নিউজ ডেস্ক:
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুরা দিনের শেষ কী স্ট্যাটাসটা দিল বা কোন ছবি পোস্ট করল, তা মোবাইলে দেখতে গিয়ে রোজ রাতে ঘুমোতে একটু দেরি হয়ে যায়। ঠিক এই সময় মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে কেউ বার্তা দিলে পাল্টা বার্তা তো দিতেই হয়। ‘ঘুমোতে হবে, এবার বাই’ বলেও খোশগল্প এগোয় আরও কিছু সময়। এভাবে দেরি করে ঘুমের প্রস্তুতি নিলেও কি ঘুম আসে? আসে তবে সেটা আরও দেরি করে। আর এভাবে প্রতিদিন অজান্তেই আপনার প্রায় ১০০ মিনিট করে ঘুমের সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনটাই বলছেন ভারতের বেঙ্গালুরুভিত্তিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেসের (নিমহ্যানস) গবেষকেরা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিমহ্যানসের সার্ভিস ফর হেলদি ইউজ অব টেকনোলজি ক্লিনিকের (এসএইচইউটি) একদল গবেষক এই গবেষণাটি করেছেন। তাঁরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসক্তি যে শুধু ১০০ মিনিট ঘুম কেড়ে নিচ্ছে তা নয়, এর কারণে প্রতিদিন ৯০ মিনিট করে ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হচ্ছে ব্যবহারকারীদের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণা প্রতিবেদনটি গত জানুয়ারি মাসে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিনে প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গড়ে প্রায় সব ব্যবহারকারীই ঘুমোতে যাওয়ার আগে অন্তত চারবার তাঁদের মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঢুঁ মারেন।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, এভাবে প্রতিদিন ঘুমোতে যেতে দেরি হওয়ায় ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি হবে। এতে অল্প বয়সে বিষণ্নতা ও হৃদ্রোগের মতো জটিল রোগ হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে ভারতের গুরগাঁওয়ের বেসরকারি একটি হাসপাতালের গবেষণায় দেখা গেছে, অল্প বয়সী যেসব রোগী হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন, তাঁদের ৯০ শতাংশই পর্যাপ্ত সময় ঘুমান না।
গবেষণা দলের প্রধান ও সার্ভিস ফর হেলদি ইউজ অব টেকনোলজি ক্লিনিকের অতিরিক্ত অধ্যাপক মনস্তত্ত্ববিদ মনোজ কুমার শর্মা বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ব্যবহারকারীরা ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ সময় ফেসবুক, ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ সময় মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ ও হাইক এবং ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ সময় জি-মেইল ব্যবহার করেন।
চেন্নাইয়ের শ্রী বালাজি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিউরোফিজিশিয়ান সুরেশ কুমার বলেন, অসংখ্য রোগী পেয়েছি যারা ‘ডিলেড স্লিপ ফেজ সিনড্রোম (ডিএসপিএস)’-এ আক্রান্ত। স্বাভাবিক মাত্রায়, বিশেষ করে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘুমানো রোগী অনেক কম। মানুষ এখন রাতে ঘুমোতেই যায় তিনটার দিকে আর ঘুম ভাঙে বেলা ১১টায়। এটা শুধু বড়রাই করেন তা নয়, শিশুরাও ঘুমায় রাত একটার দিকে।’
নিউরোফিজিশিয়ান সুরেশ কুমার বলেন, ডিএসপিএসে আক্রান্ত রোগীদের সমস্যাকে ‘সোশ্যাল জেট ল্যাগ’ বলা হয়। এ ধরনের রোগীরা সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটার অফিস সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ, তাঁরা অবসাদ, মাথাব্যথা, খিদে কমে যাওয়া বা খাবারে অরুচি এবং বিষণ্নতায় ভোগেন।
এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পরামর্শ দিয়ে সুরেশ কুমার বলেন, সপ্তাহে তিন দিন অন্তত ৩০ মিনিট আগে ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ঘুমোতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগেই কাছে থাকা সব গ্যাজেটস বন্ধ করে দিতে হবে। চাইলে পুরোনো অভ্যাস, যেমন বই পড়া বা বাসার সদস্যদের সঙ্গে খানিক গল্প করে নেওয়া যেতে পারে।