রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

বগুড়ায় প্রত্নসামগ্রী হস্তান্তর করলেন অধ্যাপক মান্নান !

নিউজ ডেস্ক:

টানা ৪২ বছর ধরে মাঠ-ঘাট গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে সংগ্রহ করা প্রত্নসামগ্রী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর করলেন বগুড়ার প্রত্ন নিদর্শন সংগ্রাহক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। গত শনিবার বিকেলে বগুড়ার মহাস্থানগড় জাদুঘর চত্বরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেনের কাছে বিপুল পরিমাণ প্রত্নসামগ্রী তিনি হস্তান্তর করেন।

মহাস্থানগড় তথা পুণ্ড্রনগরীর কোলঘেঁষা গ্রামে বেড়ে ওঠা আব্দুল মান্নান শৈশব থেকেই আগ্রহী পুরাকীর্তি ও প্রত্নসামগ্রীর প্রতি। জন্মস্থান ঐতিহাসিক পুণ্ড্রনগরীতে হওয়ায় তার সেই ভালোবাসা আরও শক্ত হয় শিক্ষাজীবন থেকে। একসময় তিনি ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি ইতিহাস গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেন। ‘ইতিকথা পুণ্ড্রবর্ধন’ নামে সেই ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করতে গিয়ে চষে বেড়ান পুরো মহাস্থানগড় ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। সেই সময়েই তার নজরে আসে অনেক প্রত্নসামগ্রী নানাস্থানে নানাজনের কাছে অনাদরে পড়ে আছে। তিনি সেই গ্রন্থের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি অনাদরে পড়ে থাকা প্রত্নবস্তুও সংগ্রহ শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে তার সংগ্রহ শুরু হয় টানা ৪২ বছর ধরে তিনি সেসব সংগ্রহ করে নিজ হেফাজতে রাখেন। পুঁতির দানা থেকে প্রাচীন আমলের পণ্যবিনিময়ে ব্যবহূত কড়ি, মৃত্সামগ্রী থেকে শুরু করে তামা, পিতল ও ব্রোঞ্জের তৈজসপত্র, খাট-পালঙ্ক, দরজা-কপাট এসব সামগ্রী সংগ্রহ করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন সকলকে। একসময় তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে একটি জাদুঘর করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এজন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেন অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে সেই অনুমোদন সম্ভব নয় বলে তাকে জানানো হলে তিনি সংগৃহীত সামগ্রী প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেন। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন বগুড়ায় এসে ওই সামগ্রীগুলো তার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা, মহাস্থান জাদুঘরের রক্ষক মজিবর রহমান, বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি ইসলাম রফিক, কবি শিবলী মোকতাদির, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিইউজে) সাধারণ সম্পাদক জেএম রউফ প্রমুখ।

যেসব সামগ্রী হস্তান্তর করলেন

শনিবার ২ হাজার ৬ শতের অধিক প্রত্নসামগ্রী তিনি অধিদপ্তরে হস্তান্তরও করেন। এরমধ্যে পোড়ামাটির অলঙ্কৃত ইট, পোড়ামাটির ঢাকনা, ঢাকনাসহ পাতিল ও বাটি, লাল ও কালো রংয়ের কলসি, ব্রোঞ্জের বাটি, খাড়ুয়া, বালা, লকেট, গলার হার, চুলের কাঁটা, কোমড়ের বিছা, আলাদিনের প্রদীপ সদৃশ পাত্র, লোহার মসলা বাটার পাত্র, কাচের মূর্তি, পাখির প্রতিকৃতির, হুক্কা, ছোট হাস্যবদন বুদ্ধমূর্তি, সাদা পাথরের বঁটি, পিতলের বাটি, থালা ও কুপি, ঘটি, জলদানি, নলযুক্ত পোড়ামাটির পাত্র, রুপার মুদ্রা, তামার মুদ্রা, কড়ির মালা, হাড়ের তৈরি নরমুণ্ড মালা, কাঠের মালা, সোনার প্রলেপযুক্ত কয়েন, ফারসি তাম্রলিপি, পোড়ামাটির সিল মোহর, প্রাচীন আমলের দরজা ও পালঙ্ক উল্লেখযোগ্য।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয়াব্দ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসনামল পর্যন্ত নানা সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। তাঁর সংগৃহীত অধিকাংশ সামগ্রীই অত্যন্ত মূল্যবান।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular