো কাটতে আগ্রহী হবে। উপজেলার জোয়াড়ি রামাগাড়ি এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, এবার বৃষ্টি অতিমাত্রায় হওয়ায় মাঠে পানি জমেছে বেশি। সে পানি এখন পর্যন্ত শুকায়নি। অন্যদিকে ঝড় ও দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়া ধানগুলো পেকে গেলেও তা কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। দ্রুত ধানগুলো না কাটলে তা পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহদি হাসান জানান, নুয়ে পড়া ধান সোজা করতে ‘লজিং আপ’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। তবে কৃষকদের কাছে এ পদ্ধতির ধারণা বা কৌশল জ্ঞান হয়তো পুরোপুরি পৌঁছায়নি। আবার অন্যদিকে ধারণা পেলেও তা চর্চা করেনি। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আরো বলেন, এই পদ্ধতি খুবই সোজা এবং সহজ। চার-পাঁচটা ধানের গোছা একসঙ্গে করে পাতা দিয়ে বেঁধে দিলেই তা দাঁড়িয়ে যায়। আর বাতাসে হেলে বা নুয়ে পরে না। এই পদ্ধতি সহজ হলেও কৃষকরা তা না করার কারণে অতি বৃষ্টি বা ঝড়ে বা অতি বাতাসে ধানগুলো নুয়ে পড়ে। পরে এই নুয়ে পড়া ধান কাটতে মজুরিতে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।

অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মারফুদুল হক জানান, এবার উপজেলার ১৬ হাজার ২৪০ হেক্টর পরিমাণ জমিতে বোরো আমন চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ২৬ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে ৩-৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবন্ধকতা না থাকলে এবার বারো আমনের উদপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশের অধিক ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি অফিস। তিনি আরো জানান, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যেন সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমন ধান ঘরে তুলতে পারে।