নিউজ ডেস্ক:
কিছুদিন আগে আমি একটি শপিংমলে গিয়েছিলাম একজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। আমি বরাবরের মতো আগেই পৌঁছে গেছিলাম। সময় কাটানোর জন্য বই কিনে পড়তে শুরু করলাম।
আমার বন্ধু যথা সময়ের পরেই এলেন এবং আমার বই পড়া বন্ধ হল। সেই বইটি কয়েক সপ্তাহ ধরে আমার বইয়ের তাঁকেই পড়ে আছে কিন্তু আর পড়া হচ্ছে না।
তবে ভুল ভাববেন না, আমি বই পড়তে অনেক পছন্দ করি। সময় এবং সুযোগ পেলেই বই পড়ি। কিন্তু সমস্যা হল আমি অনেক বই পড়তে পড়তে অর্ধেক পড়ে রেখে দেই আর পড়া হয় না। কখনো কখনো এটাও ভুলে যাই যে, আগে যতটুকু পরেছিলাম তার বিষয়বস্তু কি ছিল।
বই পড়া অবশ্যই একটি শখের ব্যাপার। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে আমি নিজেও আমার শখের তালিকাতে বই উল্লেখ করব। কিন্তু বাস্তবে আমি মনে করতে পানি না যে, শেষ কবে আমি একটি বই পুরো পড়ে শেষ করেছি।
জাপানিজ ভাষাতে এটা নিয়ে একটি শব্দ আছে ‘সান্ডোকু’, এর অর্থ হল, ‘পড়ার সামগ্রী সংগ্রহ করা এবং সেগুলো না পড়ে বাড়িতে স্তুপ বানিয়ে রাখা।’
এর মানে এই নয় যে, কেউ মানুষকে দেখানোর জন্য বইয়ের তাক সাজাচ্ছেন বরং কোনো একদিন পড়া হবে এই আশায় বইগুলো জমছে। তবে সেই একদিন আর আসে না।
সমস্যাটা আসলে কোথায়? আমরা প্রমাণিক ভাবে যেটা করতে পছন্দ করি এমন কি আছে যেটা আমাদেরকে তা করতে বাধা দিচ্ছে। আমার মনে হয় নিজের একটু চেষ্টা আমাদেরকে আমাদের ভালো লাগার কাজে উৎসাহিত করতে পারে।
বই পড়ার ব্যাপারটা আসলেই অন্য রকম। মনে হয় চোখ দিয়ে দেখছি কিন্তু মস্তিষ্ক তার পুরো ছবি এঁকে ফেলেছে। অনেকে আজকাল মোবাইল ফোন অথবা ল্যাপটপে বসে পড়েন। কিন্তু বইয়ের ভাঁজের গন্ধ এবং মুখ লুকিয়ে হাসার স্বাদ কি তাতে মেটে?
ইন্টারনেটের বদৌলতে অনেকেরই কিছু না কিছু পড়া হয় কিন্তু তাতে বই পড়ার মজা পাওয়া যায় বলে মনে হয় না। অন্তত আমি তো মজা পাই না। একটি বই হাতে নিয়ে প্রতিটা পৃষ্ঠা উল্টানোর মজাই আলাদা। একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করে তাতে।
তবে যাই বলি না কেন, ওই একটি দিন কিন্তু আর আসে না। কোনো এক ছুটির দিনে বিকেল বেলা গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে বইয়ের গন্ধ নেওয়া ততদিন পর্যন্ত হয়ে উঠবে না যতদিন না আপনি নিজে সেই পরিবেশ তৈরি করবেন।
বই পড়ার জন্য একটি নিয়ম করে ফেলুন। প্রতি মাসে একটি বই পড়ে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিন অথবা প্রতি দুই সপ্তাহে একটি বই শেষ করুন। এরপরও যদি সময় পান এবং প্রবল ইচ্ছা কাজ করে তাহলে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে বই পড়তে পারেন।
হতে পারে সেটা দুই থেকে চার পৃষ্ঠা। তবুও পড়ুন। তাহলে কোনো একদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। নতুন কিছু জানার জন্য, নতুন অভিজ্ঞতা ধারণ করার জন্য সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে না। সময়টা নিজেই তৈরি করে ফেলুন।