কয়েক বছর আগে বগুড়া বিমানবন্দর চালুর সম্ভাবতা যাচাই শেষে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদল প্রতিবেদনও দিয়েছেন। তারপরও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বগুড়া বিমানবন্দর চালুর ‘সবুজ সংকেত’ বন্দি হয়ে আছে লাল ফাইলে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দুই যুগ পরেও আলোর মুখ দেখেনি বিমানবন্দর। তবে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আশার আলো দেখছে বগুড়াবাসী। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিমানবন্দর চালু হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি, যোগাযোগে উন্মোচিত হবে নবদিগন্ত। শিল্পনগরীখ্যাত বগুড়ায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, পাশাপাশি স্বল্প সময়ে যাতায়াত এবং উৎপাদিত পণ্য সহজে পৌঁছে যাবে দেশে-বিদেশে।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকার আমলে বগুড়া বিমানবন্দর স্থাপনে ২২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পাশে ১০৯ দশমিক ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তা নির্মাণসহ সব অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। ২০০০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও নানা কারণে শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে বগুড়ার আকাশে বিমান ডানা মেলেনি। বর্তমানে সেখানে চলছে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ স্কুলের কার্যক্রম। শিল্পোদ্যোক্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিমানবন্দর চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।
এদিকে প্রতি বছর কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় আসেন। বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানগড়সহ দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শতাধিক শিল্প-কারখানা। থাকা ও খাওয়ার সুবিধাসহ বগুড়ায় চার ও পাঁচ তারকা মানের হোটেল রয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর পরিদর্শন করে চালুর বিষয়ে প্রতিবেদনও দেন। সদর দপ্তরের প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক (সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) বেগম ইসরাত জাহান পান্নার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছিলেন। বেবিচক প্রতিনিধিদল পরিদর্শনের পর আবারও আশার আলো দেখেছিল বগুড়াবাসী। তবে সে আশার গুড়েবালি ঢেলে দেয় পরবর্তী সরকার। আবারও হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে বগুড়ার মানুষ।
বিভিন্ন সময়ে দাবি জানালেও শুধু রাজনৈতিকভাবে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার হয়ে আলোর মুখ দেখেনি বিমানবন্দর। এখন পটপরিবর্তনে বঞ্চিত বগুড়াবাসী আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন। বিমানবন্দর চালু হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়া সব দিক থেকেই বৈপ্লবিক পরিবতন হবে বলে আশা বগুড়াবাসীর।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দর চালু হলে আন্তর্জাতিক ম্যাচসহ ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে বগুড়া। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিমান বন্দর খুব জরুরি। সেক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে থাকে তা দূর করে বিমানবন্দর চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক রাজেদুর রহমান রাজু বলেন, ফাউন্ড্রি শিল্পে সারা দেশের মধ্যে বগুড়া এগিয়ে। গোটা দেশের ৭০ ভাগের জোগানদাতা বগুড়া। শিল্পের শহর বগুড়াকে এগিয়ে নিতে বিমানবন্দর চালু করা দরকার।
ঐতিহ্যবাহী আকবরিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স পরিচালক হাসান আলী আলাল বলেন, কৃষি, শিল্প বাণিজ্যসহ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতে হবে, সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরের বিকল্প নেই। বগুড়াসহ এ অঞ্চলের উৎপাদিত খাদ্যপণ্য, কৃষি পণ্য আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব যদি বিমানবন্দর চালু করা যায়।
বগুড়া জেলা বিএনপি ভারপ্রাপ্ত সা. সম্পাদক ও সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদে একাধিকবার এ নিয়ে কথা বলেছি। বিমানবন্দরের রানওয়ের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে এলাকার মানুষদের বলেছিলাম, তবে আজও বিমানবন্দর চালু করতে উদ্যোগ নেয়নি বিগত সরকার। উত্তরের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ায় বিমানবন্দর জরুরি।
বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর বগুড়া রাজনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার। শহীদ জিয়া, তারেক রহমানের জেলা হওয়ার কারণে এই বগুড়া উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। নতুন সরকার নিশ্চয় বিমানবন্দর চালু করতে উদ্যোগ নেবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।